
ফিলিস্তিনের ব্যাংককর্মী শাদি সালামা আল-রাইয়েস টানা এক দশক ধরে ৯৩ হাজার ডলারের (প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ ৬৭ হাজার টাকা) একটি ফ্ল্যাট কেনার ঋণ পরিশোধ করে আসছিলেন। গাজা উপত্যকার গাজা নগরীর অভিজাত এক এলাকায় সুউচ্চ আধুনিক ভবনের ওই ফ্ল্যাটেই ছিল তার পরিবারের স্বপ্নের বসতি। কিন্তু এখন তিনি নিঃস্ব। কারণ, ইসরায়েলের এক ভয়াবহ হামলার পর তাকে পরিবারসহ পালিয়ে বাঁচতে হয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় তাদের আবাসিক ভবনটি মুহূর্তেই ধসে পড়ে।
৫ সেপ্টেম্বর ১৫ তলা মুশতাহা টাওয়ারে ওই হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে গাজায় নতুন ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে ইসরায়েলের সেনারা। গাজার বৃহত্তম ও প্রাচীনতম শহরটিতে পূর্ণমাত্রায় স্থল অভিযান শুরুর আগমুহূর্তে সেখানকার উচ্চ ভবনগুলো একের পর এক ধ্বংস করা হয়েছে। এখন ইসরায়েলি বাহিনী গাজা নগরীর ঘনবসতিপূর্ণ কেন্দ্রীয় শহরের দিকে এগোচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, গত দুই সপ্তাহে তারা গাজা নগরীর অন্তত ২০টি সুউচ্চ ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, এসব ভবন হামাস ব্যবহার করত। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এখন পর্যন্ত ৫০টি ‘সন্ত্রাসী টাওয়ার’ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গাজা নগরীতে শুরু হওয়া ইসরায়েলের সর্বাত্মক অভিযানে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। একই সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী নগরীর জায়তুন, তুফফাহ, শুজাইয়া এবং শেখ আল-রিদওয়ানসহ একাধিক এলাকায় পুরো মহল্লা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এসব এলাকার অন্তত ১০ জন বাসিন্দা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শেখ আল-রিদওয়ান এলাকায় আগস্ট থেকে যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা স্যাটেলাইটে ধারণা করা ছবিতেও স্পষ্ট ধরা পড়েছে। আল-রাইয়েসের আশঙ্কা, গাজা নগরীর বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতেই এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ও (ওএইচসিএইচআর) একই মত দিয়েছে। সংস্থাটির মুখপাত্র থামিম আল-খিতান এক বিবৃতিতে বলেছেন, স্থায়ী বাসিন্দাদের এভাবে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আসলে জাতিগত নিধনের (এথনিক ক্লিনজিং) শামিল।
গত বুধবার আল-রাইয়েস বলেন, ‘গাজা নগরী ছেড়ে চলে যেতে হবে, তা কখনও ভাবিনি। কিন্তু বিস্ফোরণ থামছেই না। আমি সন্তানদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না। তাই যা পারি তা নিয়ে দক্ষিণ দিকে যাচ্ছি।’ তবে স্বগতোক্তির সুরে তিনি বলেন, ‘আমি কখনও পুরোপুরি গাজা উপত্যকা ছেড়ে যাব না।’
মুশতাহা টাওয়ারের বাসিন্দা শাদি সালামা আল-রাইয়েস ইসরায়েলের হামলার কয়েক মিনিট আগে ফ্ল্যাট ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তিনি পরিবার নিয়ে গাজা উপত্যকার দক্ষিণের শহর দেইর আল-বালাহে চলে এসেছেন।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ গত মে মাসে বলেছিলেন, গাজার বেশিরভাগ এলাকা অচিরেই ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করা হবে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের সীমান্তঘেঁষা মিসরের কাছে একটি সরু ভূখণ্ডে ঠেসে রাখা হবে। চলমান অভিযানে গাজা নগরীর সব বেসামরিক বাসিন্দাকে শহর ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েল। গত সপ্তাহে তারা উত্তর গাজার একটি ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে গাজা নগরীতে খাদ্যের অপ্রতুল সরবরাহ আরও কমে এসেছে।
ইসরায়েল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাদাভ শোশানি এক প্রশ্নের জবাবে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘গাজা সম্পূর্ণ ধ্বংস করার কোনো কৌশল তাদের নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘হামাসকে ধ্বংস করা এবং বন্দীদের উদ্ধার করাই তাদের লক্ষ্য।’