ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পুরোদমে পরমাণু কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে ইরান

* কয়েক মাসের মধ্যে আবারও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে ইরান * জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার প্রধানকে আর ইরানে ঢুকতে দেওয়া হবে না * প্রতিরক্ষা শক্তির মাত্র ৫ শতাংশ ব্যবহার করেছে ইরান * ‘বাজে কথা বন্ধ করুন’, ট্রাম্পকে আইআরজিসির হুঁশিয়ারি * সৌদি-ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের ফোনালাপ * ইসরায়েলকে রক্ষায় ৮১০ মিলিয়ন ডলার নিঃশেষ যুক্তরাষ্ট্রের * ইরানে ফের ফ্লাইট চালুর ঘোষণা তুরস্কের * তেহরানের কারাগারে ইসরায়েলি হামলায় ৭১ জন নিহত
পুরোদমে পরমাণু কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে ইরান

দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি। যদিও তেহরান বরাবরই বলে এসেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। তবুও ইহুদিবাদী দেশটির আতঙ্ক কাটেনি। তাই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি গুঁড়িয়ে দিতে আগ্রাসন চালায় ইসরায়েল। উভয় পক্ষের মধ্যে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ চলে টানা ১২ দিন। শেষ পর্যায়ে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। অত্যাধুনিক বি-২ স্টিলথ বোমারু ব্যবহার করে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে বাংকার বাস্টার বোমা দিয়ে হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। কিন্তু ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কি গুঁড়িয়ে দেওয়া গেল? উত্তরটা হবে, না। ফের্দো পারমাণবিক স্থপানায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালানোর আগেই সেখান থেকে ফিউশনযোগ্য বা বিভাজ্য পদার্থ সরিয়ে নিয়েছিল। ইউরেনিয়ামের এ মজুতই ইরানের হাতে থাকা পারমাণবিক কর্মসূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি গুঁড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যটি ব্যর্থ হয়েছে।

ফলে ইরান সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা এবার পুরোদমে পরমাণু কর্মসূচি শুরু করবে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলায় একাধিক ইরানি পরমাণু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও কয়েক মাসের মধ্যেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুনরায় শুরু করতে পারবে ইরান। সিবিএস নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল রোববার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আরব নিউজ। গত ১৩ জুন ইরানি পরমাণু ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। তাদের দাবি, ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই এ হামলা চালানো হয়েছে। তবে ইরান বরাবরই পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিপ্রায়ের কথা অস্বীকার করে আসছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের পরমাণু কর্মসূচির জন্য ব্যবহৃত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, হামলায় পরমাণু স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি ‘গুরুতর’, তবে বিস্তারিত জানা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ‘দশকের পর দশক পিছিয়ে’ গেছে। তবে আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেছেন, ‘কিছু এখনও অক্ষত আছে।’ তিনি বলেন, ‘তাদের হাতে কয়েক মাসের মধ্যেই, হয়তো এরও কম সময়ে, কিছু সেন্ট্রিফিউজ আবার ঘুরতে শুরু করতে পারে এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে।’

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, হামলার আগে ইরান তাদের অনুমানিক ৪০৮.৬ কেজি (৯০০ পাউন্ড) উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কোনো অংশ সরিয়ে নিতে পেরেছিল কি না। এই ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করা, যা বেসামরিক ব্যবহারের চেয়ে বেশি হলেও এখনও অস্ত্র তৈরির মানদ-ের নিচে। তবে আরও পরিশোধন করলে এ পরিমাণ ইউরেনিয়াম থেকে তাত্ত্বিকভাবে ৯টির বেশি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব। গ্রসি সিবিএসকে বলেন, ‘আমরা জানি না এই উপাদান কোথায় থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘কিছু অংশ হামলায় ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, তবে কিছু হয়তো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাই এক পর্যায়ে এ বিষয়ে স্পষ্টতা আসা প্রয়োজন।’ বর্তমানে ইরানি আইনপ্রণেতারা আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার পক্ষে ভোট দিয়েছেন এবং তেহরান ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো বিশেষ করে মূল সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফোর্ডোতে গ্রসির পরিদর্শনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। গ্রসি বলেন, ‘আমাদের জানতে হবে সেখানে কী আছে, কোথায় আছে এবং কী ঘটেছে।’

