ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অপরের দোষ অন্বেষণ পরশ্রীকাতরতার বহিঃপ্রকাশ

মো. রুহুল আমীন খান
অপরের দোষ অন্বেষণ পরশ্রীকাতরতার বহিঃপ্রকাশ

অন্যের ভুল ধরার মাঝে মজা আছে, আনন্দ আছে। আছে অন্যকে কাবু করার সীমাহীন তৃপ্তি। তাই তো অন্যের ভুল ধরার ক্ষেত্রে আমরা সর্বদা সক্রিয়। আমাদের অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি সর্বদা লেগে থাকে অন্যের পিছু। অন্যের বিন্দু পরিমাণ ভুলও দৃষ্টির আড়াল হয় না। কিন্তু নিজের বেলায় আমরা উদাসীন। নিজের পাহাড়সম ভুলগুলোও চোখে ভাসে না। এটাকেই বলে ‘নিজের ঘরের খবর নাই অন্যের ঘরে ধোয়া দেওয়া।’ আমাদের ভুল কেউ ধরে দিলে সেটাকে ভুল হিসেবে মানতে পারি না। নানা যুক্তি তর্কের মাধ্যমে, নানা ধারা উপধারার মারপ্যাঁচে সেগুলোকে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করি। অন্যের যে কাজটাকে ভুল মনে করি, ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করি সেই কাজটা নিজে করলে ভুলই মনে করি না। কৃত ভুলের জন্য কোনো অনুশোচনাও জাগ্রত হয় না। নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের বৈশিষ্ট্য এমন হতে পারে না।

মানুষ মাত্রই ভুল। কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। ছোটখাটো ভুল সবার মাধ্যমেই থাকতে পারে। আমাদের আদি পিতা আদম (আ:) ভুল করছেন। তাঁর ভুলের ফলশ্রুতিতেই আমাদের পৃথিবীতে আসা। তাঁর বংশধর হিসেবে আমাদের কাজকর্মে ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। ছোটখাটো বিষয়ে অন্যের ভুল ধরা, প্রচার করা, সবার সামনে তার বদনাম করা কোনো ভদ্র মানুষের কাজ হতে পারে না। অন্যের ভুল ধরার মাধ্যমে নিজের জ্ঞান ও বৃদ্ধিমত্তার পরিচয় ফুটে ওঠে না। বরং বুদ্ধিমত্তার গভীরতা ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। অপরের দোষ অন্বেষণ পরশ্রীকাতরতার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া অন্য কিছু নয়। মনে রাখা দরকার, ভুল ধরে কাউকে দমিয়ে রাখা যায় না। তার অগ্রযাত্রা রোধ করা যায় না। বরং বিরোধীদের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ তার অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করে। অন্যের চিহ্নিত বিন্দু পরিমাণ ভুল তাকে পাহাড়সম ভুল থেকে বাঁচাতে পারে। আর অন্যের দোষ অন্বেষণে যারা নিমজ্জিত সময়ের আবর্তে তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হয়। তাদের পাহাড়সম ভুল-ত্রুটি মানুষের চোখে ভেসে ওঠে। আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড় দিলেও প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয় না। তাই তো বিজ্ঞজনেরা বলেন, ‘অপরের দোষ অন্বেষণে যারা ব্যস্ত তাঁরা কখনও সফল হতে পারে না। বরং যারা নিজের ভুল-ত্রুটি খোঁজে বের করতে পারে, নিজেদের সংশোধন করতে পারে তাঁরাই সফল হতে পারে।’ কথিত বুদ্ধিজীবী আছেন যারা কস্মিনকালেও নিজ দলের সমালোচনা করেন না। কিন্তু ভিন্ন দলের পান থেকে চুন খসলেই কোমরে গামছা বেঁধে সমালোচনায় নেমে পড়েন। ভিন্ন দলের সমালোচনা করে নিজ দলের অপকর্ম ঢাকতে চান। তাদের ভাব দেখে মনে হয়, ‘তারা নিজে খুব ভালো, তাই পরকে বলে কালো।’ তাদের মনে রাখা দরকার, বর্তমানে মানুষ এতো বোকা নয় যে যা বোঝাবে তাই বুঝবে, তাই মেনে নিবে। প্রতিকূল পরিবেশের কারণে হয়তো তারা নিরব থাকবে। কিন্তু সুযোগ পেলে সেই ভুলের খেশারত আদায় করে ছাড়বে। পরিশেষে ইমানুয়েল কান্টের উক্তি দিয়ে শেষ করি, “নিজের বিবেক যখন পরিষ্কার থাকবে, তখন তুমি অন্যের ভুল নিয়ে চিন্তা করবে না। সত্যিকারের নৈতিকতা হলো নিজের ভুলগুলো ঠিক করা, অন্যের নয়।”

মো. রুহুল আমীন খান

প্রভাষক, ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজ, গাজীপুর

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত