‘দাখিল পরীক্ষার পর ছেলেকে বলেছিলাম ব্যবসা করতে। কিন্তু ছেলে বলল, একটু পড়াশোনা করে দেখি। চলমান উচ্চ মাধ্যমিকের পাঁচটি পরীক্ষাও দিয়েছিল। কিন্তু এরমধ্যেই ছেলে ফিরল লাশ হয়ে।’ কথাগুলো বলছিলেন ১৮ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর বহাদ্দারহাটে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে নিহত তানভীর আহমেদের (১৯) বাবা বাদশা মিয়া। তিনি জানান, তার ছেলের মাথা ও পিঠে ছিল গুলির চিহ্ন। ‘ও পুত (ছেলে), চারটা পরীক্ষা দিলি। বাকি পরীক্ষাগুলো কে দেবে? পরীক্ষায় পাস করলে আমরা চট্টগ্রামে চলে আসতাম। বাসা নিয়ে থাকতাম।’ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের লাশঘরের সামনে বাদশা মিয়া এভাবে বুক চাপড়ে আর্তনাদ করছিলেন। তার বুকের ধন তানভীর আহমেদ লাশঘরে শুয়ে আছে। বাদশা মিয়া বিলাপ করে বলেন, ‘ও বাপ, কী জন্য ঘর থেকে বের হলি? তুই কেন বের হলি? আমি এখন কাকে নিয়ে দিন কাটাব। তোরে নিয়ে যে অনেক আশায় ছিলাম।’
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালামাছছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বাদশা মিয়া ও সানোয়ারা বেগমের তিন ছেলের মধ্যে তানভীর ছিলেন সবার বড়। তানভীরের বাবা বাদশা মিয়া মহেশখালীর চাষিদের কাছ থেকে পান কিনে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এলাকায় বিক্রি করেন।
বাদশা বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। সব সন্তানকে লেখাপড়া করানো সম্ভব নয়। এজন্য তানভীরকে বলেছিলাম পড়াশোনা বাদ দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে। কিন্তু ছেলে বলল পড়বে।’ তাই স্থানীয় ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ করে ছেলেকে চট্টগ্রামের সরকারি আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজে ভর্তি করেন বাদশা। তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর তিন দিন আগেও বিকাশে ছেলেকে খরচের জন্য দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছিলাম।’ তানভীরের শোকে তার পুরো পরিবার স্তব্ধ। ছেলের মৃত্যুর পর থেকে মা সানোয়ারা বেগম অসুস্থ। ছেলেকে যারা এভাবে হত্যা করেছে, তার বিচার খোদাকে দিয়েছেন বলেও তিনি জানান। ‘জানাজার মাঠে আমি বলেছিলাম, কারও কাছে বিচার চাই না। খোদার কাছে বিচার দিয়েছি।’