আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাবস্থায় মুজিববর্ষ পালন, শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে মুজিববর্ষ পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে অর্থের অপচয়, ক্ষতিসাধনের অভিযোগে এই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। গতকাল বুধবার দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এই চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অনুসন্ধানে সাত সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির দলনেতা হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলামকে।
অনুসন্ধানকারী দলকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি এবং বিভিন্ন সময়ে জারি করা সার্কুলার অনুযায়ী অভিযোগটির অনুসন্ধান কাজ শেষ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করার অনুরোধ করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। তবে কোভিড মহামারির কারণে মুজিববর্ষের সময়কাল বাড়ানো হয়েছিল। হাসিনা পরিবারের ১৬ কোটি টাকা ফ্রিজ: দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং ছোট বোন শেখ রেহানার স্বার্থসংশ্লিষ্ট শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের একটি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ওই হিসাবে ১৬ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, অনুসন্ধানকালে দেখা যায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজিব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়), মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, তার ছোট বোন রেহানা সিদ্দিক ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বর্ণিত অ্যাকাউন্টের অস্থাবর সম্পদসমূহ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে ওই অ্যাকাউন্টটি অবিলম্বে অবরুদ্ধ করা আবশ্যক। শুনানি শেষে বিচারক আবেদনটি মঞ্জুর করে ব্যাংক হিসাবটি ফ্রিজ করার আদেশ দেন।
এদিকে গত রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে চলে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ একজন দুর্নীতিবাজের মধ্যে পার্থক্য নেই।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। গত ২৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে ‘অনিয়মের’ অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানায় দুদক।
এরপর ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করা হয়। ১০ মার্চ এসব মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয় দুদক। শিগগিরই আদালতে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা দুর্নীতিগ্রস্ত সাধারণ জনগণের মধ্যে কোনো তফাত নেই। একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি, যিনি পলায়ন করে অন্যত্র চলে গেছেন, তার জন্যও যে প্রক্রিয়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী পলাতক শেখ হাসিনার জন্যও একই প্রক্রিয়া। মামলা দায়েরের পর আদালতই আদেশ দেবে কী কী কাজ করতে হবে। আদালতের সেই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতেই দুদককে বলবে, স্বরাষ্ট্র-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলবে। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাব।