ফেনীতে বন্যায় নতুন করে আরও ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার নতুন করে প্লাবিত হওয়া গ্রামের মধ্যে চারটি ফেনী সদর উপজেলা, পাঁচটি ছাগলনাইয়া উপজেলা ও একটি দাগনভূঞা উপজেলায়। তবে সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরামে বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। বন্যার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফেনী-ফুলগাজী ও ফেনী-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ছোট আকারের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে নোয়াখালীর ছয় উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪১ হাজার ৮৪০ পরিবারের ২ লাখ ৩ হাজার ১০০ মানুষ। বিধ্বস্ত হয়েছে ৪০ ঘরবাড়ি। জেলার ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ৪১৯ জন মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
জেলার ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯ হাজার ২০০ বাসিন্দা অবস্থান করছেন। গতকাল রাত পর্যন্ত পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকা থেকে অন্তঃসত্ত্বা নারী, অসুস্থসহ ১৮ জনকে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার করেছেন। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বাসিন্দারা জানান, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যায় ফেনীর পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার অন্তত ১০৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসমাইল হোসেন বলেন, গতকাল নতুন করে তিন উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিতে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার নিশ্চিতের পাশাপাশি বন্যায় জনদুর্ভোগ কমাতে সব অংশীজনকে নিয়ে জেলা প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য ও অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। কোনো এলাকায় সহায়তা পৌঁছাতে দেরি হলে কিংবা না পৌঁছালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ভেসে উঠল বৃদ্ধের লাশ : ফেনীর ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে ভাসমান অবস্থায় নুরুল আলম নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। মাছ ধরতে গিয়ে বন্যার পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা স্থানীয় বাসিন্দাদের। নুরুল আলম দৌলতপুর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাদেকের ছেলে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাড়ির অদূরে বন্যার পানিতে কারেন্ট জাল পেতেছিলেন নুরুল আলম। গতকাল ফজরের নামাজের পর সেই জাল তুলতে যান তিনি। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান মেলেনি। পরে সন্ধ্যায় বন্যার পানিতে তার লাশ ভেসে ওঠে। তার পায়ে কারেন্ট জাল বাঁধা ছিল। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও নিহত ব্যক্তি প্রতিবেশী ফখরুল আলম বলেন, নুরুল আলম সম্প্রতি স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েক দিন ধরে তার শরীরে জ্বরও ছিল। এর মধ্যেই তিনি মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন। ধারণা করা হচ্ছে, জাল তোলার সময় বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয়দের মাধ্যমে ঘটনাটি জেনেছি। গতকাল শুক্রবার তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হবে।’
যমুনার পানিতে বিলীন দেড় শতাধিক বাড়ি : সিরাজগঞ্জে ভারী বর্ষণে যমুনা নদীতে পানি ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বিপৎসীমার ১৭২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্রুত পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার সদর, কাজিপুর, শাহজাদপুর, চৌহালী, চলনবিলের নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর হার্ড পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা হার্ড পয়েন্টে ১৭২ ও কাজিপুর পয়েন্টে ১৯৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার বেশকিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।
এদিকে যমুনার ভাঙনে কাজিপুর উপজেলার চরগিরিশ ইউনিয়নের ভেটুয়া গ্রামে অন্তত ১০০টি বসতবাড়ি, শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের ফুলজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরগিরিশ নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় ও ভেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের মুখে পড়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘নদীতে পানি বাড়ার প্রবল স্রোত বইছে। এ কারণে নদী তীরের বেশ কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার ভাটপিয়ারী ও বাহুকা এলাকায় জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। তাছাড়া নদীর এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।