
ফরিদপু-৪ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে ভাঙ্গায় তৃতীয় দফায় চলছে মহাসড়ক-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি। গতকাল রোববার দুটি মহাসড়কে সাতটি ও রেলপথের তিনটি স্থান অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধরা। এতে নিদারুণ কষ্ট আর ভোগান্তিতে পড়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সাধারণ মানুষ।
রোববার সকাল ৬টা থেকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি শুরু করে বিক্ষুব্ধ জনতা। সকাল ৯টার দিকে রাজবাড়ী-ফরিদপুর-ঢাকা রেলপথের ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদি রেল ক্রসিংয়ে নকশীকাঁথা ট্রেনটি আটকে দেয় তারা। এসময় যাত্রীদেরও নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন একাধিক যাত্রী।
মাদারীপুরের আত্মীয়ের বাসা থেকে আসা আরিফ হোসেন নামের এক ট্রেন যাত্রী বলেন, আমি রংপুরে যাবো। ট্রেন থামিয়ে নামিয়ে দেওয়ার পর সাত কিলোমিটার পথ হেঁটে এলাম। কোথাও কোনো গাড়ি নেই। কোথায় যাবো, কোন পথে যাবো, কোনো গাড়ি নেই। মানুষের চরম কষ্ট হচ্ছে। এভাবে কষ্ট দিয়ে আন্দোলন মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
ট্রেনে করে ঢাকায় মেয়ে-জামাইয়ের বাসায় বিভিন্ন জিনিস নিয়ে যাচ্ছিলেন ফরিদপুরের সালথার রসুলপুরের মো. বাচ্চু শেখ (৫৩)। ট্রেন থামিয়ে নামিয়ে দেওয়ার পর হাতে ব্যাগ আর মাথায় পেঁয়াজের বস্তা নিয়ে হাঁটছেন তিনি। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ট্রেনে করে ঢাকায় মেয়ের বাসায় যাচ্ছিলাম। হামিরদি রেলক্রসিংয়ে যাওয়ার পর রাস্তার ওপর আগুন জ্বালিয়ে ট্রেন আটকে দেওয়া হয়। পরে আমাদের ট্রেন থেকে নামিয়ে দিয়েছে। এখন এই ভারি মালপত্র নিয়ে হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ভাঙ্গা রেলস্টেশন কর্মকর্তা সাকিবুর রহমান বলেন, রাজবাড়ী থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল নকশিকাঁথা। ট্রেনটি আটকে দেওয়ায় ভাঙ্গা জংশনে ঢাকা থেকে আসা রাজবাড়ীগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়াও খুলনা তথা দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষের যাতে ভোগান্তি না হয় এবং যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে সে বিষয়ে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুতি ছিলো। আমরা বিক্ষুব্ধ অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করার চেস্টা করি।
এদিকে বাগেরহাটের চারটি আসন পুনর্বহালের দাবিতে জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন অফিস ঘেরাও করেছেন সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতাকর্মীরা। গতকাল রোববার সকালে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শত শত নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন।
এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ওহিদুজ্জামান দীপু, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খাদেম নিয়ামুন নাসির আলাপ, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ মোহাম্মদ ইউনুস, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অ্যাড. আব্দুল ওদুদ, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ফকির আরকুল ইসলামসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিক্ষোভ মিছিলে বক্তারা বলেন, নির্বাচন কমিশনের নতুন আসন বিন্যাস বাগেরহাটের জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা চারটি আসনে নির্বাচন করে আসছি এবং এটিই ছিল বাগেরহাটবাসীর সর্বসম্মত দাবি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবিকে উপেক্ষা করে চারটি আসনের পরিবর্তে তিনটি আসন রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে, যা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক।
গেলো ৩০ জুলাই দুপুরে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে জেলায় তিনটি আসন করার প্রাথমিক প্রস্তাব দেয় নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকেই বাগেরহাটবাসী আন্দোলন শুরু করে। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন বাগেরহাটবাসী। এরপরেও ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসনই জারি রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। নির্বাচন কমিশনের এই আসন বিন্যাস গণমানুষের দাবিকে উপেক্ষা করেছে বলে জানান সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতাকর্মীরা।
চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী, বাগেরহাট-১ (বাগেরহাট সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা) ও বাগেরহাট-৩ (কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)।
দীর্ঘদিন থেকে ৪টি আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল বাগেরহাটে। তখনকার সীমানা: বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট), বাগেরহাট-২ (বাগেরহাট সদর-কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) ও বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)।