ফক্স নিউজের ‘সানডে মর্নিং ফিউচারস’ অনুষ্ঠানে দেয়া আলাদা এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি মনে করেন না ইরান এই মজুত ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘এটি খুব সহজ কাজ নয় এবং আমরা তাদের খুব বেশি সময় দিইনি। তারা কিছু সরাতে পারেনি।’ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইরানে ‘আইএইএর গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ও যাচাই প্রক্রিয়ার প্রতি’ ওয়াশিংটন সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তিনি গ্রসি ও তার সংস্থার ‘অঙ্গীকার ও পেশাদারিত্বের’ প্রশংসা করেন। জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার প্রধানকে আর ইরানে ঢুকতে দেওয়া হবে না। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসিকে আর ইরানে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। একইসঙ্গে সংস্থাটিকে ইরানি পরমাণু স্থাপনাগুলোতে নজরদারি ক্যামেরা বসাতেও দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোববার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। সরকারি বার্তাসংস্থা আইআরএনএ-এর বরাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) আমাদের পারমাণবিক কেন্দ্রে কোনো ক্যামেরা বসাতে দেব না। সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসির ইরানে প্রবেশও নিষিদ্ধ থাকবে।’ এই সিদ্ধান্ত আসে এমন এক সময়, যখন ইরান ও আইএইএ-এর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। বিশেষ করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষিতে নজরদারি ও স্বচ্ছতা নিয়ে তীব্র মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। অবশ্য মাত্র কয়েকদিন আগেই ইরানের পার্লামেন্ট এক আইন পাস করেছে, যেখানে আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর পেছনে রয়েছে গত ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। ওই দিন ইসরায়েল ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর বিমান হামলা চালায়। ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এতে কমপক্ষে ৬০৬ জন নিহত এবং ৫ হাজার ৩৩২ জন আহত হয়েছেন। জবাবে ইরানও ইসরায়েলের ওপর মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায়। হিব্রু ইউনিভার্সিটি অব জেরুজালেমের দেওয়া তথ্যমতে, এতে কমপক্ষে ২৯ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৪০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত গত ২৪ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

প্রতিরক্ষা শক্তির মাত্র পাঁচ ভাগ ব্যবহার করেছে ইরান

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক জ্যেষ্ঠ কমান্ডার জানিয়েছেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাবে ইরান তাদের প্রতিরক্ষা শক্তির মোটে ৫ শতাংশেরও কম ব্যবহার করেছে। আইআরজিসির সমন্বয়বিষয়ক উপ-কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদণ্ডরেজা নাগদি গত শনিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের পাল্টা হামলায় দেশের প্রতিরক্ষা শক্তির পাঁচ শতাংশেরও কম বাস্তবিক অর্থে সক্রিয় হয়েছে।’ তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এখানে ‘সক্রিয়’ অর্থ এই নয় যে, সেগুলো ব্যবহৃত হয়েছে বা শেষ হয়ে গেছে। বরং এর মানে, প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলোর মাত্র পাঁচ শতাংশ শত্রুর মোকাবিলায় যুক্ত হয়েছিল।’ নাগদি বলেন, ‘এর অর্থ হচ্ছে- আমাদের মূল সামরিক সক্ষমতা এখনো অপ্রকাশিত রয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহারই হয়নি।’ তার ভাষায়, ‘আমাদের পূর্ণ শক্তির প্রকাশ এখনো বাকি রয়েছে; তা এখনও মঞ্চে ওঠেনি।’

বলিষ্ঠ প্রতিক্রিয়া, সীমিত সম্পদের ব্যবহার

ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ১৩ জুন ইরানে আকস্মিক ও একতরফা হামলা শুরু করলে জবাবে ইরান ব্যাপক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। যার মধ্যে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছিল। এসব হামলা ইসরায়েল-অধিকৃত অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক, সামরিক ও শিল্প স্থাপনাকে লক্ষ্য করে চালানো হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বহু ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিগুলো- যেখান থেকে মূল হামলা চালানো হয়েছিল- গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়বহুল প্রতিরক্ষামূলক সহায়তা

এদিকে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সামরিক বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি অনুযায়ী, ইরানের পাল্টা হামলা প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্র তার ঞঐঅঅউ (থাড) ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করে। সাতটি স্থানে অবস্থান করা থাড ইউনিটের মধ্যে অন্তত দুটি ইউনিট সক্রিয় করা হয়। আর এই সহায়তা কার্যক্রমে ১২ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হয় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। এদিকে জেনারেল নাগদি বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটাই ব্যবহৃত হয়েছে বেশি। তবে আমাদের প্রকৃত শক্তি আমাদের স্থলবাহিনীতে নিহিত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সজ্জিত এবং প্রস্তুত। চাইলে আমরা আরও কয়েক বছর এই গতিতে শত্রুকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় লক্ষ্যবস্তু করতে পারি।’ ইরানি জেনারেল ইঙ্গিত দেন, ইরান যদি সত্যিকারের পূর্ণমাত্রার সামরিক জবাব দিতে চায়, তাহলে এর ব্যাপ্তি এবং ধ্বংসক্ষমতা হবে আরও অনেকগুণ বেশি।

‘বাজে কথা বন্ধ করুন’, ট্রাম্পকে আইআরজিসির হুঁশিয়ারি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) মুখপাত্র বলেছেন, ‘চোখ খুলুন এবং অপ্রাসঙ্গিক ও বিক্ষিপ্ত আচরণ বন্ধ করুন।’ আইআরজিসি মুখপাত্র ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ‘বেহুদা’ ও ‘পরাজয়ের হতাশা থেকে জন্ম নেওয়া’ বলে উল্লেখ করেন। যা ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিশাল ব্যর্থতার প্রতিফলন। তিনি বলেন, ‘আজ ইরানের জন্য একটি ঐতিহাসিক ও নির্ধারক দিন। আজকের গণসমাবেশ আমাদের শহিদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শত্রুদের উদ্দেশে শক্তির বার্তা পৌঁছে দিয়েছে- এটি ছিল জাতীয় ঐক্য, সম্মান ও প্রতিরোধের এক দুর্দান্ত প্রদর্শনী।’ তিনি গত শনিবার ইসরায়েলি আগ্রাসনে শহীদ হওয়া ইরানিদের জন্য আয়োজিত রাজকীয় রাষ্ট্রীয় জানাজা অনুষ্ঠানে এসবন কথা বলেন। এ সময় ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে পরামর্শ দিচ্ছি- চোখ খুলুন এবং অযৌক্তিক বক্তব্য ও বিক্ষিপ্ত আচরণ বন্ধ করুন।’ মুখপাত্র আরও বলেন, ‘১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক পরাজয় তাকে ভারসাম্যহীন করে তুলেছে, যার ফলে তিনি এখন লাগামহীন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।’ তিনি যোগ করেন, ‘ইসরায়েলি দখলদার শাসন এবং ট্রাম্প-কেউই তাদের ঘোষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। বরং ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিক্রিয়া এখন তেল আবিবে অস্তিত্ব সংকট তৈরি করেছে।’ আইআরজিসি মুখপাত্র বলেন, “ট্রাম্প এখনো বুঝতে পারছেন না যে, ইরানের প্রকৃত শক্তির উৎস কোথায়। যেমন ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) এমন কথা বলেন, যা তার মুখ ধারণ করতে পারে না। ট্রাম্প ভেবেছেন, ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলে বিশ্বব্যাপী ইরানের বিজয়ের ভাবমূর্তি বদলানো যাবে-কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন,’ যোগ করেন তিনি।

এর আগে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, ‘যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সত্যি কোনো সমঝোতা চান, তাহলে তাকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রতি অবমাননাকর ও অগ্রহণযোগ্য ভাষা ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘খামেনেইয়ের কোটি কোটি অনুসারীর হৃদয়ে আঘাত করা বন্ধ না করলে কোনো আলোচনার সুযোগই থাকবে না।’

সৌদি-ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের ফোনালাপ

সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান বিন আব্দুল আজিজের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভি। গতকাল রোববার সৌদি আরবের সরকারি সূত্রের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা মেহের। ফোনালাপে তারা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করেছেন এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছে মেহের। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে এটি ছিল মেজর জেনারেল মুসাভির প্রথম ফোনালাপ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানে গত ১২ জুন থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ হোসেইন বাঘেরি নিহতের পর ১৩ জুন ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি মেজর জেনারেল মুসাভিকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করেন। গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে এবং ১২ দিন ধরে তেহরানের সামরিক, পারমাণবিক এবং আবাসিক এলাকায় আক্রমণ চালায়। ইসরায়েলের সমর্থনে গত ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা- নাতাঞ্জ, ফোরদো ও ইসফাহানে বোমা হামলা চালায়। এদিকে ইসরায়েলি হামলার পরপরই ইরানের সামরিক বাহিনী পাল্টা জবাবে শক্তিশালী হামলা চালায়। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অ্যারোস্পেস ফোর্স অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি-এর অংশ হিসেবে ইহুদিবাদী সরকারের (ইসরাইল) বিরুদ্ধে ২২টি প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র অভিজান চালিয়েছে। যার ফলে ইসরাইলি শহরগুলোতে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর ২৪ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুদেশের মধ্যে ১২ দিন ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটে।

ইসরায়েলকে রক্ষায় ৮১০ মিলিয়ন ডলার নিঃশেষ যুক্তরাষ্ট্রের

ইসরাইলের প্রতিরক্ষা জোরদার করতে ও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী ব্যবস্থা টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ১২ দিনের এই রক্তাক্ত সংঘাতে থাড’র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। মিলিটারি ওয়াচ ম্যাগাজিনের মতে, সংঘাতের সময় ৬০-৮০টি ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার করা হয়েছিল। একটি থাড ইন্টারসেপ্টরের একক উৎক্ষেপণের খরচ ১২-১৫ মিলিয়ন ডলার, তাই এই ইন্টারসেপ্টরের মোট খরচ ৮১০ মিলিয়ন থেকে ১.২১৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালে ইসরায়েলে পুনরায় থাড মজুত করে। ইরান তার পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর মধ্যে ছিল ‘গাদর’ ‘এমাদ’ ‘খেইবার শেকান’ এবং ‘ফাত্তাহ-১’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো মডেল, এটি ১৫ ম্যাক বেগে ভ্রমণ করে যার ফলে এটিকে আটকানো কঠিন। থাড সিস্টেমটি উত্তর কোরিয়া এবং ইরানের মতো দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা মোকাবিলার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বছরে মাত্র ৫০-৬০টি থাড ইন্টারসেপ্টর তৈরি করে। অর্থাৎ গত ১১ দিনে যা খরচ করেছে তা পূরণ করতে বছরের পর বছর সময় লাগতে পারে। গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে এবং ১২ দিন ধরে তেহরানের সামরিক, পারমাণবিক এবং আবাসিক এলাকায় আক্রমন করে। ইসরায়েলের সমর্থনে গত ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র নাতানজ, ফোরদো এবং ইসফাহানে-তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। এরপর ২৪ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুদেশের মধ্যে ১২ দিন ধরে চলা যুদ্ধের বিরতি হয়।

