ঢাকা সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভারতে ঢাকার মিশন ছোট করার ইঙ্গিত

* দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে হুমকি * বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার চেষ্টা : বিক্ষোভকারীরা ভেতরে এলো কীভাবে, দিল্লিকে প্রশ্ন ঢাকার * বাংলাদেশ মিশনে হামলা হয়নি, দীপু হত্যার প্রতিবাদ করা হয়েছে : দিল্লি * নিরাপত্তাজনিত কারণে চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ
ভারতে ঢাকার মিশন ছোট করার ইঙ্গিত

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাংলাদেশ ভবনের গেটে এসে উগ্র আচরণ ও হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার রাতে কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক সেখানে চিৎকার-চেঁচামেচি করে দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হুমকি দেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার মো. ফয়সাল মাহমুদ বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টার মধ্যে তিনটি গাড়িতে করে কয়েকজন ব্যক্তি বাংলাদেশ ভবনের গেটের সামনে এসে কিছুক্ষণ চিৎকার করেন। তারা বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় ‘হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে হবে’ এবং ‘হাইকমিশনারকে ধরো’- এ ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, ওই ব্যক্তিরা পরে মূল গেটের সামনে এসে কিছুক্ষণ চিৎকার করে চলে যান। তবে এ সময় তারা কোনো ধরনের শারীরিক হামলা চালাননি। কোনো কিছু ছোড়াছুড়িও করা হয়নি।

হাইকমিশনারকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস মিনিস্টার বলেন, হতে পারে। তারা হিন্দি ও বাংলা মিলিয়ে বলছিলেন- ওখানে যদি হিন্দু মারা হয়, তাহলে আমরা তোমাদের সবাইকে মেরে ফেলব। তবে এগুলো ছিল শুধু কথাবার্তা ও চিৎকার। কোনো শারীরিক হামলা হয়নি।

ঘটনার পরপরই রাতে জরুরিভিত্তিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডিফেন্স উইংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ। ডিফেন্স উইংয়ের এক কর্মকর্তা তাকে জানান, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসে চিৎকার করে চলে গেছেন এবং বাড়তি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার চেষ্টা- বিক্ষোভকারীরা ভেতরে এলো কীভাবে, দিল্লিকে প্রশ্ন ঢাকার : নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ব্যাখ্যা দিয়ে প্রেসনোট দিয়েছে, সেটি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ সরকার। ঢাকার প্রশ্ন, কূটনৈতিক এলাকার এত ভেতরে কীভাবে বিক্ষোভকারীরা এলো- তা বড় প্রশ্ন। গতকাল রোববার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ভারতের দেওয়া প্রেসনোট পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছে ঢাকা। কূটনৈতিক এলাকার এত ভেতরে কীভাবে বিক্ষোভকারীরা এলো- তা বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশ হাইকমিশনারের বাসভবনে হামলার যে চেষ্টা, এতে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। প্রয়োজনে ভারতে ঢাকার মিশন ছোট করারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তৌহিদ হোসেন। এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়- নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের খবর নিয়ে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ঘটনাটি নিয়ে কিছু গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

রণধীর জয়সওয়াল জানান, গত শনিবার প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন তরুণ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে জড়ো হয়ে ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্লোগান দেন এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দাবি তোলেন। তবে কোনো সময়ই হাইকমিশনের নিরাপত্তা বেষ্টনি ভাঙার চেষ্টা বা নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

ভারতের সরকারি মুখপাত্র বলেন, ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশ কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সংক্রান্ত দৃশ্যমান প্রমাণ জনসমক্ষে উপলব্ধ রয়েছে।

রণধীর জয়সওয়াল জানান, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ভারতের ভূখণ্ডে অবস্থিত সব বিদেশি মিশন ও কূটনৈতিক স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির ওপর ভারত নিবিড়ভাবে নজর রাখছে উল্লেখ করে জয়সওয়াল বলেন, ভারতীয় কর্মকর্তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় ভারতের গভীর উদ্বেগ তাদের জানানো হয়েছে। পাশাপাশি দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রাঙ্গণে গত শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে একদল উগ্র হিন্দু বিক্ষোভ করে। সেখানে তারা সব নিরাপত্তা বেষ্টনি অতিক্রম করে বাংলাদেশ হাউসের মূল ফটকের সামনে উপস্থিত হয়। বাংলাদেশবিরোধী নানা স্লোগান দেয় এবং ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে হত্যার হুমকি দেয়।

বাংলাদেশ মিশনে হামলা হয়নি, দীপু হত্যার প্রতিবাদ করা হয়েছে- দিল্লি : নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে দিল্লির বাংলাদেশ মিশনে উগ্র ভারতীয়দের দ্বারা আক্রমণের ঘটনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। একইসঙ্গে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশের ভূমিকার নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সেটিও প্রত্যাখ্যান করেছে দিল্লি। দিল্লির বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলা নিয়ে গতকাল রোববার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি নিয়ে বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা লক্ষ্য করা গেছে। প্রকৃতপক্ষে গত শনিবার নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ২০-২৫ জন যুবক জড়ো হয়ে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্লোগান দেয় এবং বাংলাদেশে সব সংখ্যালঘুর সুরক্ষার দাবি তোলে।

হাইকমিশনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে বাংলাদেশ মিশনে ভারতীয় নাগরিকদের প্রবেশের বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, এ ঘটনায় নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা বা নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশ কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই দলকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসব ঘটনার দৃশ্যমান প্রমাণ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। আন্তর্জাতিক প্রটোকল ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, নিজ ভূখণ্ডে অবস্থিত বিদেশি মিশন ও পোস্টগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানান রণধীর জয়সওয়াল। বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর ভারত নিবিড়ভাবে নজর রাখছে জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে ভারতের গভীর উদ্বেগ জানানো হয়েছে। ভারত দীপু চন্দ্র দাসের বর্বর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানায়।

নিরাপত্তাজনিত কারণে চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ : নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের ভিসা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত শনিবার ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের (আইভিএসি) ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের (এএইচসিআই) সামনে ঘটে যাওয়া নিরাপত্তাজনিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রোববার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আইভিএসি চট্টগ্রামের মাধ্যমে ভারতীয় ভিসা কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এতে আরও বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর ভিসা কেন্দ্র পুনরায় চালু করার বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবরে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করেন একদল মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থল থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় এবং কয়েকজনকে আটক করে। ঘটনার পর থেকেই ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার কার্যালয়ের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বর্তমানে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত