ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ

ছেলের স্কুলে যাওয়া আর দেখা হলো না নাদিমের

ছেলের স্কুলে যাওয়া আর দেখা হলো না নাদিমের

আনাস আর আহনাফ। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়জনের সঙ্গে বেশ ভাব ছিল তাদের বাবা নাদিম মিজানের (৩৫)। বাবাই ছিল তার সব আনন্দের মূলে। সেই ছেলে এখন বাবাকে দেখে না। কোলে উঠে জড়িয়ে ধরতে পারে না। প্রতিদিনই সে জানতে চায়, বাবা কোথায়? কিন্তু সে প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেন না মা। ছেলেকে বলতে পারেন না, তাদের বাবা আর কখনও ফিরে আসবেন না।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর বনশ্রীতে গুলিতে নিহত হন নাদিম মিজান। তার স্ত্রী তাবাসসুম আক্তার নেহা বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার সে (নাদিম মিজান) জুমার নামাজ পড়তে বের হয়। বাসায় ফিরে ভাত খাবে, তাই ওর জন্য ভাত বেড়ে রেখেছিলাম। বাসার পাশেই মসজিদ। নামাজ শেষে সবাই যখন ফিরছিলেন, তখন মানুষের চিৎকার শুনতে পাই, সঙ্গে গুলির শব্দ। এর কিছুক্ষণ পরই মানুষ ওকে নিয়ে আসে। কোমর আর পেটে দুটি গুলি লাগে। হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার জানান, ও আর নেই।’ তাবাসসুম নেহা যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন তার চোখের নিচে ভেসে ওঠে কালছে দাগ। তার উ™£ান্ত চেহারা বলে দিচ্ছিল, স্বামীর মৃত্যুতে অবুঝ দুই সন্তানকে নিয়ে অকূলপাথার পাড়ি দিচ্ছেন তিনি। ২০১৮ সালে নাদিম মিজানের সঙ্গে যখন বিয়ে হয়, তাবাসসুম নেহা তখন ক্লাস নাইনের ছাত্রী। স্বামীর স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর ও-ই আমাকে পড়াশোনা করিয়েছে। এসএসসি পাসের পর কনসিভ করলাম। বড় বাচ্চাটা হলো। এরপর আমি আর পড়াশোনা করতে চাইনি; কিন্তু ও পড়াশোনা চালিয়ে নিতে বলত।’ স্ত্রী পড়াশোনা শেষ করতে না পারলেও ছেলেরা কোথায় পড়াশোনা করবে, বড় হয়ে কী হবে-সবকিছু নিয়ে রাশি রাশি স্বপ্ন ছিল নাদিমের। বড় ছেলে আনাসকে ভর্তি করানোর জন্য মিরপুরের একটি শিক্ষালয়ে কথাও বলে এসেছিলেন; কিন্তু ছেলের স্কুলে যাওয়া আর দেখা হলো না তার। তাবাসসুম নেহা বলেন, ‘বড় ছেলেটা সারাক্ষণ বাবার সঙ্গেই থাকত। খেলাধুলা সব বাবার সঙ্গেই করত। ছেলেটা বাবাকে খোঁজে। জড়িয়ে ধরতে চায়। কী উত্তর দিই ওকে?’ নাদিম মিজানের পৈতৃক নিবাস রাজধানীর মিরপুরে। তারা তিন ভাই। সবার বড় নাদিম। গত বছরের ডিসেম্বরে তার মা মারা যান, মাত্র ২৫ দিনের ব্যবধানে গত জানুয়ারিতে বাবারও মৃত্যু হয়। এরপর থেকে বনশ্রীর শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন তিনি। এই এলাকাতেই গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডারের ব্যবসা ছিল তার। মৃত্যুর পর নাদিমকে মিরপুরে শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। তবে তার মৃত্যুর ঘটনায় হয়নি কোনো মামলা। প্রশাসন থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও পায়নি তার পরিবার। পরিবারের সদস্যরা জানান, লাশ ময়নাতদন্ত করতে হবে বলে তারা মামলা করেননি। তাবাসসুম নেহা বলেন, ‘আমাদের কোনো টাকাপয়সার প্রয়োজন নেই। লাশ তোলা হোক, পোস্টমর্টেম হোক, আমরা চাই না।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত