মালয়েশিয়ায় পর্যটন ভিসায় প্রবেশের চেষ্টাকালে ইমিগ্রেশন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ১২৩ জন বাংলাদেশিসহ মোট ১৯৮ জন বিদেশি নাগরিককে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।
গত বৃহস্পতিবার দেশটির সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা সংস্থা এবং অভিবাসন বিভাগের যৌথ অভিযানে এই বিদেশিদের আটক করা হয়। মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বার্নামা জানায়, ‘নট টু ল্যান্ড’ নীতিমালার আওতায় এসব যাত্রীদের বহিষ্কার করে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না, বৈধ কাগজপত্র বা হোটেল বুকিং উপস্থাপন করতে পারেননি। কেউ কেউ মালয়েশিয়ায় আগমনের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কারণ দেখাতে ব্যর্থ হন। এসব কারণেই তাদের প্রবেশাধিকার অস্বীকৃত করা হয়। কেএলআইএর টার্মিনাল-১ থেকে আটক করা হয় ১২৮ জন যাত্রীকে, যাদের মধ্যে ১২৩ জনই বাংলাদেশি। বাকি ৫ জনের মধ্যে দুইজন পাকিস্তানি, দুইজন ইন্দোনেশিয়ান এবং একজন সিরীয় নাগরিক। টার্মিনাল-২ থেকে আটক হন আরও ৭০ জন, যাদের মধ্যে রয়েছেন ৫১ জন ইন্দোনেশিয়ান, ১৩ জন ভারতীয়, চারজন পাকিস্তানি এবং দুইজন ভিয়েতনামী নাগরিক। সংস্থাটির মহাপরিচালক দাতুক সেরি মোহাম্মদ শুহাইলি মোহাম্মদ জেইন জানান, আটককৃত যাত্রীদের কয়েকজনের মোবাইল ফোনে মালয়েশিয়ান অভিবাসন কর্মকর্তাদের ছবি ও বিমানবন্দরের ভেতরের স্থাপনার ভিডিও পাওয়া গেছে। বিষয়টি সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে তদন্ত শুরু হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করছে, তাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্র বা সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তিনি আরও জানান, আটক প্রত্যেক যাত্রীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সম্পূর্ণ দায়ভার সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সগুলোকে নিতে বলা হয়েছে। অভিবাসন কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, এটি কোনো একক ঘটনা নয়, বরং মালয়েশিয়ায় পর্যটন ভিসার অপব্যবহার এবং অবৈধ প্রবেশপ্রচেষ্টা রোধে আমরা ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। এ ঘটনায় মালয়েশিয়াকে অবৈধ অভিবাসনের ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন শুহাইলি। তিনি বলেন, আমরা মালয়েশিয়ার সার্বভৌম নিরাপত্তা ও অভিবাসন নীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এ ধরনের প্রবেশ প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। এর আগে, চলতি মাসের ১১ জুলাই একই ধরনের অভিযানে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৯৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তাদের ক্ষেত্রেও ভিসার শর্ত লঙ্ঘন ও সন্দেহজনক ভ্রমণ পরিকল্পনার অভিযোগ ছিল। এদিকে, মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং আটক বা ফেরত যাওয়া নাগরিকদের সহায়তায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।