বিচার সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের লক্ষ্যে দেশব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচিতে যশোরে পথসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ১৯৭১ সালে প্রথম শত্রুমুক্ত এলাকা হিসেবে আমরা যশোরের সেই প্রতিরোধ, সেই দ্রোহের ইতিহাস জানি। আজকে যশোরে আমরা এসেছি আপনাদের সমস্যা, সন্ত্রাস, দখলকার, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলতে। আগামীতে দুর্নীতিবাজ এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে একটি গণআন্দোলন তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা একটি সংস্কার এনেছি। কিন্তু এই সংস্কার প্রক্রিয়া প্রতি পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দুর্নীতিবাজ, দখলদার এবং চাঁদাবাজদের কারণে। এবার আমাদের মাঠে নামতে হবে দুর্নীতিবাজ, দখলদার এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে। আজকে লিখে রাখেন বাংলাদেশে সামনে একটি বড় আন্দোলন তৈরি হতে যাচ্ছে, দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে।
গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা শহরের জজকোর্ট মোড়ে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্যসংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, ডা. শারমিন মিতু, সাকিব শাহরিয়ার, খালেদ সাইফুল্লাহ জুয়েল প্রমুখ।
সভা পরিচালনা করেন পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, দুর্নীতি যারাই করবে যদি এনসিপি’র লোকেরা করে তার বিরুদ্ধেও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামবে। তবে যারা দুর্নীতিবাজ নানা দলের মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছেন তারা সাবধান হয়ে যান হুঁশিয়ার হয়ে যান। আমরা চায় যশোরের মানুষ যশোরেই স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা পাবে। তাদের ঢাকা অথবা খুলনায় যেতে হবে না। ভবদহের সমস্যার সমাধান চায়।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোনো চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ দখলদারকে ভয় পাবেন না। একটি রাজনৈতিক দল তাদের নাকি কোটি কোটি মানুষ। আমাদের কোটি কোটি মানুষ দেখাইয়েন না। প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদের আমলে দেখেছি কার কত মানুষ ছিল? সেই মানুষেরা কত কত আন্দোলন গড়ে তুলে ছিল? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ১০ জন নিয়েও দাঁড়িয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই গণঅভ্যুত্থানে ১০ জন ২০ জন ১০০ জন মানুষ নিয়েও আন্দোলন শুরু করা হয়েছিল। সেখান থেকে হাজারে হাজারে, লাখ লাখ মানুষ, আবাবিল পাখির মতো এসে আমাদের সাথে রাজপথে আন্দোলনে দাঁড়িয়েছিল। অতএব, মানুষের হিসাব আমাদের সাথে দেখাইয়েন না। যদি নৈতিকতার সাথে থাকেন, ইনসাফের সাথে থাকেন তাহলে একজন মানুষ এক লাখ মানুষের সমান।
তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি ইনসাফভিত্তিক রাজনীতি গড়ে তুলতে চায়। আমরা দায় এবং দরদের একটি রাষ্ট্রনীতি গড়ে তুলতে চায়। যেখানে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অধিকার, সকলের হক নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
নির্বাচনকে পিছিয়ে দেয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। আমরা বলেছি, বিচার সংস্কার এবং নির্বাচন আমরা চায়। বিচার সংস্কার ছাড়া নির্বাচন বাংলার জনগণ মেনে নেবে না। যারা বিচার সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের পরিকল্পনা করে তারাই নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ফলে নির্বাচন ভোটাধিকারের পক্ষে সত্যিকার অর্থে লড়াই করে যাচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃত্ব। আমরা স্বাধীনতা এনেছি, আমরা সংস্কার আনব। আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব।
গত ৫৪ বছর ধরে দেশের রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণ করা হয়েছে। যেই দল ক্ষমতায় এসেছে সেই দল দলীয়করণ করেছে উল্লেখ করে এনসিপি প্রধান বলেন, হাসিনার ভাগ্য ভালো তারা ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করতে পেরেছে। অন্যরা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আমাদের এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর দলীয়করণ করতে দেব না। আমরা চায় পুলিশ নিরপেক্ষভাবে জনগণের পক্ষে কাজ করবে। পুলিশ কোনো দলের অনুসারী হবে না। সকল দলের অনুসারীও হবে না। আমরা চায় আমলাতন্ত্র প্রশাসন কোন দলের অনুসারী হবে না। পুলিশ প্রশাসনের প্রমোশন কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা সরকারি দলের নেতার ওপর নির্ভর করবে না। তাদের মেধা যোগ্য অনুযায়ী তাদের প্রমোশন হবে। আমরা চায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলবে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে। বাংলাদেশে গণপ্রতিরক্ষা তৈরি করবে। আমরা চায় না এই সেনাবাহিনীর অফিসার ডিজিএফআইয়ের অফিসার গুমের সাথে জড়িত হবে। সেনাবাহিনীর মতো প্রতিষ্ঠানকে কলঙ্ককরণ করবে। আমরা এই কলঙ্ক দূর করতে চায়। নির্বাচন কমিশন গত ১৬ বছর সবচেয়ে বেশি দলীয়করণ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- এই নির্বাচন কমিশন। যারা তিন তিনটা ভোটকে নস্যাত করেছে। জনগণের ভোটাধিকার নস্যাত করেছে। এই নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই শক্তিশালী হতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ দিতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী, নির্বাচন কমিশন যদি ঠিক না হয়, জনগণের পক্ষে না হয়। তাহলে এই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণভাবে অন্ধকার। কিন্তু এই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃবৃন্দ সেই অন্ধকার আসতে দেবে না দেবে না দেবে না। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যেই প্রতিশ্রুতি আমরা এই দেশের মানুষকে দিয়েছিলাম, ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা’। ইনশাআল্লাহ আমরা সেই বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করব। আমরা ইনসাফভিত্তিক কল্যাণভিত্তিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করব। আমরা দেশের জনগণের পক্ষে বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি এবং পররাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠা করব। সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সংস্কার আলাপ টেবিলে আছে, রাজপথে নামাতে বাধ্য করবেন না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়; কিন্তু তাদের দাদাগিরি আমরা মেনে নেব না।