জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাধারণ সভায় দলীয় গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এনসিপিতে দলীয় প্রধান দুই পদে (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) দুইবারে বেশি কেউ আসতে পারবেন না। গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
এসময় তিনি দলের ৬ষ্ঠ সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্র বিষয়ক গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ জানান। সেগুলো হলো- ১. জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সারাদেশের কাউন্সিল সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। একজন সদস্য জীবনে সর্বোচ্চ দুইবার সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন এবং সর্বোচ্চ দুইবার সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। ন২. সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ‘রাজনৈতিক পরিষদ’-এর নিকট দায়বদ্ধ থাকবেন। ৩. জাতীয় নাগরিক পার্টির একটি রাজনৈতিক পরিষদ থাকবে। রাজনৈতিক পরিষদ ন্যাশনাল কাউন্সিলের ভোটে নির্বাচিত হবে। রাজনৈতিক পরিষদ সর্বনিম্ন ১১ জন থেকে সর্বোচ্চ ১৫ সদস্য বিশিষ্ট হবে। ১১ জন সদস্য ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল’ এর ভোটে নির্বাচিত হবেন; এর মধ্যে ন্যূনতম তিনজন নারী সদস্য থাকতে হবে।পদাধিকারবলে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রাজনৈতিক পর্ষদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। এই পর্ষদের বাকি দুইজন সদস্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে মনোনীত হবেন। ৪. জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির একটি ন্যাশনাল কাউন্সিল থাকবে। এই ফোরাম রাজনৈতিক পরিষদ নির্বাচন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন এবং জরুরি সময়ে কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব পালন করবেন। ন্যাশনাল কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটি, অঙ্গসংগঠনের নির্বাহী কমিটি, জেলা পদমর্যাদার কমিটি থেকে ৫ জন এবং উপজেলা পদমর্যাদার কমিটি থেকে ২ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে।
৫. জাতীয় নাগরিক পার্টির একটি কেন্দ্রীয় কমিটি থাকবে। যা দলের সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমন্ডলী, অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাধারণ সদস্য এবং ক্ষেত্রবিশেষ জেলা সভাপতির সমন্বয়ে গঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ হবে তিন বছর। মেয়াদের শেষ ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। ৬. দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন দাখিল করার ব্যাপারে আজকের (শুক্রবার) সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৭. দলের নিবন্ধন সংক্রান্ত ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সামগ্রিক যোগাযোগের জন্য দলের পক্ষ থেকে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসাকে আজকের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৮. আজকের সভায় উপরোক্ত সংশোধনীসমূহসহ জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির ‘খসড়া গঠনতন্ত্র’ পাস হয়। গৃহীত খসড়া গঠনতন্ত্রে আগামী কাউন্সিলের আগে প্রয়োজন সাপেক্ষে বর্তমান প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটি সংশোধনী আনতে পারবে।
আগামীকাল নিবন্ধনের আবেদন জমা দেবে এনসিপি : জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন জমা দিতে যাচ্ছে । সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল রোববার দলের পক্ষ থেকে আবেদন জমা দেওয়া হতে পারে। নিবন্ধন পেতে দলের পক্ষ থেকে ইসি নির্ধারিত বেশকিছু শর্ত ইতোমধ্যে পূরণ করা হয়েছে।দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ইসিতে নিবন্ধনের জন্য কোনো দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, কেন্দ্রসহ অনূর্ধ্ব এক-তৃতীয়াংশ জেলা ও ন্যূনতম ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানায় অফিস থাকতে হয়। এছাড়া দলের গঠনতন্ত্রে কিছু বিষয় উল্লেখ থাকতে হয়।এনসিপি ইতোমধ্যে দেশের ৩৩টি জেলা ও ১২৭টি উপজেলায় সমন্বয় কমিটি গঠনে সক্ষম হয়েছে। তবে দলের গঠনতন্ত্র এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, আমরা রোববারের মধ্যেই নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেব। ইতোমধ্যে খসড়া গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত হয়েছে। অনুমোদনের জন্য এটি শুক্রবারের সাধারণ সভায় উপস্থাপন করা হবে।
এনসিপির প্রস্তাবিত খসড়া গঠনতন্ত্রে দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে কাউকে তিন মেয়াদের বেশি না রাখা, তিন বছর পরপর কাউন্সিল আয়োজনসহ বেশকিছু বিষয় রাখা হয়েছে। নতুন দলের ক্ষেত্রে ইসির নিবন্ধনের শর্ত হল, দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে। কার্যকর কমিটি থাকতে হবে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায়। সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা কিংবা মেট্রোপলিটন থানার কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনের নথিও দেখাতে হবে। দলীয় প্যাডে দরখাস্তের সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনি ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো ও দলীয় পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যের নামের তালিকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সর্বশেষ স্থিতি জমা দিতে হবে। নিবন্ধন আবেদন করার সময় শেষ হচ্ছে রোববার। এ পর্যন্ত শ’খানেক দল আবেদন করেছে। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধন পেতে আগ্রহী রাজনৈতিক দলগুলোকে আবেদন করার জন্য গত ১০ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি। আবেদনের সময়সীমা ছিল ২০ এপ্রিল পর্যন্ত।