ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজারে যাওয়া ছিল নীরব প্রতিবাদ : হাসনাত

কক্সবাজারে যাওয়া ছিল নীরব প্রতিবাদ : হাসনাত

জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন, শহিদ ও আহতদের পরিবর্তে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর কথা বা মতামত প্রাধান্য পাওয়ায় সেখানে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন বোধ করেননি বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। সেজন্য ৫ আগস্ট ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, এটি ছিল একটা অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে নিজের ফেসবুক পেজে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব পোস্ট করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এর আগে গত বুধবার জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে (৫ আগস্ট) কক্সবাজার সফরের বিষয়ে হাসনাতসহ এনসিপির পাঁচ নেতাকে দলের পক্ষ থেকে নোটিশ দিয়ে ওই সফরের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের দুই শীর্ষ নেতার কাছে সশরীর উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। নোটিশের জবাবে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় জানতে পারি যে, আমাদের আন্দোলনের আহত এবং নেতৃত্বদানকারী অনেক ভাই-বোনকে এই অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা আমার কাছে শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতা বলেই মনে হয়েছে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যেখানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজনকে, শহিদ এবং আহতদের পরিবর্তে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর কথা এবং মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, সেখানে উপস্থিত থাকার কোনো ইচ্ছা বা প্রয়োজন আমি বোধ করিনি। কাজেই এর পরদিন ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। উদ্দেশ্য ছিল এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে পূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা করা এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে চিন্তা করা। একই সঙ্গে এটি ছিল একটা অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ।

হাসনাত লিখেছেন, ৪ আগস্ট রাতে প্রথমে তিনি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাকে না পেয়ে পরবর্তী সময়ে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে অবহিত করেন যে তিনি তার স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের জন্য ভ্রমণে যাচ্ছেন। যেহেতু নাসীরুদ্দীন সে সময় দলীয় কার্যালয়ে আহ্বায়কের সঙ্গে ছিলেন, তিনি তাকে আহ্বায়ককে বিষয়টি জানাতে অনুরোধ করেন। নাসীরুদ্দীন তাকে জানান যে, তিনি তা করবেন। প্রায় ৩০ মিনিট পর নাসীরুদ্দীন তাকে নিশ্চিত করেন যে, তিনি আহ্বায়ককে বিষয়টি জানিয়েছেন এবং আহ্বায়ক এতে সম্মতি দিয়েছেন। পরে তার সঙ্গে নাসীরুদ্দীন, সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন। বিমানবন্দর থেকে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপের ছবি ও ভিডিও করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা গণমাধ্যমের হাতে তুলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। নোটিশের জবাবে তিনি লিখেছেন, কিছু গণমাধ্যম ও গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে অপরাধপ্রবণ এবং সন্দেহজনক হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এমনকি গুজব ছড়ানো হয়েছে যে, আমরা পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকে যাচ্ছি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করতে। অথচ তিনি তখন বাংলাদেশেই ছিলেন না।...নতুন বাংলাদেশেও গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু গণমাধ্যমের এই পুরোনো অপরাধপ্রবণতা আমাকে একই সঙ্গে অবাক এবং ক্ষুব্ধ করে।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘স্লাট শেমিং’কে (নারীকে হেয় করা) কক্সবাজার সফরের ঘটনার ‘সবচেয়ে দুঃখজনক ও নিন্দনীয়’ দিক বলে উল্লেখ করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই ন্যক্কারজনক আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যতে রাজনীতিতে অংশ নিতে আগ্রহী নারীদের নিরুৎসাহিত করা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরেও গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু গণমাধ্যমের যোগসাজশে একজন নারীর বিরুদ্ধে এমন হীন আক্রমণ কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এনসিপির পক্ষ থেকে এই গোয়েন্দা সংস্থা ও ‘অসৎ গণমাধ্যমের’ বিরুদ্ধে দৃঢ় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি লেখেন, তার পরিবর্তে দল এমন ভাষায় আমাদের বিরুদ্ধে শোকজ (কারণ দর্শানো) প্রকাশ করেছে, যা মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উসকে দিয়েছে। যে কোনো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে শোকজ করতে হয় গঠনতন্ত্র বা আইনের কোনো নির্দিষ্ট ধারা লঙ্ঘনের কারণে। আমাকে দেওয়া শোকজে এমন কিছুর উল্লেখ নেই, কারণ আমি দলের কোনো আইন লঙ্ঘন করিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত