
মুজিববাদী সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে রোববার রাঙামাটিতে পদযাত্রা কর্মসূচির সমাবেশে তিনি এ দাবি জানান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাহিদ বলেন, আমরা পদযাত্রা নিয়ে প্রতিটি সম্প্রদায়, জাতিগোষ্ঠীর কাছে প্রত্যেক জনপদে যাচ্ছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে নানা বিভাজন, অশান্তি জিইয়ে রেখে কিছু গোষ্ঠী নিজেদের সুবিধা ও স্বার্থ হাসিল করে নিতে চায়। আমরা তাদের সেই সুযোগ দিতে চাই না।
নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মুজিববাদী সংবিধানে এ দেশের সব জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। তাই সেই সংবিধানের প্রতিবাদ করেছিলেন পার্বত্য অঞ্চলের নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। আমরা নতুন বাংলাদেশের নতুন সংবিধানে সব জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি চাই। এজন্য মুজিববাদী সংবিধান বাতিল করে সবার সংবিধান চাই।
নাহিদ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে বিভেদ, অশান্তি জিইয়ে রাখা হয়েছে তা দূর করতে হবে। মুসলিম, হিন্দু, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ সব জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে। আমরা সব জাতিগোষ্ঠীর সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়তে চাই। সৌহার্দ্যের নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এমন সৌহার্দ্য গড়ে তুলতে হবে।
সমাবেশে সারজিস আলম বলেন, আমরা দেখেছি রাষ্ট্র কাঠামোতে কোনো আমলা, কর্মকর্তা, কর্মচারী দুর্নীতি-অপরাধ করলে তাকে শাস্তিমূলক হিসেবে পাবত্য চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। কিন্তু এতে সেই দুর্নীতিবাজরা পার্বত্য এলাকায় গিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এটা হবে কেন? দুর্নীতিবাজ যেখানে যায় সেখানে অপরাধে জড়াবে। তাই তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাহাড়কে যাতে কেউ ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
বক্তব্যে স্লোগান তুলে ধরে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, এই মুহূর্তে দরকার বিচার এবং সংস্কার। পাহাড় থেকে সমতলে লড়াই হবে একসঙ্গে। আমরা পাহাড় এবং সমতলে সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষ সম্প্রীতি-সোহার্দ্য নিয়ে একত্রে বসবাস করতে চাই।
ডা. তাসনিম জারা বলেন, সবাইকে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই আমরা। সেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সবার অধিকার সংরক্ষিত থাকবে।
সামান্তা শারিমন বলেন, আমরা ধর্ম, জাতির বিভেদ করব না। প্রত্যেক ধর্ম, বর্ণ, জাতির মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করবে সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
এদিকে, গতকাল রোববার চট্রগ্রামে অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে নাহিদ বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার ও আহতদের জন্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সেল গঠন করবে এনসিপি। নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহীদ পরিবারের পাশে সব সময় থাকবে। ৫ আগস্টের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে বলে আমরা আশাবাদী। ঘোষণাপত্র অবশ্যই সংবিধানে যুক্ত হবে। এতে গণ-অভ্যুত্থানের একটি আইনি স্বীকৃতি তৈরি হবে। এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আমরা সারা দেশে যাত্রা করছি এবং সব শহীদ পরিবারদের সঙ্গে বসছি। তাদের সবারই কমবেশি একই ধরনের সমস্যা। কিছু জায়গায় সমস্যাগুলো কম, সুযোগ-সুবিধাগুলো পৌঁছেছে বা খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। আমরা যখন সরকারে ছিলাম তখন আমরা তাদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে চাপ তৈরি করেছি। তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে উদ্যোগগুলো মাঠ পর্যায়ে পৌঁছায়নি বা পৌঁছাতে দেরি করছে। সেখানে অনেক ধরনের ঝামেলা এখনো হয়। প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচারের দোসররা আছে। শহীদ পরিবারগুলো যে সম্মান পাওয়ার কথা, সেটা নিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ শুনি। নাহিদ ইসলাম এ সময় শহীদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা আপনাদের কাছে কোনো দল হিসেবে আসিনি। আমরা এসেছি কারণ অভ্যুত্থানে আমরা ছিলাম, আপনাদের পরিবারের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে ছিল, সেই জায়গা থেকে দলমতের ঊর্ধ্বে একটি পরিবার মনে করি। শহীদরা পুরো বাংলাদেশের, দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। তাদের সম্মান প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করছি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে সারা দেশে যাচ্ছি এবং সবার কথা শুনছি। আমরা দলের পক্ষ থেকে একটা শহীদ কল্যাণ-আহত সেল করছি, সেটার অধীনে আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যেখানে যাচ্ছি আমরা পুনরায় সবার নম্বরগুলো নিচ্ছি।
নাহিদ ইসলামের ভাষায়, ‘এটি আমরা স্থানীয় একটি সংগঠনের মাধ্যমে করছি। জুলাইয়ের রাজনৈতিক যে ঘোষণাপত্র বা সনদ, সেটা আমরা সবসময় বলছি এবং ৩ আগস্টে সেটা নিয়ে আমরা ঢাকায় বড় প্রোগ্রাম করব। সরকার যাতে এটা দেয়। সরকারও বলছে ৫ আগস্টের মধ্যে দেবে।’ এ সময় চট্টগ্রামের শহীদদের পরিবার এবং দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।