ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জমে উঠেছে পশুর হাট

* দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া * দুই সিটিতে যত হাট
জমে উঠেছে পশুর হাট

একদিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদকে কেন্দ্র করে পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে। হাটে ক্রেতাদের সমাগম বাড়ায় পশু বিক্রি বেড়েছে। জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোরবানির পশুর হাট বসেছে ২১টি। এরইমধ্যে ঢাকার মতো সারা দেশের হাটগুলো পশুতে অনেকটা পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বেচাকেনাও শুরু হয়েছে। দাম নিয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন দাম কিছুটা বেশি আবার কেউ কেউ বলছেন দাম মোটামুটি ঠিকই আছে।

কোরবানির পশুর হাটগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশু এসেছে রাজধানী ঢাকায়। ক্রেতারাও দেখতে আসছেন। অনেকে কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ দেখে যাচ্ছেন। অনেকের ধারণা এবার শেষের দিকে কোরবানির পশুর দাম কমবে। তাই আজ বৃহস্পতিবার অথবা কাল শুক্রবার অনেকে কোরবানির পশু কিনবেন। রাজধানীর মিরপুর থেকে গাবতলী হাটে গরু দেখতে এসেছিলেন আব্দুর রাফি রনো। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য গরু কিনতে এই হাটে এসেছি। কয়েকটি গরু দেখেছি, দামও শুনেছি। কিছুটা দাম বেশি মনে হয়। আর একটু দেখব। যদি দামে পছন্দ হয় তাহলে আজ নিব না হলে কাল আবার আসব।

মতিঝিলের আলমগীর হোসেন গাবতলী হাট থেকে একটি গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, আমি দেশি গরু কিনতেই এসেছি। একটা গরু পছন্দ হয়েছে, বাজেটের মধ্যে। এ কারণে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছি।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে গরু নিয়ে আসা এক বিক্রেতা বলেন, ‘তিনি ১৪টি গরু নিয়ে এসেছেন। এরমধ্যে দুটি গরু বিক্রি করেছেন। তিনি আরও বলেন, নানা কারণে এ বছর বেপারিরা গরু কিনছে কম। এইবার ভারত থেকে গরু আসবে না বলে শুনেছি। এইডা নিয়া বেপারিরা একটু টেনশনে আছে। অনেকে গরু কিনে নাই, যে গতবার ১০টা কিনছে, হে এইবার পাঁচটাও কিনে নাই।’ এক হাটের ইজারাদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, হাটে প্রচুর কোরবানির পশু এসেছে। বেচাকেনাও শুরু হয়েছে। তবে মূল বিক্রি শুরু হবে কাল (আজ) এবং পরশু (কাল)।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে একটি বড় আকারের গরু নিয়ে এসেছেন উজ্জল হোসেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় কালো, ধূসর রঙের গরুটির দাম হাঁকছেন ৩০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, পাকিস্তানি শাহীওয়াল জাতের এই গরুর ওজন ‘অনেক’। দেখতেও ভালো, তাই ৩০ লাখ টাকা দাম চেয়েছেন তিনি, তবে এখনও ক্রেতা পাননি। লোকজন দেখছে, আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। দুয়েকজন পছন্দও করেছে। একজন বলেছেন, কাল আবার আসবেন। আসলে ঈদের এখনও কয়েকদিন বাকি। এজন্য কাস্টমাররা ঘুরেফিরে দেখে, পরে নিজেদের পছন্দমতো গরু কিনে নিয়ে যান।

রাজধানীর কমলাপুর হাটে প্রচুর পরিমাণে গরুর দেখা পাওয়া গেছে। তবে, এ হাটে বড় গরুর তুলনায় ছোটো গরুর সংখ্যাই বেশি চোখে পড়েছে। হাটের নির্ধারিত স্থান পার করে মূল সড়কেও বসেছে হাট। দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৮৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। পাইকারদের দাবি, হাটে গরু থাকলেও খুব একটা ক্রেতা নেই। অপরদিকে ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি দাম চাচ্ছেন পাইকাররা।

হাট ইজারাদাররা জানান, এবার হাটগুলোতে ভারতীয় গরু বা মহিষের আমদানি নেই। সীমান্ত দিয়ে গরু আসা বন্ধ থাকায় দেশীয় গরুর কদর বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকার খামার ও গৃহস্থের পালিত গরুই এখন হাটের প্রধান আকর্ষণ। তারা আরও জানান, হাটে নির্ধারিত নিয়মে টোল আদায় হচ্ছে, তবে আগের মতো অতিরিক্ত ভিড় বা চাপ এখনও পড়েনি। দুই সিটিতে যত হাট : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবার ১৩টি জায়গায় কোরবানির পশুর হাট ইজারা দিয়েছে। এরমধ্যে গাবতলীতে স্থায়ী একটি হাট, বাকি অস্থায়ী হাটের মধ্যে ৯টির ইজারা প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। তিনটি হাটের ইজারা প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে উত্তর সিটি কর্পোরেশন। উত্তর সিটির হাটগুলো হলো- গাবতলী পশুর হাট। ভাটারা সুতিভোলা খাল সংলগ্ন খালি জায়গা। উত্তরা দিয়াবাড়ি ১৬ এবং ১৮ নম্বর সেকটরের পাশে বউবাজার এলাকার খালি জায়গা। মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা। মোহাম্মদপুর বছিলা ৪০ ফুট সড়কের পাশের খালি জায়গা। ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টর রানাভোলা স্লুইস গেট পর্যন্ত খালি জায়গা। কাঁচকুড়া বাজারের পাশে রহমান নগর আবাসিক এলাকার খালি জায়গা। খিলক্ষেত বাজারের পাশে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচের খালি জায়গা। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের খালি জায়গা। পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের মস্তুল চেকপোস্টের পাশে খালি জায়গা। মেরুল কাঁচাবাজার সংলগ্ন খালি জায়গা। মালিবাগ পূর্ব হাজীপাড়া ইকরা মাদ্রাসার পাশের খালি জায়গা। মিরপুর কালশী বালুর মাঠের খালি জায়গা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন-ডিএসসিসি এলাকায় প্রতি বছর ১১টি কোরবানির পশুর হাট বসে। এরমধ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের আফতাবনগর প্রকল্পের হাট এবং মেরাদিয়া বাজার হাটের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। দক্ষিণ সিটির যেখানে বসছে পশুর হাট- উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গা। পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পশ্চিমপাশে নদীর পাড়ের খালি জায়গা। দনিয়া কলেজের পূর্বপাশে এবং ছনটেক মহিলা মাদ্রাসার পাশের খালি জায়গা। সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পাশের খালি জায়গা ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল। রহমতগঞ্জ ক্লাবের খালি জায়গা। হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট ও লেদার টেকনোলজির পূর্ব পাশের খালি জায়গা। ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের পাশের খালি জায়গা। আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের উত্তর পাশের খালি জায়গা।

এদিকে, কোরবানির পশু নির্দিষ্ট স্থানে জবাই করা এবং ১২ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির সব বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। বাপার দাবিগুলো হচ্ছে- যত্রতত্র পশুর হাট বসানো সম্পূর্ণ বন্ধ ও নির্ধারিত স্থানে পশু বেচা-কেনা নিশ্চিত করতে হবে, পশুর হাটের প্রতিদিনের বর্জ্য দিন শেষে নিয়মিত ও সম্পূর্ণ অপসারণ করতে হবে, এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত স্থানে কোরবানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, কোরবানির পর ১২ ঘণ্টার মধ্যে সব বর্জ্য অপসারণ করতে হবে, সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক, জনবল, যানবাহনসহ সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; পাড়া-মহল্লাভিত্তিক নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি ও নিয়মিত পশু জবাইয়ের স্থায়ী কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, খোলা জায়গা, আশপাশের নদী, খাল, ড্রেন বা রাস্তায় বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে এবং জরুরি যোগাযোগ সেন্টার স্থাপন করে হটলাইন নম্বর চালু করার মাধ্যমে নাগরিকদের অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, কোরবানির জন্য দেশে পর্যাপ্ত পশু মজুদ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশের গরুর কোনো প্রয়োজন নেই। সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে চোরাইপথে যেন প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের গরু ঢুকতে না পারে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কড়া নজরদারি রাখছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠের পশুরহাট পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, সারা দেশের হাটগুলোতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন। গরু মোটাতাজাকরণ থেকে ব্যবসায়ীদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে। রাজধানীর পশুর হাটগুলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ফরিদা আখতার আরও বলেন, কোরবানি বলতে আমরা গরু-ছাগল জবাই বুঝি। কিন্তু এর গভীরে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের ঘটনা রয়েছে। কোরবানির ঈদে ত্যাগের মহিমা যেন আমরা না ভুলি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত