
অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ফিলিস্তিনি গ্রাম আল-মুগাইর থেকে প্রায় তিন হাজার জলপাই গাছ উপড়ে ফেলেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এরফলে স্থানীয় বসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, পূর্বপুরুষের জমি থেকে তাদের উচ্ছেদ করার একটি বৃহত্তর অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েল এ ধরনের কাজ করেছে। গ্রাম পরিষদের উপ-প্রধান মারজুক আবু নাইমের মতে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ০.২৭ বর্গ কিলোমিটার (০.১ বর্গ মাইল) কৃষিজমি পরিষ্কার করার নির্দেশ জারি করেছে। তাদের দাবি, এই গাছগুলো নিকটবর্তী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের রাস্তার জন্য ‘নিরাপত্তা হুমকি’। তিনি ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফাকে বলেন, গতকাল শনিবার ভোরে সৈন্যরা ৩০টিরও বেশি বাড়িতে হামলা চালিয়ে সম্পত্তি এবং যানবাহনের ক্ষতি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ধ্বংসযজ্ঞের ফলে প্রায় ৪ হাজার লোকের গ্রাম আল-মুগাইরের পরিবারগুলো বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। জলপাই চাষ এবং গবাদি পশু পালনই তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। ফিলিস্তিনি গবেষক হামজা জুবাইদাত বলেছেন, ‘এই অঞ্চলটি রামাল্লাহর সবচেয়ে উর্বর অংশগুলোর মধ্যে একটি। গাছ উপড়ে ফেলে, জলের ঝর্ণা জব্দ করে এবং কৃষকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে ইসরায়েল খাদ্য ও পানির নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়িয়ে তুলছে।’ অধিকৃত পশ্চিম তীরে জলপাই গাছ অপসারণ নতুন কিছু নয়। কয়েক দশক ধরে, ইসরায়েল কৃষি জমিকে লক্ষ্য করে আসছে।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ জমি দখল এবং ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেওয়ার একটি পদ্ধতিগত প্রচেষ্টার অংশ। জুবাইদাত উল্লেখ করেন, ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েল গ্রামীণ এলাকা এবং শহর উভয় জায়গা থেকে উচ্ছেদের একটি ‘ধারাবাহিক প্রক্রিয়া’ অব্যাহত রেখেছে। তিনি আরও বলেন, ‘এটি নতুন নয়; কয়েক দশক ধরে একই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
পশ্চিমতীরে সহিংসতা বৃদ্ধিতে গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের মধ্যে পশ্চিম তীরে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) অনুসারে, জানুয়ারি থেকে জুলাই ২০২৪ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের ওপর ২ হাজার ৩৭০টিরও বেশি বসতি স্থাপনকারী আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। শুধুমাত্র রামাল্লাহ অঞ্চলে ৫৮৫টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। তারপরেই রয়েছে নাবলুস, সেখানে ৪৭৯টি আক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে। ওসিএইচএ আরও জানিয়েছে, একই সময়ে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী এবং বসতি স্থাপনকারীদের হাতে কমপক্ষে ৬৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১২৯টি শিশু। এছাড়া হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ফিলিস্তিনিদের জন্য, জলপাই গাছ অর্থনৈতিক নিরাপত্তার চেয়েও বেশি কিছুর প্রতিনিধিত্ব করে। তারা ঐতিহ্য, পরিচয় এবং ভূমির সঙ্গে সংযোগের প্রতীক।