ঢাকা ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

ড্রাগনের বাণিজ্যিক চাষ বাড়ছে

ড্রাগনের বাণিজ্যিক চাষ বাড়ছে

বগুড়াতেও ড্রাগন ফল চাষ নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। ছোট-বড় মিলে প্রায় ৭০টির মতো বাগান রয়েছে এই জেলায়। এর মধ্যে বাণিজ্যিক বাগানের সংখ্যা ১৫টি। যেখান থেকে ফল সংগ্রহ করে বাজারজাত করছে চাষিরা। ড্রাগন ফল চাষ বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে একটি নতুন সম্ভাবনার নাম। এটি সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে ড্রাগন গাছ খাপ খেয়ে গেছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ড্রাগন ফলের নতুন জাত ‘বারি ড্রাগন ফল-১’। এ জাতটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে জনপ্রিয় ফল। এ ফলের আকার বড়। পাকলে খোসার রং লাল হয়। শাঁস গাঢ় গোলাপী রঙের এবং রসালো হয়। ফলের বীজ ছোট ছোট কালো জিরার মতো। একটি ফলের ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। জমি প্রস্তুতিতে জৈব সার এবং সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। ড্রাগন মূলত মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার প্রসিদ্ধ ফল। বিশেষ করে, মেক্সিকো ও ফ্লোরিডাতে এর ফলন হতো। পরবর্তীকালে, পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ; তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া এবং সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে এর চাষ শুরু হয়। এছাড়া, ইসরায়েল, উত্তর অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ চীনেও ড্রাগন পাওয়া যায়। এটি একটি ক্যাকটাস প্রজাতির গাছ। এই গাছ সাধারণত দেড় থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বগুড়া হর্টিকালচার সেন্টারের তথ্যমতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সমন্বিত উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ড্রাগন চাষ সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নেয় বগুড়া হর্টিকালচার সেন্টার। কৃষকদের মধ্যে বিদেশি এই ফলের প্রদর্শনী করা হয়। সে সময় মাত্র দেড় বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ হয়। কিন্তু বর্তমানে জেলায় প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে। ছোট-বড় মিলে প্রায় ৭০টি বাগানে ড্রাগনের খুঁটি রয়েছে। ড্রাগন ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ। জমিতে লাগানোর পর এর পরিচর্যা খুব বেশি করতে হয় না এবং পোকামাকড়ও অনেক কম। এতে পানিও কম লাগে। বগুড়ার ১২ উপজেলার মধ্যে বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শেরপুর, ধুনট, গাবতলী, সারিয়াকান্দি, কাহালু উপজেলার চাষিরা ড্রাগন চাষে ঝুঁকছে বেশি। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ফুলদীঘি এলাকার ড্রাগন চাষী বেসরকারি একটি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাছিব। তিনি জানায়, ব্যাংকে চাকরি করা অবস্থাতেই তিনি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের তাড়না থেকেই তার এই স্বপ্ন। সেটি বাস্তবে রূপ দিতে তিনি বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে গবেষণার এক পর্যায়ে উচ্চমূল্যের ফল ড্রাগন চাষ সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর ড্রাগন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে ৩ বছর আগে ১ বিঘা ৬ শতাংশ জমিতে ড্রাগনের ২০০ খুঁটি রোপণ করেন। রোপণের এক বছর পর থেকে ফলন পেতে শুরু করেন। বর্তমানে ড্রাগন চাষে বিনিয়োগ টাকা উঠানোর পর লাভের মুখ দেখতে পেয়ে নিজেকে একজন সফল ড্রাগন চাষি হিসেবে দাবি করছেন। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সুখানপুকুর এলাকার ড্রাগন চাষি হাফেজ ইঞ্জিনিয়ার মাসনবী বলেন, ‘৩ বছর আগে এক বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করি। এরপর ড্রাগন চাষের জমি পর্যায়ক্রমে আরো আড়াই বিঘা বৃদ্ধি করি। ১ বিঘা জমি থেকে গত তিন বছরে সাড়ে ১৩ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হয়েছে। ড্রাগনের জন্য সাড়ে ৩ বিঘা জমি তৈরি করতে যে টাকা খরচ হয়েছিলো চলতি বছর সেই টাকা ফল বিক্রি করেই উঠিয়ে নিয়েছি। আগামী বছর যা উৎপাদন হবে সেটি হবে পুরোটাই লাভ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত