ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

স্বৈরতন্ত্র-পরিবারতন্ত্র দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে : নাহিদ

স্বৈরতন্ত্র-পরিবারতন্ত্র দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে : নাহিদ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই মাসেই জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। কে পিআর বোঝে কে বোঝে না, তার জন্য সংস্কার অপেক্ষা করবে না। জনগণ সংস্কার বোঝে, জনগণ সংস্কার চায়। তিনি আরও বলেন, মাফিয়াতন্ত্র, গডফাদারতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র সবকিছু বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার কক্সবাজারে পদযাত্রা পরবর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি (পিআর) প্রসঙ্গে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘উচ্চকক্ষে পিআর হতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ সব সেক্টরে নিরপেক্ষ নিয়োগে কমিশন গঠন করতে হবে। আমাদের কামনা, জনগণের কথা চিন্তা করে দেশের কথা ভেবে সব দলের উচিত সংস্কারে পক্ষে কথা বলা। সংস্কার কোনো দলের পক্ষে নয়, দেশের পক্ষে। ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে উপস্থিত হবো আমরা। জুলাই সনদ আদায় করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।’ তিনি বলেন, ‘গত ফ্যাসিস্ট আমলে কক্সবাজার সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য হয়ে গিয়েছিল। মাদকের অভয়ারণ্য হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জে যেমন গডফাদার ছিল কক্সবাজারেও গডফাদার ছিল। শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণে ছোট ছোট গডফাদার বিদ্যমান ছিল। আমরা সেই গডফাদারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়েছি। দেশে নতুন কোনো গডফাদার আবির্ভাবের সুযোগ দেওয়া হবে না। কক্সবাজারেও নতুন গডফাদারের আবির্ভাবের প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। মাফিয়াতন্ত্র, গডফাদারতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র সবকিছু বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। জনগণের বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা কক্সবাজারকে সম্ভাবনার জায়গা হিসেবে দেখি। বাংলাদেশের ভবিষ্যত ও সম্ভাবনা এ বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে। আমাদের সমুদ্র শক্তি, নৌ শক্তিতে বলিয়ান হতে হবে। এক্ষেত্রে কক্সবাজারকে শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিশ্বের বুকে মডেল হিসেবে কক্সবাজারকে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি সেই কক্সবাজার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করবে। আমরা নতুন বাংলাদেশ, নতুন কক্সবাজার উপহার দিতে চাই। এ যাত্রায় কক্সবাজারবাসীকে এনসিপির পাশে চাই।’ পূর্ব ঘোষণা অনুসারে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কক্সবাজার শহীদ দৌলত ময়দানের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু হয়। দুপুর ২টার দিকে তারা পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে পৌঁছান।

সভায় বক্তব্য রাখেন- এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহসহ ডা. তাসনিম জারা, নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী, এস এম সুজা উদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

চকরিয়ায় এনসিপির পথসভার মঞ্চ ভাঙচুর বিএনপির নেতাকর্মীদের : কক্সবাজারের চকরিয়া পৌর শহরের জনতা শপিং সেন্টার চত্বরে করা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভা মঞ্চ ভেঙে দিয়েছেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ট্রাকের ওপর মঞ্চটি করা হয়েছিল। গতকাল শনিবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।

বিকাল ৫টার দিকে সেখানে পথসভায় বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের। বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন, আজ দুপুরে কক্সবাজার শহরে এক সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেন। এটি বিএনপির নেতাকর্মীদের হৃদয়ে আঘাত করেছে। এই বক্তব্যের পর চকরিয়াসহ কক্সবাজার জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করেন। বিকাল ৪টা থেকে চকরিয়ায় মহাসড়কে বিএনপির নেতাকর্মীদের মিছিল শুরু হয়। তারা সালাহউদ্দিনের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কক্সবাজারের সমাবেশে বলেন, ‘আগে নারায়ণগঞ্জে বিখ্যাত গডফাদার শামীম ওসমান ছিল। এখন শুনছি কক্সবাজারের নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছে। ঘের দখল করছে, মানুষের জায়গা-জমি দখল করছে। চাঁদাবাজি দখল করছে। আবার নাকি সে সংস্কার বুঝে না। নাম না বললাম। কক্সবাজারের জনতা এ ধরনের সংস্কারবিরোধী, যে পিআর বোঝে না রাজপথে তাদের দেখিয়ে দিবে ইনশাআল্লাহ।’ এরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, দুপুর থেকে এনসিপির পক্ষে মঞ্চ তৈরি করে মাইকিং করা হচ্ছিল। হঠাৎ বিকাল পৌনে চারটার দিকে কিছু লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মঞ্চে হামলা করেন। এনসিপির মাইকিং করা লোকজনকে তাড়িয়ে দেন।

এনসিপির নেতাকর্মীরা বলেন, শসিবার বিকাল পৌনে চারটার দিকে ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা চকরিয়া জনতা শপিং সেন্টার চত্বরে বানানো ট্রাক মঞ্চটি ভেঙে ফেলেন। এসময় সমাবেশের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন ও ট্রাকের কাচ ভাঙচুর করেন। তাৎক্ষণিক সেনাবাহিনী সমাবেশস্থলে পৌঁছে হামলাকারীদের ধাওয়া দেয়।

এনসিপির চকরিয়া উপজেলা সংগঠক খাইরুল বাশার বলেন, ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে সমাবেশের মঞ্চ ভাঙচুর করেছেন। ব্যানার ছিঁড়ে ও ট্রাকের কাচ ভাঙচুর করেছেন। পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থল দখল করে নিয়ে স্লোগান দেন। চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মঞ্চ ভাঙচুরের বিষয়টি এখনও আমরা জানি না।’

এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ইমন সৈয়দ বলেন, ‘চকরিয়ায় আমাদের সমাবেশ ছিল। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা মঞ্চ ভাঙচুর করেছেন। এ কারণে সেখানে অনুষ্ঠান হয়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত