ঢাকা সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জামায়াতের সঙ্গে এনসিপি ও এলডিপির সমঝোতা

জামায়াতের সঙ্গে এনসিপি ও এলডিপির সমঝোতা

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নির্বাচনি সমঝোতা হয়েছে। এই সমঝোতায় কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিও (এলডিপি) যুক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বিকালে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আট দল একসঙ্গে ছিল। আর দুটি দল তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। সেগুলো হলো এনসিপি ও কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি।

জামায়াতের আমির বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন আসনে সমঝোতা হয়েছে। আরও দল তাদের সঙ্গে সমঝোতায় আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এই মুহূর্তে সেটি সম্ভব হচ্ছে না।

গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে জামায়াতের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস,বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)- এই ছয়টি দল আসন সমঝোতার ভিত্তিতে সব আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার আলোচনা শুরু করে। পরে এতে যোগ দেয় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি। জামায়াতসহ এই আটটি দল বিভিন্ন দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে টানা অনেক দিন ধরে মাঠে রয়েছে। নতুন করে এনসিপি ও এলডিপি নির্বাচনি সমঝোতায় যুক্ত হওয়ায় এখন এ সংখ্যা দাঁড়াল ১০-এ।

সংবাদ সম্মেলনে সমমনা দলগুলোর মধ্যে আসন সমঝোতা প্রায় সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান জামায়াতে ইসলামীর আমির। তিনি বলেন, খুব দ্রুতই এর বিস্তারিত জানানো হবে। একই সঙ্গে ঘোষিত তারিখের যেন কোনো হেরফের না হয় এবং নির্ধারিত সময়েই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশ যে সংকটময় সময় পার করছে, সেই বাস্তবতা থেকে প্রিয় বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে শোষণ-বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়েই আটটি দল দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আরও দুটি দল- কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রমের নেতৃত্বাধীন এলডিপি এবং এনসিপি- এই জোটে সম্পৃক্ত হয়েছে। তিনি জানান, এনসিপির সঙ্গে এরইমধ্যে বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। সময় স্বল্পতার কারণে তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে না পারলেও দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সরাসরি বৈঠকে অংশ নিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। শিগগির এনসিপি আলাদা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবে।

জামায়াত আমির বলেন, ৩০০ আসনেই নির্বাচনি সমঝোতা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং প্রায় সব আসনে সমঝোতা চূড়ান্ত। শেষপর্যায়ে যুক্ত হওয়া দুই দলের কারণে কিছু কারিগরি বিষয় রয়ে গেছে, যা মনোনয়ন দাখিলের পর পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ঘোষিত তারিখেই একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও সবার জন্য সমতল মাঠ তৈরি হয়নি। সংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। কোনো ধরনের পক্ষপাত, ভয়ভীতি বা লোভ-লালসার কাছে নতিস্বীকার করলে জাতি তা মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটাধিকার থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো প্রক্রিয়া মেনে নেওয়া হবে না। ভোটাধিকার রক্ষায় এই জোট ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করবে।

সংবাদ সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান ২০২৪ সালের গণআন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণ করেন। তিনি শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই জোট শুধু নির্বাচনি নয়, এটি রাজনৈতিক, আন্দোলন ও দেশ গঠনের জোট। জাতীয় স্বার্থে ও জাতীয় ইস্যুতে ভবিষ্যতেও দলগুলো একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করবে বলে জানান তিনি।

শেষে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা ও উপস্থিতির জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জাতীয় স্বার্থে এই ঐক্য আরও দৃঢ় হবে, ইনশাআল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ডা. আহমদ আব্দুল কাদের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, নেজামে ইসলাম পার্টি বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির আব্দুল মাজেদ, ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী, জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা উপস্থিত ছিলেন।

বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে আট দলের সঙ্গে নির্বাচন করব, বললেন নাহিদ ইসলাম : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য ও বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে জামায়াতসহ সমমনা আট দলের সঙ্গে আমরা নির্বাচনে অংশ নেব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজ সোমবার চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।

গতকাল রোববার রাতে দলের রাজধানীর বাংলামোটরে অস্থায়ী কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি সেখানে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা করে যাচ্ছিল। আমরা সে বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। আমাদের দলের পক্ষ থেকে এবং সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর জন্য আজকের এই তাৎক্ষণিক প্রেস ব্রিফিং।

নাহিদ বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে আমরা প্রথম থেকে বলে এসেছি যে, আমরা আসন্ন এই নির্বাচনে এককভাবে অংশগ্রহণ করতে চাই। আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে চাই। সে অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা চলছিল। আমরা সারাদেশ থেকে মনোনয়ন আহ্বান করেছিলাম, যারা প্রার্থী হতে চায়। পরে আরও দুটি দলের সাথে আমাদের একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হয়েছিল। সংস্কার প্রশ্নে তখন আমরা বলেছিলাম যে আমরা তিনটি দল মিলে যে সংস্কার জোট, আমরা একত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।

তিনি আরও বলেন, শরিফ ওসমান হাদির যে শাহাদাত বরণ এবং তাকে প্রকাশ্যে গুলি করার মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেক বেশি পরিবর্তন হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড, এই শাহাদাত বরণের মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারছি, বাংলাদেশ আধিপত্যবাদী আগ্রাসনী শক্তি এখনো কার্যকর রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যাদেরকে আমরা পরাজিত করেছিলাম, তারা নির্বাচন বানচাল করার জন্য এখনো চক্রান্ত করছে।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, নতুন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, সেটাকে ব্যাহত করার জন্য তারা চক্রান্ত করছে। এই জুলাই প্রজন্মকে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তারা চক্রান্ত করছে। সেদিন ওসমান হাদির গায়ে গুলি লেগেছে, কালকে আপনার গায়ে লাগবে, পরশুদিন আমার গায়ে লাগবে। কারণ প্রথম ও প্রধান টার্গেট করা হচ্ছে এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা অংশগ্রহণ করেছে। সারা দেশের তরুণরা, নাগরিকরা, শহীদ পরিবার, যারা আহত যোদ্ধা রয়েছে। ফলে এই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আমাদের কাছে মনে হয়েছে এই মুহূর্তে এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য, প্রতিযোগিতা পূর্ণ করার জন্য এবং যাতে আধিপত্যবাদী কোনো শক্তি আমাদের এই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অগ্রযাত্রাকে ঠেকাতে না পারে সেজন্য আমাদের বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন। সেই তাগিদ থেকেই আমরা জামায়াতে ইসলামী ও তাদের যে সমমনা আট দল রয়েছে তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি। তাদের যে নির্বাচনী সমঝোতা জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি সে নির্বাচনী সমঝোতায় সম্মত হয়েছে। আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি এবং এই সমমনা আট দলের সাথে আমরা একত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ১০ দলের জোটকে নির্বাচনী জোট দাবি করে নাহিদ ইসলাম বলেন, এটি নির্বাচনী সমঝোতা জোট। একদিকে যেমন নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার জন্য, অন্যদিকে প্রথম থেকে সংস্কার ও বিচারের প্রশ্নে আমরা কাজ করে যাচ্ছিলাম। সেই সংস্কার, বিচার ও আধিপত্যবাদবিরোধী, দুর্নীতিবিরোধী এই বিষয়গুলোতে আমাদের ন্যূনতম কর্মসূচিও থাকবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের যে সংকটগুলো রয়েছে, যেখান থেকে এই বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। জুলাই প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যে আমাদের আকাঙ্ক্ষা সেটা যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, এজন্য আমরা একটা বৃহত্তর ঐক্যের জায়গায় পৌঁছেছি। আমরা আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণাটি দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা আগামীকাল (সোমবার) আমাদের প্রার্থীর বিষয়টা আছে, সেটা আমরা চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করব। সমঝোতায় আমাদের যে প্রার্থী তারাই নমিনেশন ফরম জমা দেবেন। সারা বাংলাদেশে আমরা একত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং তাদের সহযোগী সংগঠন গণভোটের পক্ষে ক্যাম্পেইন করবে। যেখানে আমাদের প্রার্থী থাকবে না, সেখানে অন্য প্রার্থী থাকবেন। এই সমঝোতা তাদেরকে সহায়তা করবে। তাদের পক্ষে ক্যাম্পেইন করবে। সংবাদ সম্মেলনে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত