ঢাকা ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাজেট ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তনের আভাস

বাজেট ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তনের আভাস

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রবাসী ও রপ্তানির আয়ের প্রবাহ ভালো থাকলেও ডলার সংকট পুরোপুরি কাটেনি। সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতির চাকায় ধীরগতির হাওয়া বয়ে চলছে। এমন বাস্তবতা সামনে রেখেই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে, এবার গতানুগতিক ধারার বাইরে বাজেট ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

জানা গেছে, দেশীয় আর্থিক খাতের চেয়ে বিদেশি ঋণের দিকে নজর রেখে অর্থ সংগ্রহ করবে সরকার। জাতীয় সংসদ না থাকায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করা হতে পারে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে। নতুন বাজেট প্রণয়নে অর্থ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কাজ শুরু করেছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট বক্তব্যেও তার উল্লেখ থাকবে। এ ছাড়া অর্থ উপদেষ্টা সংস্কার কমিশন ও কমিটিগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের ইস্যুগুলো তুলে ধরতে পারেন। সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৫ বছরে দেশের আর্থিক খাত পুরোপুরি ধ্বংস করে গেছে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলেও সরকারের আয়ের অবস্থা ভালো নয়। অথচ ব্যয়ের চাপ ঠিকই আছে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে অর্থবছরে নিত্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিতে হয়েছে। দেশে বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকলেও তা বাজেটীয় লক্ষ্যে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। এ জন্য বাজেটে কিছু নীতি সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। আর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হলেও গত মাসে তা সংশোধন করে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। যদিও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রাক্কলন অনুযায়ী এই হার ৫ শতাংশ অর্জন করাও সম্ভব হবে না। গত রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বাজেট ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসছে। উন্নয়ন বাজেট (এডিপি) সংশোধনের ক্ষেত্রে এবার বৈদেশিক অর্থায়নের পরিমাণ দেশীয় অর্থায়নের তুলনায় বেশি থাকবে। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ৬০ শতাংশ হবে, আর দেশীয় অর্থায়ন থাকবে ৪০ শতাংশ। রাজস্ব আয় না বাড়ার কারণে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে রাজস্ব বৃদ্ধির পরিকল্পনাও রয়েছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান, চীনা প্রকল্পের ঠিকাদারদের অনেকেই রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গিয়েছিলেন, সেই অবস্থার পরিবর্তনে সরকার কাজ করছে। মোংলা বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্পে চীনের অর্থায়ন থাকলেও সেখানে কোনো অনিয়ম বা দুর্বলতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। তদন্তে কোনো অসঙ্গতি না পাওয়ায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্প বর্তমান সরকারের নয়, বরং এটি আগের সরকারের সময় শুরু হয়েছিল।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, চলমান প্রকল্পগুলো বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিবর্তে মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হবে।

যেমন- মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের ভবন নির্মাণ করা হলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পরিচালনা বা শিক্ষাদানের জন্য দক্ষ শিক্ষক নেই। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ৮০ শতাংশ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। তাই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।

ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, আগের সরকারের নেয়া মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ চলতি অর্থবছর থেকেই বাড়ছে এবং আগামী অর্থবছরগুলোতে আসল পরিশোধের বোঝাও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। তবুও তিনি মনে করেন, বৈদেশিক ঋণ দেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ভিয়েতনামও প্রচুর বৈদেশিক ঋণ নিয়েছিল, কিন্তু তারা কোনো সমস্যায় পড়েনি। বৈদেশিক ঋণ যদি সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ তৈরি করতে পারে, তবে তা দেশের জন্য ইতিবাচক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত