
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় করে রাখতে এবং রাজকীয় সংবর্ধনা দিতে রাজধানীর ৩০০ ফিট (পূর্বাচল) এলাকায় তৈরি করা হয়েছে এক সুবিশাল মঞ্চ। তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে রাজধানীসহ তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তাকে স্বাগত জানাতে একদিন আগেই ৩০০ ফিটের সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। স্লোগান, প্ল্যাকার্ড আর উচ্ছ্বাসে পুরো সমাবেশস্থল যেন ‘উৎসবকেন্দ্র’ হয়ে উঠেছে।
গতকাল বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, সংবর্ধনা মঞ্চের নির্মাণকাজ শেষ। ব্যানার, পতাকা, তোরণ আর আলোকসজ্জায় সাজানো সমাবেশস্থল। সকাল থেকেই কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা মঞ্চ এলাকা পরিদর্শনে আসছেন। অনেকেই সমাবেশের আগের রাত থেকেই মাঠে অবস্থানের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। এদিকে মঞ্চের সামনে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও টহল দিতে দেখা যায়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর একাধিক টিম গাড়িতে করে দফায় দফায় পুরো সমাবেশ এলাকা পরিদর্শন করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সমন্বিতভাবে কাজ চলছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তারেক রহমান ছাড়া কেউ বক্তব্য দেবে না : তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি নিজে ছাড়া আর কেউ বক্তব্য রাখবেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল বুধবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তারেক রহমান এমন কোনো কর্মসূচিকে সমর্থন করেন না, যা জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করে। তিনি এরইমধ্যে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের উপস্থিত হতে নিষেধ করেছেন। বাংলাদেশে আমরা তার নির্দেশনা পালনের শত চেষ্টা করেও হয়তো শতভাগ পারিনি। তিনি বলেন, তারেক রহমান বিমানবন্দরে থেকে সরাসরি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মায়ের কাছে যেতে চান, যেতে চান পিতা ও ভাইয়ের কবর জিয়ারত করতে। তিনি এমন একটি দিন তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের তারিখ নির্ধারণ করেছেন, যেটি টানা ৩ দিন সরকারি ছুটির মধ্যে পড়ে।
তারেক রহমানের নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে আমরা রাজধানীর কেন্দ্রস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও মানিকমিয়া অ্যাভিনিউতে কোনো কর্মসূচি রাখিনি বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, রাজধানীর একপাশে প্রশস্ত ৩৬ জুলাই মহাসড়কের সার্ভিস লেনের একপাশে আমরা স্থান নির্ধারণ করেছি। সেখানে শুধু দেশবাসীর প্রতি তার (তারেক রহমান) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া ও দেশবাসীর কল্যাণ কামনা করা হবে। সেই আয়োজনে তারেক রহমান ছাড়া দ্বিতীয় কোনো বক্তা থাকছেন না।
তারেক রহমানের ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা : বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগামী তিন দিনের কর্মসূচির কথা জানিয়েছে দলটি। গতকাল বুধবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার (আজ) বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। এরপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। সেখান থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন তিনি। তিনি আরও জানান, প্রত্যাবর্তনের পরদিন শুক্রবার (আগামীকাল) বাদ জুমা জিয়াউর রহমানের মাজার ও সাভার স্মৃতিসৌধে যাবেন তারেক রহমান। আগামী শনিবার নির্বাচন কমিশনে এনআইডি কার্যক্রম শেষ করে শহিদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন তিনি। পরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যাবেন তিনি।
এদিকে, তৃণমূল থেকে আসা বিএনপির এক নেতার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর এটিই হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক মাহেন্দ্রক্ষণ। এত বছর দূরে রাখা হয়েছে, তবুও দেশের মানুষ তার ফেরার অপেক্ষা ছাড়েনি। ২৫ ডিসেম্বরকে আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি বলি না, এটা দেশের মানুষের আনন্দের দিন। তিনি আরও বলেন, গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা মানুষের চোখে-মুখে যে উচ্ছ্বাস, সেটা ভাষায় বলা কঠিন। এখানে এসে মনে হচ্ছে, আমরা নতুন করে আমাদের নেতা, আমাদের রাজনীতি আর আমাদের শক্তিকে বরণ করে নিচ্ছি। তিনি বলেন, স্বৈরাচার পতনের পর তার আগমন নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়েছে। আমরা ঈদের মতো আনন্দ নিয়েই এসেছি। ২৫ ডিসেম্বর শুধু বিএনপির দিন না, এটা সাধারণ মানুষের দিন। আমরা চাই, এই সমাবেশ হোক সুশৃঙ্খল। জনতার উপস্থিতিই প্রমাণ, নেতৃত্ব আর জনগণ একসঙ্গে আছে।
বিএনপির আরেক নেতা বলেন, নেতাকে স্বাগত জানাতে মানুষ যেভাবে আসছে, তাতে মনে হচ্ছে এটা জাতীয় উৎসব। আমরা সবাই প্রস্তুত আছি, যেন পুরো আয়োজন সুন্দরভাবে শেষ হয়। আমাদের কাছে এটা সম্মানের দিন।
যুবদলের এক কর্মী বলেন, আগামীকাল (আজ) ঢাকা শহরে এত বড় জমায়েত হবে, যা মানুষ দেখেনি। আমরা শুধু নেতাকে বরণ করতে আসিনি, আমরা প্রমাণ করতে এসেছি- এই নেতৃত্বের পেছনে জনগণ আছে। এত বছর পরেও তার নামেই মানুষ পথে নেমে আসে, এটা সাধারণ ব্যাপার না। এটাই রাজনীতির আসল শক্তি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৫০ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও অভ্যর্থনা কমিটির সদস্য সচিব রুহুল কবির রিজভী। গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় নির্মিত অভ্যর্থনা মঞ্চ পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন। রিজভী বলেন, ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান আসবেন। আজকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন জেলা থেকে লোক আসা শুরু হয়েছে। সুতরাং ২৫ ডিসেম্বর এখানে মানুষের মহামিলন ও মহামেলায় পরিণত হবে। এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।
তারেক রহমানের জন্য কড়া নিরাপত্তার ছক : তারেক রহমানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে রাজধানীজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দলটির পক্ষ থেকে ৫০ লাখ মানুষ জমায়েতের প্রস্তুতি চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এরইমধ্যে ঢাকায় এসে জড়ো হচ্ছেন। প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখতে এবং বরণ করে নিতে তাদের এই আগমন বলে জানিয়েছেন তারা।
‘রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট জোন’ : সূত্র জানায়, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট-এই তিন জোনে ভাগ করে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তার ছক। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)। তারেক রহমানের নিরাপত্তার জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনেছে বিএনপি, যা এরইমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। এছাড়াও টয়োটা, ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো এলসি ২৫০ মডেল গাড়ি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে নিবন্ধিত হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান ও তার পরিবার লন্ডনের সময় গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। সিলেট হয়ে ফ্লাইটটি আগামীকাল বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
বিমানবন্দরে কড়াকড়ি : তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। শুধু যাত্রীরাই এই সময়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট, অভ্যর্থনা ও রুট : শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন। সেখান থেকে তিনি সড়কপথে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় যাবেন। বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীরা তাকে সংবর্ধনা জানাবেন। ৩০০ ফিট এলাকায় তৈরি মঞ্চে তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন। সেখানে শুধু তারেক রহমানই বক্তব্য দেবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। জনসভা শেষে তিনি সরাসরি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। সেখানে চিকিৎসাধীন তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করবেন। মায়ের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় উঠবেন।
পুলিশ বলছে, দেশে ফেরার পর তারেক রহমান এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময় পাবেন পুলিশ প্রটেকশনসহ বিশেষ নিরাপত্তা। এছাড়া তারেক রহমানের বাসভবন ও অফিসেও থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়া কাউকে তার ধারেকাছে ভিড়তে দেবে না পুলিশ। ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও ছদ্মবেশে গোয়েন্দারা তারেক রহমানের নিরাপত্তার দিকটি দেখভাল করবেন।
রুট ক্লিয়ারেন্স ও নজরদারি : রেড ও ইয়েলো জোনের বাইরে যে এলাকা থাকবে, সেটা বিবেচিত হবে হোয়াইট জোন হিসাবে। এই জোনে প্রবেশ করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। তারেক রহমানের আগমনের দিন পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার প্রায় দুই হাজার সদস্য মোতায়েন থাকতে পারে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ও তারেক রহমানের বাসভবন দেওয়াল ঘেঁষা হওয়ায় দুটি বাসা এবং তারেক রহমানের অফিসকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়েছে। বাসা ও অফিসের মাঝখানের দূরত্ব ও চলাচলের পথকে অতিগুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই পুলিশের বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর রুট ধরে প্রতিটি থানা এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
এছাড়া বিশেষ স্কর্টসহ একাধিক চেকপোস্ট থাকবে। সাধারণত গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় ৯টি চেকপোস্ট চালু থাকে। যেখানে সার্বক্ষণিকভাবে ১৫০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে তার বাসভবনের আশপাশেও।
মাঠে থাকবে সোয়াট টিমণ্ডবোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট : জানা যায়, তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে গুলশানে আসার পথে কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওইদিন তার নিরাপত্তা উপলক্ষে মাঠে থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশের সোয়াট টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। তার বাসা ও অফিস ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করা হয়। সে অনুযায়ী পরবর্তীতে কঠোর নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রওনক আলম বলেন, ‘আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করছি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও একটা নিরাপত্তা নির্দেশিকা দেওয়া হবে। ডিএমপি সদর দপ্তরের সেন্ট্রালি একটা নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে।’
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শাহরিয়ার আলী বলেন, ডিএমপির পক্ষ থেকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হবে, সে হিসাবে তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এরইমধ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে নিরাপত্তায় পর্যাপ্তসংখ্যক গোয়েন্দা পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. বাহারুল আলম বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পোশাকে ও সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবেন।
এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সম্প্রতি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে বিএনপি। তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে তার নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিমানবন্দরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কাল চার ঘণ্টা টোলমুক্ত থাকবে : ঢাকা শহরে প্রবেশের জন?্য বিমানবন্দর এলাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা আগামীকাল বৃহস্পতিবার চার ঘণ্টা জনসাধারণের জন?্য টোলমুক্ত থাকবে। গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামীকাল (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ঢাকা শহরে প্রবেশের জন?্য বিমানবন্দর এলাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা জনসাধারণের জন?্য টোলমুক্ত থাকবে।
এভারকেয়ার হাসপাতাল ও সংলগ্ন এলাকায় ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আজ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল এবং সংলগ্ন এলাকায় যে কোনো প্রকার ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে।
ডিএমপির এক গণবিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-ওওও/৭৬)-এর ২৮ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে এ আদেশ জারি করা হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনুমোদনহীন ড্রোন ওড়ানোর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ঢাকা যাচ্ছেন ৭ লাখ লোক : দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। প্রত্যাবর্তনে তাকে স্বাগত জানাতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশ থেকে দলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষও এখন রাজধানীমুখী। এরইমধ্যে অনেকে আগেভাগেই ঢাকায় অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, তারেক রহমানকে বরণ করতে চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক জেলাগুলো থেকে ৭ থেকে ১০ লাখ লোক ঢাকায় যাবেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা থেকে যাবেন এক লাখ। দলের পক্ষ থেকে ভাড়া করা ট্রেন, বাস, মাইক্রোবাস ও হাইয়েসে করে গত কয়েক দিন ধরে ঢাকা যাচ্ছেন তারা। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও যাচ্ছেন অনেকে।
জামালপুর থেকে ঢাকায় যাবেন বিএনপির ৫০ হাজার নেতাকর্মী : দীর্ঘদিন পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। জামালপুরের সাতটি উপজেলার পাঁচটি সংসদীয় আসন থেকে আজ বৃহস্পতিবার বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকায় যোগ দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরইমধ্যে জামালপুর থেকে জামালপুর স্পেশাল নামে একটি বিশেষ ট্রেন ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার আকতার হোসেন সেখ।
জামালপুর বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বরণ করে নিতে জামালপুর জেলা থেকে প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জেলার জামালপুর-০১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) আসন থেকে তিন হাজার, জামালপুর-০২ (ইসলামপুর) আসন থেকে ১ হাজার ৫০০, জামালপুর-০৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসন থেকে আট হাজার, জামালপুর-০৪ (সরিষাবাড়ী) আসন থেকে পাঁচ হাজার এবং জামালপুর-০৫ (জামালপুর সদর) আসন থেকে প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন। জেলার সাতটি উপজেলার পাঁচটি সংসদীয় আসন থেকে বাস ও স্পেশাল ট্রেন ছাড়াও মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এককভাবেও নেতাকর্মীরা ঢাকায় যাবেন।
টাঙ্গাইলে বিএনপির ব্যাপক প্রস্তুতি, ঢাকায় আসছেন ৫০ হাজার নেতাকর্মী : প্রায় দেড় যুগ পর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। ছাত্রদল, যুবদলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের নজর এখন ২৫ ডিসেম্বরের দিকে। গত মঙ্গলবার থেকেই অনেক নেতাকর্মী ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে টাঙ্গাইল থেকে প্রায় পাঁচ শতাধিক বাস ছাড়াও মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার এবং একটি ট্রেন রিজার্ভ করা হয়েছে। টাঙ্গাইল থেকে ৫০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ফরহাদ ইকবাল। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে জেলার নেতারা কয়েক দিন ধরে বৈঠক ও সভা করেছেন। উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের সব নেতাকর্মী ঢাকায় যাবেন।
তারেক রহমান-এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বাংলাদেশ বেতার থেকে সরাসরি সম্প্রচার হবে : আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ৩০০ ফিট সড়ক, পূর্বাচল, ঢাকায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান-এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ বেতার ঢাকা-ক ৬৯৩ কিলোহার্জ, এফ.এম ১০৬.০ মেগাহার্জ, ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রম এফ.এম ৮৮.৮ মেগাহার্জে এবং ওয়েবসাইট www.betar.gov.bd ও মোবাইল অ্যাপ: Bangladesh Betar থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ বেতারের সকল আঞ্চলিক কেন্দ্রের মধ্যম তরঙ্গ ও সকল এফ.এম ব্যান্ডে অনুষ্ঠানটি একযোগে রিলে করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন। পরে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং চিকিৎসার জন্য ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনে পাড়ি জমান। সেই থেকে তিনি পরিবারসহ সেখানেই অবস্থান করছেন। লন্ডন থেকেই তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি লন্ডনে বসেই দলের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার তিনি দেশের মাটিতে পা রাখবেন, যার মাধ্যমে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে।