ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হামাস-ইসরাইল দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু

হামাস-ইসরাইল দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু

ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর দীর্ঘ ১৫ মাসের আগ্রাসন শেষে গাজা উপত্যকায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি শেষ হতে চলেছে। তার আগেই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার মিসরের কায়রোতে আলোচনা শুরু হয়।

মধ্যস্থতাকারীদের আশা, এই আলোচনার মধ্য দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে গাজায় যুদ্ধের অবসান হবে। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ২০২৩ সালে দেশটিতে হামাসের হামলা ঠেকাতে তাদের ‘সম্পূর্ণ ব্যর্থতা’ স্বীকার করার এক দিন পর এ আলোচনা শুরু হলো। আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর গত বৃহস্পতিবারই বলেছে, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে ‘নিবিড়’ আলোচনায় অংশ নিতে ইসরাইল, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল কায়রোতে অবস্থান করছে। কয়েক মাসের আলোচনার পরই কেবল প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা সম্ভব হয়েছিল।

মিসরের সরকারি সংস্থা স্টেট ইনফরমেশন সার্ভিস বলেছে, পূর্বে হওয়া সমঝোতার বাস্তবায়নের চলমান প্রচেষ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী ধাপগুলো নিয়ে নিবিড় আলোচনা শুরু করেছে। প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আগামীকাল শনিবার শেষ হতে চলেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে হামাস সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে চার জিম্মির দেহাবশেষ হস্তান্তর করার পর ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কায়রোতে আলোচকদের পাঠান।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় হামাস। ইসরাইলের সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এএফপির করা হিসাব অনুসারে হামলায় ১ হাজার ২১৮ জন নিহত হয়েছেন। জবাবে একই দিন গাজায় হামলা শুরু করে ইসরাইল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে তখন থেকে চলা ওই যুদ্ধে ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ইসরাইলে হামাসের চালানো হামলার বিষয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনী একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত পরিচালনা করেছে। গতকাল এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এক সেনা কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের ওই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু উল্লেখ করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ হামলা ঠেকাতে না পারাটা সম্পূর্ণভাবেই সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা। একই সংবাদ সম্মেলনে এক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে যে তারা অতি আত্মবিশ্বাসী ছিল। হামলার আগে হামাসের সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে তাদের ভুল ধারণা ছিল। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইসরাইলের সেনাপ্রধান জেনারেল হারজি হালেভি বলেন, ‘এ দায় আমার।’ ৭ অক্টোবরের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতা স্বীকার করে গত মাসেই হালেভি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি বিষয়ে ভালোই আলোচনা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ কথা বলেন। তবে এ ব্যাপারে তিনি খুব একটা বিস্তারিত বলেননি। দুই দিনের মধ্যে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি ফলপ্রসূ হবে কি না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে ওই যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা দেখছি কী হয়। কেউ আসলে জানে না, তবে আমরা দেখছি কী হয়। আমাদের মধ্যে ভালোই আলোচনা চলছে।’

স্টারমার দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি তার সমর্থনের কথা পুনচ্চারিত করেছেন। দ্বিরাষ্ট্র সমাধান হলো ইসরাইল রাষ্ট্রের পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ট্রাম্প গাজা দখলের যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্টারমারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি বিশ্বাস করি যে এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দুই রাষ্ট্র সমাধানই একমাত্র পথ।’ ইসরাইল ও হামাস একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। জাতিসংঘ ইসরাইলি জিম্মি ও মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের উভয়ের চিত্রকে দুঃখজনক বলে বর্ণনা করেছে, তারা বলেছে যে তারা যে ভয়ানক অবস্থার মধ্যে ছিল, তা প্রতিফলিত করে।

হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে একটি বাসস্টেশনে গাড়ি তুলে দেয়ার ঘটনায় সাতজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ইসরাইলি চিকিৎসকরা। ইসরাইলি পুলিশ বলেছে, হামলাকারী হিসেবে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ফিলিস্তিনি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। ইসরাইলি পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বাস স্টেশনে অপেক্ষমাণ বেসামরিক নাগরিকদের হামলা করেছেন।

হামলাকারী হিসেবে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ইসরাইল দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনের বাসিন্দা এবং তিনি একজন ইসরাইলি নাগরিককে বিয়ে করেছেন। ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি সহিংসতা পশ্চিম তীরে বেড়েছে। রোববার ইসরাইল ২০ বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো ট্যাংক পাঠিয়েছে পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে। এ ছাড়া সেখানে শরণার্থী শিবিরগুলোতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গাজায় ১৫ মাসের যুদ্ধের পর হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পর গত মাসে ইসরাইল অভিযান শুরু করে। এর পর থেকে জেনিন ও এর কাছাকাছি তুলকার্ম এলাকা থেকে অন্তত ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত