প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
প্রশ্ন : কিছু লোক এলাকার নেতাদের টাকা দিয়ে রাস্তার পাশের সরকারি গাছ কেটে নিচ্ছে। তাদেরকে নিষেধ করলে তারা বলে, এসব সরকারি মাল; জনগণ নিলে সমস্যা নেই। জানার বিষয় হলো, তাদের জন্য উক্ত গাছ কেটে নেওয়া বৈধ হয়েছে? যদি না হয়, তাহলে কীভাবে তারা এর মূল্য দেবে?
উত্তর : রাস্তার পাশে সরকারিভাবে রোপণকৃত গাছের মালিক সরকার। এলাকার নেতারা এগুলোর মালিক নয়। তাই ওদেরকে টাকা দিয়ে এসব গাছ কেটে নেওয়া বৈধ হবে না। ব্যক্তিগত সম্পদ যেভাবে মালিকের অনুমতি ছাড়া ভোগ করা বৈধ নয়, তদ্রূপ সরকারি সম্পদও সরকারি কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমোদন ছাড়া ভোগ করা নাজায়েজ। তাই এভাবে সরকারি সম্পদ নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আর যে গাছগুলো কাটা হয়ে গেছে, সেগুলোর মূল্য সরকারি কোনো খাতে পৌঁছে দিতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে ওই পরিমাণ টাকা গরিব-মিসকিনদের মাঝে বিতরণ করবে এবং এজন্য তওবা করবে। (আল-মুহিতুল বোরহানি : ৯/১৪৭, আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল-কুওয়াইতিয়্যা : ৮/২৬২)।
প্রশ্ন : রক্তদাতার জন্য বিনিময় গ্রহণ করা জায়েজ হবে?
উত্তর : রক্ত বিক্রি করা নাজায়েজ। তাই রক্ত দিয়ে বিনিময়ে কোনো কিছু নেওয়া জায়েজ হবে না। রক্ত দিলে সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই দিতে হবে। তবে যাতায়াত ভাড়া ও রক্ত পরীক্ষাসহ আনুষঙ্গিক খরচ থাকলে তা নিতে পারবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/৩৩৮, আল-বাহরুর রায়েক : ৬/৭৬, খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ৩/৩৯, আহকামুল কোরআন : ১/৩৫, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ৮/৪০৫)।
প্রশ্ন : বিধর্মী প্রতিবেশীদের কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া, ফলমূল নেওয়া ও খোঁজখবর নেওয়া যাবে?
উত্তর : প্রতিবেশী অমুসলিম হলেও তার সঙ্গে সদাচরণ করা, বিপদাপদে সাহায্য-সহযোগিতা করা, অসুস্থ হলে খোঁজখবর নেওয়া ও সাহায্য করা ইসলামের শিক্ষা। এটিও প্রতিবেশীর হকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেননি। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা : ৮)। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, এক ইহুদি বালক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সেবা করত। একবার সে অসুস্থ হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে দেখতে গেলেন। বললেন, ‘তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। ফলে সে মুসলমান হয়ে গেল।’ (বোখারি : ৫৬৫৭)। তবে অসুমলিমদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়া নিষেধ। কোরআনে এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। (ফাতহুল বারি : ৩/২৬২, উমদাতুল কারি : ২১/২১৮, আল-বাহরুর রায়েক : ৮/২০৪, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/৩৪৮, রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৮৮)।
প্রশ্ন : এক ব্যক্তির সন্তানরা তার দেখাশোনা করে না এবং তাকে খরচাদিও দেয় না। তাই সে চাচ্ছে, তার সম্পদ থেকে সন্তানদের বঞ্চিত করে পুরো সম্পত্তি স্ত্রীর নামে লিখে দিতে। এটা জায়েজ হবে?
উত্তর : সম্ভাব্য কোনো ওয়ারিসকে বঞ্চিত করে সমুদয় সম্পত্তি কাউকে দিয়ে দেওয়া অবৈধ। সন্তানরা বাবার খোঁজ না নেওয়া ও তাকে না মানা অন্যায়। কিন্তু এ কারণে তাদেরকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। সন্তানদের কর্তব্য, পিতামাতার দেখাশোনা করা ও খোঁজখবর রাখা এবং তাদের অবাধ্য না হওয়া। পিতামাতার অবাধ্যতা কবিরা গোনাহ। উল্লেখ্য, মিরাস হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার মৃত্যুপরবর্তী সম্পদ বণ্টনের পদ্ধতি। বান্দার উচিত, এতে নিজ থেকে হস্তক্ষেপ না করা এবং এমন কিছু না করা, যাতে তার সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী পুরোপুরি বঞ্চিত হয়ে যায়। অবশ্য কখনও কোনো সন্তানের ফাসেকি বা অবাধ্যতা চরম পর্যায়ে চলে গেলে সেক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভুক্তভোগী নিজে কোনো ফতোয়া বিভাগে গিয়ে অবস্থা বর্ণনা করে তাদের মাসআলা অনুযায়ী আমল করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৩১৬৮৮, খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ৪/৪০০, ফতোয়ায়ে বাজ্জাজিয়া : ৬/২৩৭)।