সরকারি চাকরি নিয়োগে বৈষম্যদূরীকরণে ২০২৪ সালের ১৩ জুলাই সংসদে আইন পাশের লক্ষ্যে জরুরি অধিবেশন আহ্বান ও চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ উপলক্ষ্যে সেদিন বেলা ১১টায় বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একই দাবিতে নিজ নিজ জেলা প্রশাসক কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা নিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেয়।
সংসদে আইন পাশ করে কোটার সমস্যা সমাধান না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। তবে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে তারা আপাতত অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যায়নি। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদান ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে পুলিশ মামলা করে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশকে মারধর এবং পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে মামলা করা হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের গাড়িচালক খলিলুর রহমান শাহবাগ থানায় এ মামলা করেছিলেন।
বঙ্গভবনে পদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি : শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ, মামলা তুলে নেওয়া ও কোটা সংস্কারের এক দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বেলা ১১টায় গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিতে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ অঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেছিলেন, আমাদের এতদিন বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ছিল। এ কর্মসূচিকে অনেকে জনদুর্ভোগ হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। আমরা বলতে চাই, সুস্থ সন্তান জন্মদানের জন্য সাময়িকভাবে প্রসবকালীন ব্যথা সহ্য করতে হয়। আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট চলছে। সেটির পাশাপাশি কর্মসূচি থাকবে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের জন্য রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া ও গণপদযাত্রা। সংসদে আইন পাশ করে কোটার যৌক্তিক সংস্কার না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। হাসনাত বলেন, এ কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজসহ ঢাকার আশপাশের যত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গণপদযাত্রায় অংশ নেয়।
পুলিশকে মামলা তুলে নিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, শাহবাগ থানায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা মামলা করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ বলছে যে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষতি সাধন করেছে। ক্ষতি যদি হয় তাহলে অজ্ঞাতনামা মামলা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, আমাদের নামেই মামলা দিতে পারেন। এইদিন আন্দোলনকারীদের দাবি ও বক্তব্যকে সংবিধান এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিরোধী বলে মন্তব্য করেন তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাস্তা বন্ধ না করে আন্দোলন থেকে সরে আসতে বলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, আন্দোলনের নামে জানমালের ক্ষতি করলে কিংবা সড়ক অবরোধ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌক্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে । অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং তাদের দাবি ন্যায্য হলেও সরকার ভিন্ন খাতে নিতে অপকৌশল করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। কোটা সংস্কারের বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় নির্বাহী বিভাগ এই মুহূর্তে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা দিলে তা অসাংবিধানিক হবে বলে মন্তব্য করেন তৎকালীন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। ১৩ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দিনব্যাপী গণসংযোগ করে আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও এইদিন রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে চলমান আন্দোলন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৩৮ সদস্যের এ কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের ২৪ জন শিক্ষার্থীকে সমন্বয়ক এবং ১৪ জনকে সহসমন্বয়ক হিসেবে রাখা হয় এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজবাড়ী রেলস্টেশনের সামনে শনিবার রেললাইনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঢাকাগামী মধুমতী এক্সপ্রেস আটকে দেন তারা।