এক ঠিকানায় সকল নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে আসছে নতুন সেবা আউটলেট ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’। সংক্ষেপে যেটিকে ‘নাগরিক সেবা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
সেবাদাতা হিসেবে ব্যক্তি উদ্যোক্তারা আবেদন করতে পারবেন আজ ১ মে থেকেই। চলমান ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোকেও এখানে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হবে। আগ্রহী উদ্যোক্তাদের এ সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদনের অনুরোধ করা যাচ্ছে।
এর মাধ্যমে সরকারি সেবা এখন জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর উদ্যোগ হিসেবে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা যা নাগরিক সেবাকেন্দ্র (কিয়স্ক) থেকে এখনই নেওয়া যাবে তার তালিকা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শুরুতে প্রায় ১০০ সেবা দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, ন্যাশনাল ইন্টার-অপারেবিলিটি ফ্রেইমওয়ার্ক এবং ডেটা গভর্নেন্স কাঠামো গঠন ও কার্যকরের পাশাপাশি ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনে গতি বাড়াবে এই উদ্যোগ। একই সঙ্গে সেবা সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীন উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ‘নাগরিক সেবা’ কেন্দ্র পৌঁছে যাবে বাংলাদেশের সব শহরে, সব গ্রামে এবং ওয়ার্ডে।
‘নাগরিক সেবা’ কেন্দ্রে আবেদনের পরে নাগরিকের আবেদনের জন্য ‘প্রিন্টেড পেপার’ নিয়ে কোনো সরকারি বা আধা বেসরকারি অফিসে যেতে হবে না। বরং সেবা কেন্দ্রের সাইট থেকে অনলাইনে জমা দেওয়া অবেদন সরাসরি ট্র্যাকিং নম্বরসহ সংশ্লিষ্ট অফিসে পৌঁছে দেওয়া হবে। এর পেছনে কাজ করবে একটি শক্তিশালী ও নিরাপদ সার্ভিস বাস। ন্যাশনাল সার্ভিস বাস মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে ইন্টার-অপারেবিলিটি নিশ্চিত করবে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, তথ্য লেনদেনের মান, উপযোগিতা, গোপনীয়তা এবং সাইবার সিকিউরিটি দেখভাল করবে প্রস্তাবিত ডেটা গভর্নেন্স অ্যান্ড ইন্টার-অপারেবিলিটি অথরিটি।
‘নাগরিক সেবা ইউজার ইন্টারফেইস হিসেবে একটি সিঙ্গেল সার্ভিস পোর্টাল বা ওয়েব সাইট তৈরি করা হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে থাকবে সুপার অ্যাপ। এই পোর্টাল ও ওয়েবে থাকবে সকল সেবার সিঙ্গেল গেইটওয়ে, বিলিং এগ্রিগেটর এবং পেমেন্ট গেইটওয়ে,’ বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ‘নাগরিক সেবা কেন্দ্রের’ উদ্যোক্তাদের থাকবে সুনির্দিষ্ট ব্রান্ডিং, ইউনিফর্ম, পরিচয় শনাক্তকারী কার্ড এবং সরকার প্রদত্ত সনদ। তিনি বলেন, নাগরিক সেবা কেন্দ্রের জন্য সরকার ইন্টারনেট প্রদানকারী কোম্পানিগুলোকে উচ্চগতি ও উচ্চ মানের ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবার নির্দেশনা জারি করবে। থাকবে নির্দিষ্ট প্রাইস প্ল্যান। পাশাপাশি ট্রেনিং এবং যাচাই-বাছাই পরীক্ষায় নির্বাচিত উদ্যোক্তাদের প্রদত্ত সনদের বিপরীতে অন্তত ৪টি কম্পিউটার, ফার্নিচার, ব্যান্ডিং-এর অনুকূলে দোকান সাজানোসহ আনুষঙ্গিক খরচ যোগাতে সহনীয় সুদের ফান্ডিং এর জন্য ফাইনান্সিয়াল হাউস কিংবা ব্যাংকগুলোর সাথে সরকার আলোচনা করবে। তবে প্রাথমিকভাবে ‘নাগরিক সেবা কেন্দ্রে’ উদ্বুদ্ধ এবং বিনিয়োগ সহজ করতে সরকারি জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়নের সরকারি আধা-সরকারি অফিস, পোস্ট অফিস, বিটিসিএল অফিস ইত্যাদিতে কো-ওয়ার্কিং স্পেস তৈরির বিবেচনায় নেবে। তিনি বলেন, সরকার জনসেবামুখী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই নতুন যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এটি একটি নতুন প্রজন্মের সরকারি সেবা প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সব জায়গার মানুষ সহজেই সরকারি অফিসে না এসেই বিভিন্ন সরকারি সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। বাংলাদেশে অসংখ্য নাগরিকের কাছে এখনও ডিজিটাল ডিভাইস নেই, যাদের পক্ষে অনলাইনে সেবা নেওয়া সম্ভব না, তাদের সরাসরি সরকারি অফিসে এসেই সেবা নিতে হয়। নাগরিক সেবার মাধ্যমে তারাও সহজেই নিজ নিজ এলাকা থেকেই সরকারি সেবা নিতে পারবেন। এ উদ্যোগের আওতায় থাকছে : নাগরিক পরিচয়পত্র, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনবিষয়ক আবেদন পরিচয়পত্র সংশোধন ও পুনর্মুদ্রণ ভূমি সংক্রান্ত তথ্য ও আবেদন, সিঙ্গেল ল্যান্ড সার্ভিস গেইটওয়ে নতুন পাসপোর্টের আবেদন, পাসপোর্ট নবায়ন অনলাইন জিডি আয়কর রিটার্ন আবেদন, ভ্যাট চালান জমাদান আবেদন ট্রেড লাইসেন্স ও ট্রেড মার্ক আবেদন বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা ভাতা ও অনুদানের আবেদন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ সকল ইউটিলিটি ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন নবায়ন শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কৃষিসেবা, ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন নবায়ন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল সেবা।