বিগত সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতের দুর্নীতির সমালোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, আমাদের ব্যাংকগুলো থেকে টাকা চুরি হয়েছে। এটা কিন্তু ঘটনাক্রমে হয় নাই, এটা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উৎসাহিত করা হয়েছে বলেই পেরেছে। গতকাল বুধবার সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনা (এপোস্টিল কনভেনশন ১৯৬১ বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্য এ কথা বলেন উপদেষ্টা।
তৌহিদ হোসেন বলেন, সবাই বলাবলি করছে, ওমুক ব্যাংকটাকে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। কারণ, একটা ভালো ব্যাংক থেকে সমানে খারাপ ঋণ দেয়া হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি সমর্থন না থাকত তাহলে এটা সম্ভব হতো না।
সমন্বিত অনলাইন সত্যায়ন ব্যবস্থাপনার মতো অন্যান্য পদ্ধতিতেও যেন দুর্নীতি করার সুযোগ না থাকে সে বিষয়ে জোর দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এটা একটা ছোট পদেক্ষেপ। এ ধরনের ছোট ছোট পদেক্ষপ আমাদের অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। দুর্নীতির সুযোগ যেখানে থাকে সেখানে দুর্নীতি দমন একেবারে বন্ধ করা খুব কঠিন। কাজেই সুযোগ যাতে না থাকে সেটা আনতে হবে। দুর্নীতির সুযোগ যাতে কমে যায় সেভাবে আমরা এগোবো।
ইতালিতে ৬০ হাজার বাংলাদেশির পাসপোর্ট আটকে থাকার তথ্য তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ৬০ হাজার পাসপোর্ট আটকা আছে ইতালিতে। কেন আটকা আছে? কারণ, কাগজপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য। প্রতিটা কেসে কিছু না কিছু সমস্যা আছে। এক দালাল ওখানকার একটা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়ে এসেছে, কিন্তু আসলে তার ওখানে কাজ করার মতো অবস্থা নাই।
বিদেশে বাংলাদেশের ইমেজ নিয়ে কথা বলেন তৌহিদ হোসেন। এসময় তিনি বাংলাদেশি সংসদ সদস্যদের বিদেশে গ্রেপ্তারের উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ইমেজ একদিনে সৃষ্টি হয় না। একদিনে শেষও হয় না। যারা ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মারা যায় তাদের মধ্যে যখন আমাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন ভালোভালো কথা বলে ইমেজ রক্ষা করতে পারবেন না। আবার যখন আপনার একজন ট্যাক্সি চালক টাকা পেয়ে ফেরত দেয় তখন কিন্তু অটোম্যাটিকলি আপনার ইমেজ উপরে ওঠে। আপনার এমপি যখন দুর্নীতির দায়ে আরেক দেশে গিয়ে জেলে যায় আপনার ইমেজ রক্ষা করা সেখানে কঠিন। সার্বিকভাবে আমরা যা করব সেটা নিয়ে আমাদের ইমেজ হবে, হুট করে কিছু হবে না।
বিদেশির বাংলাদেশ মিশনগুলোতে লোকবল সংকটের কথা তুলে ধরেন তৌহিদ হোসেন। তিনি কাতারের উদাহরণ দিয়ে বলেন, যে মিশন ৩০০ পাসপোর্ট বিতরণ করবে তার পক্ষে অন্য কোনো সার্ভিস দেয়া সম্ভব? আমাদের এখান থেকে নাইডগার্ড হিসেবে যিনি যান তাকে দিয়েও পাসপোর্টে সিল মারাতে হয়। এটা হতে পারে না। এটার জন্য একটা বুদ্ধি বের করতে হবে। একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে, মিশনে লোকবল বাড়ানো। আমাদের ডিজিটাইলড কিছু করতে হবে, পাসপোর্টের জন্য মিশনে আসতে হবে না। পাসপোর্ট সেবা গ্রহীতার কাছে পৌঁছে যাবে সঠিক কাগজপত্রসহ।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংস্কারবিষয়ক সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) নজরুল ইসলাম।