
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে পার্কিংয়ের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে নেমেছেন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সচালক ও মালিকেরা। গতকাল বুধবার সকাল ছয়টা থেকে বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের আওতাধীন ১০৮টি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে রোগীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
সম্প্রতি শরীয়তপুরে একটি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা যাওয়ার পথে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় একটি অ্যাম্বুলেন্স চালক চক্রের বিরুদ্ধে। পরে ওই অ্যাম্বুলেন্সে থাকা অসুস্থ এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। এর জের ধরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দক্ষিণ পাশে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড বন্ধ করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে নামেন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও মালিকেরা। তারা জানান, হাসপাতালের ভেতরে স্ট্যান্ডটি পুনরায় চালুর জন্য দুই দিন আগে তারা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও হাসপাতাল পরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও দাবি আদায় না হওয়ায় তাঁরা ধর্মঘটে যান। দ্রুত দাবি পূরণ না হলে গোটা বরিশাল বিভাগজুড়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন মালিক ও চালকেরা।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে সাতটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক আছেন মাত্র তিনজন। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা। উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের ঢাকায় নিতে বললেও অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে তা পারছেন না স্বজনেরা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভোলার এক রোগীর স্বজন রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি অ্যাম্বুলেন্স নেই, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ধর্মঘটে। কিন্তু চিকিৎসক আমার রোগীকে ঢাকায় রেফার করেছেন। এখন কীভাবে রোগী নেব, বুঝতে পারছি না।’
অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির নেতা আজিজুর রহমান বলেন, আগের পরিচালক জরুরি বিভাগের সামনে পার্কিংয়ের জন্য জায়গা দিয়েছিলেন। মালিকেরা প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেটিকে পার্কিং-উপযোগীও করেছিলেন। দীর্ঘদিন সুশৃঙ্খলভাবে অ্যাম্বুলেন্স রাখা হলেও বর্তমান পরিচালক সেখানে পার্কিং নিষিদ্ধ করেন। এতে চালকেরা বিপাকে পড়েছেন।
সমিতির সাবেক সভাপতি ফিরোজ আলম বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগীদের মূল ভরসা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স। তাই আমরা আগের মতো ভেতরে নির্ধারিত পার্কিংয়ের দাবি জানাচ্ছি।’
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয় রোগী ও স্বজনদের। ঢাকা থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্সে বরিশাল থেকে রোগী নিলে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা। অথচ সিন্ডিকেটের বাধায় সেসব অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতে পারে না। রোগী বহনে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে হলেও সিন্ডিকেটকে দিতে হতো তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। না দিলে হাসপাতালের সিন্ডিকেটের কাছ থেকেই ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে বাধ্য হতেন রোগীর স্বজনেরা।
তবে বেসরকারি একটি অ্যাম্বুলেন্সের মালিক মো. সুজন বলেন, ‘আমরা কোনো রোগীকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করি না। দেশের কোনো এলাকায় বাইরের অ্যাম্বুলেন্স রোগী পরিবহন করতে পারে না, আমরাও পারি না। এই নিয়ম সারা দেশেই চালু রয়েছে। আমাদের স্ট্যান্ড না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট অব্যাহত রাখব।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের উপপরিচালক (প্রশাসন) এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ধর্মঘটের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’