ইরানে ফের ফ্লাইট চালুর ঘোষণা তুরস্কের

ইরানে পুনরায় ফ্লাইট চালু করছে তুরস্ক। তুর্কি বিমান সংস্থা টার্কিশ এয়ারলাইন্স ঘোষণা দিয়েছে, আজ থেকে পুনরায় ইরানে ফ্লাইট চালু হবে। নিরাপত্তাজনিত কারণে চলতি মাসের শুরুতে ফ্লাইট চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। টার্কিশ এয়ারলাইন্সের সিইও বিলাল একসি এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেন, ‘আমরা সোমবার থেকে আমাদের মাশহাদ ফ্লাইট পুনরায় চালু করছি।’ খবর বার্তা সংস্থা মেহের-এর। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর গত ১৩ জুন তুরস্ক সব রুট বন্ধ করার পর এটি জাতীয় বিমান সংস্থার ইরানে প্রথম নির্ধারিত ফ্লাইট হতে যাচ্ছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পর, তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা ঝুঁকি কমিয়ে পর্যায়ক্রমে বিমান চলাচলের সুযোগ করে দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর ইরান তার আকাশসীমার বেশিরভাগ অংশ আন্তর্জাতিক আকাশপথের জন্য পুনরায় খুলে দিয়েছে। যদিও দেশের প্রধান অংশে দেশীয় এবং বিদেশী যাত্রীবাহী বিমান চলাচল স্থগিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। দেশটির সড়ক ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজিদ আখভানের এক বিবৃতি অনুসারে, ইরানের আকাশসীমার পূর্ব, মধ্য এবং পশ্চিম অংশ এখন আন্তর্জাতিক আকাশপথের জন্য উন্মুক্ত। গত ১৩ জুন ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে এবং ১২ দিন ধরে তেহরানের সামরিক, পারমাণবিক এবং আবাসিক এলাকায় আক্রমণ চালায়। ইসরায়েলের সমর্থনে গত ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা- নাতাঞ্জ, ফোরদো ও ইসফাহানে বোমা হামলা চালায়।

এদিকে ইসরায়েলি হামলার পরপরই ইরানের সামরিক বাহিনী পাল্টা জবাবে শক্তিশালী হামলা চালায়। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অ্যারোস্পেস ফোর্স অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি-এর অংশ হিসেবে ইহুদিবাদী সরকারের (ইসরায়েল) বিরুদ্ধে ২২টি প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র অভিজান চালিয়েছে। যার ফলে ইসরায়েলি শহরগুলোতে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর ২৪ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুদেশের মধ্যে ১২ দিন ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটে।

তেহরানের কারাগারে ইসরায়েলি হামলায় ৭১ জন নিহত

ইরানের রাজধানী তেহরানের এভিন কারাগারে ইসরায়েলের হামলায় ৭১ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইরানের বিচার বিভাগের মুখপাত্র আসগর জাহাঙ্গীর। রোববার মিজান নিউজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এভিন কারাগারে হামলায় শহীদ হয়েছেন ৭১ জন, যাদের মধ্যে ছিলেন প্রশাসনিক কর্মী, সেনাবাহিনীতে চাকরিরত তরুণ, বন্দিরা, বন্দিদের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসা তাদের পরিবারের সদস্য এবং কারাগারের আশেপাশে বসবাসকারী প্রতিবেশীরা।’ ইসরাইল ইরানের সাথে বিমানযুদ্ধের শেষে ২৩ জুন এভিন কারাগারে হামলা চালায়। এটি তেহরানের সবচেয়ে কুখ্যাত রাজনৈতিক বন্দি কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সামরিক ও পরমাণু স্থাপনার বাইরে ইরানের শাসনব্যবস্থার প্রতীকে হামলা চালিয়ে ইসরায়েল তাদের লক্ষ্য সম্প্রসারণের বার্তা দিয়েছে। জাহাঙ্গীর এর আগে বলেছিলেন, হামলায় এভিন কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বিচার বিভাগ জানিয়েছে, বাকি বন্দিদের তেহরান প্রদেশের অন্য কারাগারগুলোতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এভিন কারাগারে একাধিক বিদেশি নাগরিক আটক রয়েছে, এর মধ্যে দুইজন ফরাসি নাগরিক সেসিল কোলার এবং জ্যাক প্যারিস আছেন, যারা তিন বছর ধরে আটক রয়েছেন। হামলার পর ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারো এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘তেহরানের এভিন কারাগারে হামলায় আমাদের নাগরিক সেসিল কোলার ও জ্যাক প্যারিস বিপদের মুখে পড়েছেন। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত