
কুড়িগ্রাম সফরে তিস্তা নদীতীর রক্ষায় চলমান কাজ পরিদর্শনে গিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, স্থানীয় জনগণ তিস্তা নদীতীরে স্থায়ী বাঁধের দাবি করছেন। ইতোমধ্যেই তিস্তা নদীর বিভিন্ন স্থানে আমরা পাঁচটি গণশুনানি করেছি, যা সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জমা হয়েছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনার ডিজাইন চূড়ান্ত হবে। গতকাল মঙ্গলবার কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়–সংলগ্ন তিস্তা নদীতীর রক্ষায় চলমান কাজ পরিদর্শন করেন সৈয়দা রিজওয়ানা।
এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিস্তা আমাদের নদী। ভাটির দেশ হিসেবে তিস্তা নদীর ওপর আমাদের অধিকার আছে। আমাদের স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই তিস্তা নদী কীভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারি, সে জন্য আমরা তিস্তার পাঁচটি স্থানে গণশুনানি করেছি। ইতিপূর্বে আমরা ১৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার অতিভাঙনপ্রবণ এলাকায় ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিয়েছি। নতুন করে কোথাও ভাঙন দেখা দিলে সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানিসম্পদ উপদেষ্টা জানান, ২০১৬ সালে চীনের সঙ্গে তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে স্বাক্ষর হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ বেশি দূর এগোয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আবারও তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীন সরকারের কথাবার্তা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তিস্তাপাড়ের মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষার কথা গণশুনানিতে শুনে সেগুলো পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করেছি। এখন সরকারের অন্য দুটি পর্যায়ে এই পরিকল্পনা নিয়ে অক্টোবরের মধ্যে চূড়ান্ত ডিজাইন দেওয়া হবে। এরপর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কী পরিমাণ অর্থ লাগবে, সেগুলো নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দর–কষাকষি হবে। এরপর তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দুই দিনের সফরে রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলায় এসেছেন। সফরের অংশ হিসেবে গতকাল তিনি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার পাঞ্জরভাঙ্গা এলাকার তিস্তা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেন উপদেষ্টা। এলাকাবাসীর দুর্দশা ও দীর্ঘদিনের অবহেলার কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘তিস্তার পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে বহু বছর ধরে যে অব্যবস্থা চলছে, তার ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া আজ নদীভাঙনে হাহাকার করা মানুষ। এটা শুধুই প্রকৃতি না, এটা অব্যবস্থাপনার ফল।’ উপদেষ্টা নদীভাঙন রোধে টেকসই বাঁধ নির্মাণ, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখা এবং সীমান্ত-সংলগ্ন নদীগুলোর পানিবণ্টনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। এসময় পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। নদী ভাঙনরোধে চলমান ও সম্ভাব্য প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়েও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন উপদেষ্টা। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষার নামে যেসব প্রকল্প হয়, সেখানে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ ও বাস্তব অভিজ্ঞতা উপেক্ষা করা হয়। এটা পরিবর্তন করতে হবে। তিনি আরও জানান, নদীভাঙনের ফলে শুধু ঘরবাড়ি নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যনিরাপত্তাও চরম হুমকিতে পড়েছে। সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই সফরে উপদেষ্টা কুড়িগ্রামের চিলমারী ও উলিপুরেও নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করবেন এবং স্থানীয় পরিবেশ-সংকট নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এ সময় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা, পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান, রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান, জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মোজাহিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।