
গাজার জায়তুন এলাকায় গত ৭২ ঘন্টায় ৩০০টিরও বেশি বাড়ি ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি সেনারা। স্থানীয়রা বলছেন, এটি দখল পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই চালানো হচ্ছে। গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল গত বুধবার জানান, ইসরায়েলি বাহিনী জায়তুনে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক আবাসিক এলাকা টার্গেট করেছে। তিনি বলেন, সেনারা বিশেষ করে পাঁচতলা বা তার বেশি উঁচু ভবনকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। ব্যবহৃত শক্তিশালী বিস্ফোরকের কারণে আশপাশের ভবনগুলোও ধ্বংস হয়ে গেছে।
কিছু বাড়ি বাসিন্দারা ভেতরে থাকা অবস্থায় উড়িয়ে দেওয়া হয়, ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এসব ধ্বংসযজ্ঞের আগে কোনো সতর্কতা দেওয়া হয়নি এবং তীব্র গোলাবর্ষণের কারণে উদ্ধারকর্মীরা আহতদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। গত বছরের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল গাজায় ৬১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, যা নিয়ে তেল আবিবের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এ ছাড়া গাজায় চলমান যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।
গাজায় অনাহারে শতাধিক শিশুর মৃত্যু
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের ফলে অপুষ্টি ও অনাহারে ১০০ জনেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান জেনারেল ফিলিপ লাজ্জারিনি এ তথ্য জানিয়েছেন। লাজ্জারিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অপুষ্টি ও ক্ষুধার কারণে কমপক্ষে ১০০ শিশু মারা গেছে।’ তিনি বলেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে ৪০ হাজারেরও বেশি শিশু নিহত বা আহত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গাজায় কমপক্ষে ১৭ হাজার শিশু ‘অনুসঙ্গহীন এবং বিচ্ছিন্ন’। এছাড়া ১০ লাখ শিশু গভীরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত এবং শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন। ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান আরও বলেন, ‘শিশুরা তো শিশুই। গাজাসহ এই শিশুরা যেখানেই থাকুক না কেন, শিশুরা মারা গেলে বা ভবিষ্যৎ থেকে বঞ্চিত হলে কারও চুপ থাকা উচিত নয়।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টির কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন শিশুসহ আরও আটজন মারা গেছে। এর ফলে উপত্যকাটিতে মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভিক্ষে মোট মৃতের সংখ্যা ২৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১০৬ জন শিশুও রয়েছে। গত ২ মার্চ থেকে গাজার গাজার ক্রসিং বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। যার ফলে উপত্যকাটিতে কোনো মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে পারছে না এবং অঞ্চলটি দুর্ভিক্ষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তবে এখন সীমিত পরিমাণ ত্রাণ গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে তেল আবিব, তবে তা গাজার অনাহারী জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণের তুলনায় অনেক কম। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গাজার জনগণের ন্যূনতম মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৬০০ ত্রাণ ট্রাক এবং ৫০টি জ্বালানি ট্রাকের প্রয়োজন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের যোদ্ধারা। এদিন ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।
হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। এছাড়া গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পাশাপাশি উপত্যকাটিতে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও রয়েছে ইসরায়েল।