ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সাবেক সহকারী মুফতি, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

প্রশ্ন : আমি একটি জেনারেল (সুদি) ব্যাংকে প্রায় ৯ বছর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছি। এ সময়ে প্রাপ্ত বেতন-বোনাস দিয়ে গাড়ি-বাড়ি করেছি। পরবর্তীতে একসময় ‘সুদি ব্যাংকে চাকরি করা বৈধ নয়’ মাসআলা জানার পর সুদি কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে নিজের মাঝে অনুশোচনা জাগে। ফলে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে এখন অন্য একটি চাকরি করছি। আগের চাকরির বেতন-বোনাস দিয়ে যে গাড়ি-বাড়ি করেছি, তা আমার জন্য বৈধ হবে? যদি বৈধ না হয়, তাহলে করণীয় কী?

উত্তর : সুদি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যে আয় দিয়ে গাড়ি-বাড়ি বা অন্য সম্পদ গড়েছেন, তা ভোগ করা জায়েজ হবে না। এখন আপনি যদি এ গাড়ি-বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ থেকে বৈধভাবে উপকৃত হতে চান, তাহলে যে পরিমাণ টাকা দিয়ে এ গাড়ি-বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ ক্রয় করেছেন, সে পরিমাণ টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরিব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। এভাবে যতটুকু সদকা করবেন, ততটুকু সম্পদ আপনার জন্য হালাল হবে। উল্লেখ্য, গাড়ি-বাড়ি করার পর এগুলো ভাড়ায় দিয়ে থাকলে তা থেকে উপার্জিত টাকাও সদকা করে দিতে হবে এবং পেছনের জীবনে হারাম উপার্জন ও হারাম ভোগ-ব্যবহারের কারণে আল্লাহর কাছে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। (মুসলিম : ১৫৯৮, বাদায়েউস সানায়ে : ৬/১৪৫, ফাতহুল কাদির : ৮/২৫৮, আল-বাহরুর রায়েক : ৮/১১৪)।

প্রশ্ন : আমার বাবা রাষ্ট্রীয় একটি জীবনবীমা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বাবার ইন্তেকালের পর আমরা তার বানানো একটি বাড়ি উত্তরাধিকার হিসেবে লাভ করেছি। বাড়িটি নির্মাণে ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। তারমধ্যে ৫০ লাখ জীবনবীমা প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন বাবদ প্রাপ্ত টাকা। বর্তমানে আমরা বাড়ি ভাড়া আর বাবার মাসিক পেনশনের টাকা দিয়ে চলি। বাবার ওয়ারিসদের জন্য এ বাড়িতে থাকা ও তার ভাড়া এবং পেনশনের টাকা গ্রহণ করা কি জায়েজ হচ্ছে? নাজায়েজ হলে করণীয় কী?

উত্তর : জীবনবীমা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। তাতে সুদ ও জুয়া বিদ্যমান। তাই সেখানে চাকরি করাও নাজায়েজ। সেখান থেকে প্রাপ্ত বেতন ও পেনশন যেভাবে আপনার বাবার জন্য হারাম, তেমনি তার ওয়ারিসদের জন্যও হারাম। তারা এগুলো ভোগ না করে সদকা করে দেবে এবং তাদের অংশে উক্ত বাড়ির যে পরিমাণ হারাম অংশ রয়েছে, তা সদকা করে দেবে। তবে তাদের মধ্যে যারা কর্মক্ষম ও চলার মতো অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই, তারা প্রয়োজন অনুযায়ী এ সম্পদ ভোগ করতে পারবে। (আল-মুহিতুল বুরহানি : ৮/৬৩, আল-ইখতিয়ার : ২/৫৬৮, রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৮৬, আল-বাহরুর রায়েক : ৮/২০১, ফিকহুন নাওয়াজেল : ৩/২৭৫, আহকামুল মালিল হারাম : ৭৪)।

প্রশ্ন : আমি একজন বেসরকারি কর্মকর্তা। আমাকে প্রতি বছর অনেক টাকা ইনকাম ট্যাক্স হিসেবে দিতে হয়। করের পরিমাণ কমানোর জন্য আয়কর রেয়াত পাওয়ার কয়েকটি অপশন আছে। তারমধ্যে ব্যাংকে ডিপিএস করা, সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা ইত্যাদি। সুদের লভ্যাংশ না নেওয়ার নিয়তে কেবল করের পরিমাণ কমানোর জন্য ব্যাংকে ডিপিএস করা অথবা সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা ঠিক হবে?

উত্তর : ইনকাম ট্যাক্স কমানোর জন্য সুদি ব্যাংকে ডিপিএস করা কিংবা সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা জায়েজ নয়, যদিও অর্জিত সুদ সদকা করে দেওয়ার নিয়ত থাকে। কেননা, এতে সুদি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হচ্ছে। আর সুদ নিজে ব্যবহার না করলেও সুদি চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়াই স্বতন্ত্র গোনাহের কাজ। তাই কর কমানোর জন্যও সুদি চুক্তির আশ্রয় নেওয়া জায়েজ নয়। (মুসলিম : ১৫৯৮ ও ১৫৯৯)।

প্রশ্ন : কোন ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ?

উত্তর : বিশেষ প্রয়োজনে প্রচলিত ধারার ব্যাংকসমূহে চলতি হিসাব তথা সুদবিহীন হিসাব খুলে লেনদেন করা জায়েজ। তবে এসব ব্যাংকে কোনো ধরনের সঞ্চয়ী বা মেয়াদি হিসাব খোলা জায়েজ হবে না। প্রাপ্ত সুদ নিজে ভোগ না করলেও এসব সুদি অ্যাকাউন্ট খোলাই জায়েজ নয়। কেননা, সুদি ব্যাংকে যে কোনো ধরনের সঞ্চয়ী হিসাব খোলাই মূলত সুদি চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া।

আমাদের দেশে প্রচলিত ইসলামি ব্যাংকগুলোতে নিজে মুনাফা গ্রহণ না করার প্রত্যয়ে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা যাবে। কেননা, এসব ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবগুলো মুদারাবা ভিত্তিতে হয়ে থাকে। তাই এ ক্ষেত্রে সুদি চুক্তি হয় না। তবে যেহেতু এ ধারার ব্যাংকগুলোর যথাযথভাবে শরিয়া পালনের বিষয়টি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ, তাই এ ধরনের হিসাব থেকে প্রাপ্ত মুনাফা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দেওয়াই নিরাপদ। (সুরা বাকারা : ২৭৫, মুসলিম : ১৫৯৮-১৫৯৯, তাফসিরে কুরতুবি : ৩/২২৫, তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিম : ১/৬১৯)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত