ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সদকার যত কল্যাণ

রফিকুল ইসলাম আইনী
সদকার যত কল্যাণ

দান-সদকা একটি মহান ইবাদত। সদকা দাতার ইহ-পরকালীন সম্মান ও গৌরব বৃদ্ধি করে। বিপদাপদ দূর করে। হায়াত বৃদ্ধি করে। যেসব ইবাদতের অসংখ্য পুরস্কারের কথা কোরআন-হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, দান-সদকা তার অন্যতম। শুধু বিপুল সওয়াব প্রাপ্তিই নয়, দানের উপকারিতা নানামুখী।

দানে সম্পদ কমে না : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দান-সদকা সম্পদ বৃদ্ধি করে, কমায় না।’ (মুসলিম : ২৫৮৮)।

সদকা ধন-সম্পদ বাড়ায় : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ কোনো অবিশ্বাসী পাপীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা বাকারা : ২৭৬)।

দান না করলে ধন বাড়ে না : আসমা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, ‘তুমি (সম্পদ কমে যাওয়ার ভয়ে) সদকা দেওয়া বন্ধ করবে না। অন্যথায় তোমার জন্যও আল্লাহ কর্তৃক দান বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ (বোখারি : ১৪৩৩)।

দানে সম্পদ পবিত্র হয় : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়! ব্যবসায়িক কাজে বেহুদা কথাবার্তা ও অপ্রয়োজনীয় শপথ হয়ে থাকে। সুতরাং তোমরা ব্যবসার পাশাপাশি সদকা করে তাকে ত্রুটিমুক্ত কর।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৩৩২৬)।

দানশীলের জন্য রয়েছে পুরস্কার : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় দানশীল ব্যক্তি ও দানশীলা নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে ধার দেয়, তাদেরকে দেওয়া হবে বহুগুণ এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ (সুরা হাদিদ : ১৮)।

দানকারীর জন্য ফেরেশতারা দোয়া করে : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রত্যেক বান্দা যখন সকালে ওঠে, দুজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। তাদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! খরচকারীর ধন আরও বাড়িয়ে দিন।’ দ্বিতীয়জন বলেন, ‘হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।’ (বোখারি : ১৪৪২)।

সদকা আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় সদকা আল্লাহর ক্রোধকে প্রশমিত করে।’ (তিরমিজি : ৬৬৪)।

সদকা পাপ মোচন করে : মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। তিনি বললেন, ‘হে মুয়াজ! আমি কি তোমাকে প্রভূত কল্যাণ লাভের পথ বাতলে দেব না?’ এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘সদকা পাপকে মিটিয়ে দেয়, যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।’ (তিরমিজি : ২৬১৬)।

সদকা বিপদাপদ দূর করে : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা অধিক হারে সদকা করো। কেননা, বালা-মসিবত সদকাকে অতিক্রম করতে পারে না।’ (সুনানে বাইহাকি : ৮০৮৩)।

দান রোগ-ব্যাধি নিরাময় করে : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা সদকার মাধ্যমে তোমাদের রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করো। সদকায় বালা-মসিবত দূর হয়।’ (সুনানে বাইহাকি : ৬৫৯৩)।

সদকা আয়ু বাড়ায় : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুসলমান ব্যক্তির সদকা তার হায়াত বৃদ্ধি করে।’ (তাবারানি : ৩১)। ইমাম নববি (রহ.) হায়াত বৃদ্ধির উদ্দেশ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আল্লাহ তার জীবনে বরকত দান করবেন। ফলে অল্প সময়েও অধিক ইবাদত-বন্দেগি করার সুযোগ হবে।’

দান কবরের শাস্তি রোধ করবে : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় সদকা দাতাকে কবরের আগুনের উত্তাপ থেকে রক্ষা করবে।’ (তাবারানি : ৭৮৮)।

দানকারী আরশের নিচে ছায়া পাবে : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেদিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ আরশের নিচে ছায়া দেবেন। তাদের এক শ্রেণি হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যে এমনভাবে গোপনে দান করেছে যে, তার বাম হাত জানতে পারেনি, তার ডান হাত কী দান করেছে।’ (বোখারি : ৬৬০)।

লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া, উত্তরা, ঢাকা

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত