ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইরানের কাছে এখনও ইউরেনিয়াম রয়ে গেছে

আশঙ্কা ইসরায়েলের
ইরানের কাছে এখনও ইউরেনিয়াম রয়ে গেছে

ইরানে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার পরও তেহরানের কাছে কিছু সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়ে গেছে বলে ধারণা করছে ইসরায়েল। আর এসব ইউরেনিয়াম পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা করছে দেশটি। গত বৃহস্পতিবার জ্যেষ্ঠ এক ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এমন খবর প্রকাশ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাই ‘পুরোপুরি ধ্বংস’ হয়ে গেছে। ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বিশেষ বাংকার-বিধ্বংসী বোমার মাধ্যমে এ হামলা চালানো হয়েছে।

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র শন পারনেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে অন্তত এক থেকে দুই বছর পেছনে ঠেলে দিয়েছি। অন্তত প্রতিরক্ষা দপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগের পর্যালোচনায় এমনটাই মনে করা হচ্ছে।’ যদিও শন পারনেল তার এই দাবি প্রমাণে কোনো তথ্য উপস্থাপন করেননি। পারনেল বলেন, গোয়েন্দা বিশ্লেষকদের হিসাব অনুযায়ী, আসল সময়টা সম্ভবত দুই বছরের কাছাকাছি। ইসরায়েলের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে থাকা ১৮ হাজার সেন্ট্রিফিউজের বেশির ভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ সব ইউরেনিয়াম নষ্ট হয়নি। কিছু ইউরেনিয়াম বিশেষ পাত্রে আলাদা করে সংরক্ষণ করা ছিল, যা এখনো ইরানি বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করতে পারেন। তবে ওই ইসরায়েলি কর্মকর্তা হুঁশিয়ার করে বলেন, কেউ যদি সে ইউরেনিয়াম সংগ্রহের চেষ্টা করে, তবে ইসরায়েল তা ধরে ফেলবে এবং আবার হামলা চালাবে।

নিউইয়র্ক টাইমসকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইসরায়েলের বিশ্বাস, ১০ মাস আগে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর ইরান যে জোরেশোরে পরমাণু বোমা বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে, তার যথেষ্ট প্রমাণ ইসরায়েলের হাতে আছে। নাসরাল্লাহ ছিলেন ইরানের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। ওই কর্মকর্তা বলেন, এ সংক্রান্ত প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ভাগাভাগি করা হয়েছে। এরপরই ইসরায়েল ইরানের ওপর একের পর এক হামলা চালানোর নিজস্ব পরিকল্পনাকে এগিয়ে নেয়। তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাসচিব রাফায়েল গ্রোসি বলেন, হামলার আগেই ইরান তাদের অনেক ইউরেনিয়াম মজুত সরিয়ে ফেলেছিল। তবে ইসরায়েলি ওই কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, এটা সম্ভব নয়, কারণ, এমনটা করা খুবই কঠিন।

১২ দিনের সংঘাত

গত ১৩ জুন থেকে ইরানের ওপর হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইরানের সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালায় তারা। পাশাপাশি দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা, গোয়েন্দা ও সামরিক কমান্ডার এবং বিজ্ঞানীদেরও হত্যা করে ইসরায়েল। জবাবে ইসরায়েলের হাইফা, তেল আবিবসহ বিভিন্ন বড় শহরের দিকে ইরান টানা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এগুলোর কিছু কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় আঘাত হানে। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নীতি অনুযায়ী, হামলার আসল জায়গাগুলোর তথ্য প্রকাশ করাটা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য নিষিদ্ধ।

এক সপ্তাহের মাথায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপ নেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। হামলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল-উদেইদ সামরিক ঘাঁটির দিকে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। এই পাল্টা হামলাকে ট্রাম্প ‘খুব দুর্বল জবাব’ বলে উল্লেখ করেন। বলেন, তিনি আবার ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে শান্তি আলোচনার চেষ্টা শুরু করবেন।

নিজের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘হামলার আগেই ইরান আমাদের সতর্ক করে দিয়েছিল, এ জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি আরও বলেন, এই হামলায় কোনো মার্কিন নাগরিক নিহত বা আহত হননি। ট্রাম্পের মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, ইরান এই হামলা খুব হিসাব করে করেছে, যেন ওয়াশিংটন ও তেহরান দুই দেশই পরিস্থিতি শান্ত করার সুযোগ পায়। তিনি লিখেছেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, ওরা নিজেদের ভেতরের সব ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলেছে। আশা করি, আর কোনো ঘৃণা থাকবে না।’

ট্রাম্প আরও লেখেন, ‘হয়তো এখন আঞ্চলিকভাবে শান্তি ও সৌহার্দ্যের পথে এগোতে পারবে ইরান। আর আমি ইসরায়েলকেও সেটা করতে উৎসাহ দেব।’ চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু বিষয়ে আলোচনা আবার শুরু হচ্ছে এবং এরই মধ্যে নতুন আলোচনার সময়সূচি নির্ধারিত হয়েছে। এর আগে ইরানে ইসরায়েলের প্রথম দফার হামলার পর ওয়াশিংটন ও তেহরানের পাঁচ দফায় আলোচনা ব্যাহত হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত