ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ

চট্টগ্রামে বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে গেল রমজানে পেঁয়াজ নিয়ে সন্তুষ্টি ছিল নগরবাসী। রোজায় বিভিন্ন রান্নার পদে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার্য উপকরণ ছিল এই পেঁয়াজ। কারণ তখন দেশি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম ছিল ২৮-৩৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ছিল ৬০-৭০ টাকা। কিন্তু রমজান শেষে ঈদের পর থেকে পেঁয়াজের বাজারের চিত্র পাল্টাতে শুরু করে। বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। বলা চলে দেশের বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই চট্টগ্রামে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ আসা বন্ধ রয়েছে। দেশের কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের মূল্য পায়, সে কারণে পেঁয়াজের আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে বর্তমানে বাজার দেশীয় পেঁয়াজে সয়লাব রয়েছে। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লেও মজুদদারির কারণে দাম বাড়ছে বলছেন নগরীর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তদাররা। গতকাল চাক্তাই খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মেহেরপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়। এছাড়া দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকায়। পেঁয়াজের আড়তদাররা বলছেন, পেঁয়াজের বাজার চাহিদা ও যোগানের উপর নির্ভর। চাক্তাই খাতুনগঞ্জে গুটিকয়েক ব্যক্তি পেঁয়াজ আমদানি করেন। বাকিরা কমিশনের ভিত্তিতে বিক্রি করেন। অর্থাৎ পেঁয়াজ আমদানিকারক যে দাম নির্ধারণ করে দেন, সেই দামে বিক্রি করেন। এর বিনিময়ে কেজিপ্রতি তারা নির্ধারিত একটি কমিশন পেয়ে থাকেন। তাই আড়তদারদের পক্ষে দাম উঠানামা করার কোনো সুযোগ নেই। আড়তদারদের পক্ষে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের দেশে পেঁয়াজের দরবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের লোকজন আড়তে অভিযান পরিচালনা করেন। এতে আতঙ্ক তৈরি হয়। অথচ আড়তদাররা পেঁয়াজ আমদানি করেন না। জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে। খাতুনগঞ্জের মো. সোবহান নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ঈদের পর থেকে পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। বর্তমানে দেশীয় পেঁয়াজ চাষিদের সুরক্ষার জন্য ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার। তবে এখনো কিছু কিছু ব্যবসায়ীর কাছে ভারতীয় অবিক্রিত পেঁয়াজ রয়েছে। আমাদের জানা মতে-এ বছর পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। তাই সামনে সরবরাহ আরও বাড়বে। তখন দাম কমে যাবে। মধ্যম চাক্তাইয়ের কয়েকজন পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, পেঁয়াজের বাজার বাড়ার পেঁছনে মূল কারণটাই হচ্ছে- একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীর মজুদদারি। তখন কৃষকের কাছ থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনে বেশি দামে বিক্রির জন্য মজুদ করে রাখছে। তারপর ধীরে ধীরে সেগুলো বাজারে ছাড়ছে। এ বছর পেঁয়াজে ভালো ফলন হয়েছে। সে হিসেবে পেঁয়াজের দাম কমার কথা; কিন্তু এখন উল্টো দাম বাড়ছে। যা অস্বাভাবিক। এমতাবস্থায় বাজার তদারকি জরুরি। অন্যথায় পেঁয়াজের দাম ক্রেতা-সাধারণের হাতের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত