ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

‘এই বিচার হবে একটি ইতিহাস’

‘এই বিচার হবে একটি ইতিহাস’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, এই বিচার কেবল একটি মামলার নিষ্পত্তি নয়। এটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি শক্ত বার্তা যে বাংলাদেশ আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারে বিশ্বাসী। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সে যত শক্তিশালী বা প্রভাবশালী হোক না কেন। এই বিচার হবে একটি ইতিহাস। এটি হবে সেই সব মানুষের আত্মত্যাগের সম্মাননা, যাঁরা ন্যায়বিচারের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। এই ট্রাইব্যুনাল প্রমাণ করবেন, বাংলাদেশ একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ রাষ্ট্র। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর।

গতকাল রোববার বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে এই মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। আজ সোমবার এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।

মামলায় মোট আসামি ১৬ জন। তাঁদের মধ্যে ৮ আসামি গ্রেপ্তার আছেন। গ্রেপ্তার আট আসামি হলেন সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান, শেখ আবজালুল হক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ এই মামলার আট আসামি পলাতক।

সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আরো বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে, অনেক স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। বাংলাদেশে দেখা গেছে, স্বৈরাচার পালিয়েই শুধু যায়নি, তার ৩০০ এমপি, তার মন্ত্রিসভা, পুলিশ বাহিনী, দলীয় নেতা-কর্মী, এমনকি মসজিদের ইমাম ও নিজেদের শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ বলে দাবি করা উচ্চ আদালতের বিচারকেরাও পালিয়েছেন।

ন্যায়বিচার নিয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় ট্রাইব্যুনাল, আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, এই মামলায় নির্মোহ, নিরপেক্ষ, নির্ভুল ও দৃঢ় বিচার নিশ্চিত করুন। দোষীদের যথাযথ শাস্তি দিন, যাতে জনগণের বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরে আসে। কারণ, আমরা এমন একটি পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে ন্যায়বিচার কেবল একটি রায় নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা। অপরাধী যত বড়ই হোক, কৃতকর্মের বিচার থেকে কেউ রেহাই পাবে না।’

আসামিদের বিরুদ্ধে সংগৃহীত প্রমাণ কেবল বিশ্বাসযোগ্যই নয়, বরং অকাট্য ও স্বতন্ত্র ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তার ঊর্ধ্বে বলে উল্লেখ করেন তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, এই ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থাপিত প্রমাণগুলো অস্পষ্ট তথ্যের বিচ্ছিন্ন টুকরো নয়। বরং একটি অবিচ্ছিন্ন ও সুদৃঢ় প্রমাণশৃঙ্খল। যার প্রতিটি অংশ পরবর্তী অংশকে আরও দৃঢ়তর করে। এই প্রমাণের সামগ্রিকতা হচ্ছে, চাক্ষুষ সাক্ষ্য, ডিজিটাল রেকর্ড, সরকারি যোগাযোগ ও ফরেনসিক প্রতিবেদন।

এদিকে চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন সাভারের আশুলিয়ায় গুলি করে হত্যার পর ছয়জনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে আজ সোমবার।

গতকাল রোববার চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এই মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্যের আবেদন করেন। এরপর বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ দেন।

এই মামলায় গ্রেফতার আট আসামির মধ্যে সাতজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। তবে এসআই শেখ আবজালুল হক দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হতে চান। ট্র্যাইব্যুনাল বিষয়টি গ্রহণ করলেও রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদনের বিষয়ে কোন আদেশ দেননি।

গত ২ জুলাই মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-২। এরপর ২১ আগস্ট অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

মামলার ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেফতার আটজন ট্র্যাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। তারা হলেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, এসআই শেখ আবজালুল হক ও কনস্টেবল মুকুল।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় তরুণকে গুলি করে হত্যার পর, লাশগুলোকে পুলিশ ভ্যানে রেখে আগুন লাগিয়ে দেন পুলিশ সদস্যরা। যখন এসব মরদেহে আগুন দেওয়া হচ্ছিল তখন একজন জীবিত থাকা অবস্থায় তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়।

নৃশংস এ ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত