
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘নারীবির্বজিত কমিশন (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) বসে নারীর বিষয় নির্ধারণ করছে। আমি ভীষণভাবে অস্বস্তিতে ভুগছি। সিদ্ধান্ত গ্রহণে এখানে নারীদের সমানভাবে পাইনি।’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, হিসাব কষতে বসে নারীদের জন্য কার্পণ্য করা হয়েছে। নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা আবারও শুরু করার আহ্বান জানান তিনি। উদেষ্টা বলেন, রাজনীতিতে নারীকে আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী অবস্থানে নিতে হবে। নারীদের আরও বেশি যোগ্য করে নির্বাচন প্রক্রিয়ার ভেতরে আনতে হবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর ফার্মগেটে ‘কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ’র মিলনায়তনে ‘নারী প্রার্থীদের জন্য জনতহবিল গঠন বিষয়ে নীতিনির্ধারণী সংলাপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তারা নারীদের বাদ দিয়ে নারীর বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমালোচনাও করেছেন।
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, দেশে নির্বাচন কখনো দুর্নীতিমুক্ত হয় না। নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা কখনো মানা হয় না। জনতহবিল গঠনের ব্যবস্থা নিলে দুর্নীতি কমতে পারে। অর্থের কারণে অনেক যোগ্য প্রার্থী সামনে আসতে পারেন না। জনতহবিল মেয়েদের এগিয়ে নিয়ে আসতে ভূমিকা পালন করতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ও নারীর মনোনয়ন নিয়ে যেসব সিদ্ধান্ত এসেছে, সেগুলো নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন নারী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনসংখ্যা বাড়ানো ও সেসব আসনে সরাসরি নির্বাচন এবং সাধারণ আসনে বেশিসংখ্যক নারীর মনোনয়নের দাবি পূরণ হয়নি। দলগুলো এবারের নির্বাচনের জন্য সাধারণ আসনে ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে ধাপে ধাপে তা ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বলেছে। আর সংরক্ষিত আসনের ক্ষেত্রে আগের মতো ৫০টি আসন এবং সেসব আসনে দলীয় সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ব্যবস্থা বহাল থাকছে। আলোচনায় নারীদের বাদ দিয়েই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নারী প্রার্থীদের জন্য জনতহবিল গঠন বিষয়ে অধ্যাদেশের খসড়া সংলাপে তুলে ধরেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের প্রিন্সিপাল পরিচালক মো. আবদুল আলিম। খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়, নারী প্রার্থীদের জন্য (দলীয় ও স্বতন্ত্র) জনতহবিল গঠন করা হবে। এ তহবিল গঠন করার জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুসারে প্রতিবছর প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করবে, যা জাতীয় বাজেটের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। নির্বাচন কমিশনের শর্ত ভঙ্গ করলে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকলে বা নির্বাচন বর্জন করলে প্রার্থীর জন্য বরাদ্দ করা তহবিল সম্পূর্ণ বা আংশিক বাতিল করার ক্ষমতা কমিশনের থাকবে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে, ২০২০ সালের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিটি পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল। দলগুলো তা পূরণ করতে না পারায় ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। মনে হচ্ছে, ২০৩০-এও তা পূরণ করা যাবে না। তিনি বলেন, দেশে নারী জনগোষ্ঠী বেশি হলেও নারী ভোটার কম। এই পার্থক্য কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন। এ বছরের ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকায় পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার ৩০ লাখ কম ছিল। বাদ পড়া ভোটার পাওয়া গিয়েছিল ৪৪ লাখ।