২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে বাস্তবমুখী এবং সময়োপযোগী উল্লেখ করে সরকারকে এটি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বলেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। গতকাল এক বিবৃতিতে এফবিসিসিআই জানায়, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ বাজেট যৌক্তিকভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে ইতিবাচক বলেও অভিহিত করেছে সংগঠনটি। এফবিসিসিআই মনে করে, উচ্চাভিলাষী বাজেট না করে বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়ন এবং প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করায় সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও এটি অর্জনে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বাড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়।
বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের সহায়তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে জোর দেওয়ার বিষয়গুলোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে এফবিসিসিআই। সংগঠনটি বলছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে এই সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে, যাতে প্রকৃত উপকারভোগীরা উপকৃত হন। বাজেটে এসএমই খাতের উন্নয়নে ১৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পরিকল্পনা, ২৫ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ১০ হাজার নারী উদ্যোক্তাকে ঋণ সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সংগঠনটি। তারা বলেছে, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে নিবিড় তদারকি ও কার্যকর মনিটরিং দরকার।
কর কাঠামো ও পুঁজিবাজারসংক্রান্ত যেসব সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলোকেও বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে এফবিসিসিআই। বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার হ্রাস, ব্রোকারেজ হাউজ থেকে উৎসে কর কমানো, এবং আইপিও অংশীদারিত্ব শর্ত পূরণে কর ছাড়ের প্রস্তাবকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনবে বলে তারা মনে করে। যদিও করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। এফবিসিসিআই আরও জানিয়েছে, উৎপাদনশীল শিল্পের ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতির পরিধি বাড়ানো ও আমদানি শুল্ক হ্রাস করায় শিল্প খাত উপকৃত হবে। তবে কিছু খাতে ভ্যাট ও সুনির্দিষ্ট কর বৃদ্ধির কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও তারা সতর্ক করেছে। এছাড়া বাজেট ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর না করে সুলভ সুদে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের পরামর্শ দিয়েছে এফবিসিসিআই। তারা বলছে, ব্যাংক খাত থেকে অতিরিক্ত ঋণ নিলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
সবশেষে, বাজেট ঘিরে সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলে মূল্যায়ন করলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় নজরদারি ও অংশীজনদের মতামত গ্রহণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এফবিসিসিআই।