ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বাগেরহাটে নির্বাচন অফিস ঘেরাও ফরিদপুর নিয়ে হাইকোর্টের রুল

সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণ : * ভাঙ্গার সীমানা ইস্যুতে ইসিকে ডিসির চিঠি * ভাঙ্গা থেকে দুই ইউনিয়ন বাদ দেওয়ার প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল জারি * মহাসড়ক অবরোধ প্রতিরোধ করা হবে : ফরিদপুর জেলা প্রশাসক * আসন ফিরে পেতে বাগেরহাটে নির্বাচন অফিস ঘেরাও, উচ্চ আদালতে রিট
বাগেরহাটে নির্বাচন অফিস ঘেরাও ফরিদপুর নিয়ে হাইকোর্টের রুল

ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় যুক্ত করার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ ও আন্দোলন করছে এলাকাবাসী। বিষয়টিকে জনগণের আন্দোলন আখ্যায়িত করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আবেদন করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান মোল্লা। এদিকে ভাঙ্গা উপজেলা থেকে কেটে নেওয়া হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোকন মোল্লা এলাকাবাসীর পক্ষে চেয়ারম্যানের পাঁচটি দাবির কথা তুলে ধরে মীমাংসার আহ্বান জানিয়েছেন। গত সোমবার ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুল হাসান মোল্লা ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ২১৪ ফরিদপুর-৪ আসনে অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন।

জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত ওই চিঠি সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেটের সূত্র উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ফরিদপুর-২ এবং ফরিদপুর-৪ এর সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। উক্ত তালিকায় ফরিদপুর-৪ এর অন্তর্গত ভাঙ্গার দুটি ইউনিয়ন, আলগী ও হামিরদী জাতীয় সংসদীয় আসন ফরিদপুর-২ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকা প্রকাশিত হওয়ার ফলে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নসহ ভাঙ্গা উপজেলার সাধারণ জনগণ উক্ত আসন বিন্যাস বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে ক্রমান্বয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সর্বশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভকারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়, ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয় ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়াও বিক্ষোভকারীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে। তৎপ্রেক্ষিতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ার কারণে সাধারণ জনগণকে তীব্র ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবির সমর্থনে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) সংসদীয় আসনের ভাঙ্গা হতে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করে সংসদীয় আসন পুনর্র্নিধারণের বিষয়টি দুইটি সংসদীয় আসনের জনগণ মেনে নিতে পারেনি। উক্ত দুইটি আসনের সর্বস্তরের জনগণ এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মর্মে জানা যায়। এ প্রেক্ষিতে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি পুর্নর্বিবেচনা করা না হলে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, বর্ণিত অবস্থায়, জাতীয় সংসদীয় আসন ২১২ ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) এর অন্তর্গত ভাঙ্গা উপজেলার ২টি ইউনিয়ন আলগী ও হামিরদীকে জাতীয় সংসদীয় আসন ২১৪ ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) এর মধ্যে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হলো।

এদিকে ফেসবুক বার্তায় হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোকন মোল্লা পাঁচটি দাবির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি পাঁচটি দাবিকে ভাঙ্গাবাসীর প্রাণের দাবি হিসেবে উল্লেখ করে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন এ দাবিগুলো মেনে নেওয়া হলে তারা ঘরে ফিরে যাবেন। পাঁচটি দাবি হলো- ১. আলগী এবং হামিরদী ইউনিয়নকে পুনরায় ভাঙ্গা উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। ২. চেয়ারম্যানসহ সকলকে মুক্তি দিতে হবে। ৩. নিরীহ নিরাপরাধ জনগণের ওপর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৪. নতুন কোনো মামলা দেওয়া যাবে না। এবং ৫. রাতের বেলা প্রশাসন দিয়ে সাধারণ জনগণকে হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

ভাঙ্গা থেকে দুই ইউনিয়ন বাদ দেওয়ার প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল জারি : ফরিদপুর-৪ আসন থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বাদ দিয়ে সেগুলোকে ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা গেজেট কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুইজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ রুল জারি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে থাকা আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব জানান, আদালত সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সংবিধানের ১২৫(ক) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে কেন সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, নির্বাচনী আইনের সেকশন ৭ কেন সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না এবং গেজেট কেন অবৈধ হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। এর আগে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান দুলালের পক্ষে গেজেট বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে গেজেট জারি করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে ফরিদপুর-৪ আসন (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন বাদ দিয়ে সেগুলোকে ফরিদপুর-২ আসনের (নগরকান্দা ও সালথা) সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

মহাসড়ক অবরোধ প্রতিরোধ করা হবে -ফরিদপুর জেলা প্রশাসক : ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা বলেছেন, ভাঙ্গার সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে মহাসড়ক অবরোধ করা যাবে না। অবরোধ করার উদ্যোগ নেওয়া হলে তা প্রতিহত করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ভাঙা গোলচত্বর এলাকায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা জানান। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সংসদীয় আসনের বিষয়ে ইতোমধ্যে উচ্চতর আদালতে রিট হয়েছে এবং আগামী ২১ সেপ্টেম্বর ওই রিটের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা আশা করছি ওই দিন ভালো কিছু পাব। তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী আমরা একটা প্রতিবেদন পাঠিয়েছি গতকাল। প্রতিবেদনে সংসদীয় আসন পুনর্বহালের দাবিকে ‘ভাঙ্গাবাসীর প্রাণের দাবি’ উল্লেখ করে সংসদীয় আসন অপরিবর্তিত রাখার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, ‘তবে এ দাবিতে ঢাকা-খুলনা এবং ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করা যাবে না । অবরোধ করার উদ্যোগ নিলে আমরা তা প্রতিহত করব। জেলা প্রশাসক বলেন, গতকাল ভাঙ্গায় যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে তা ছিল নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড। এ ব্যাপারে কাজ করছে পুলিশ । পুলিশ নাশকতাকারীদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ সকাল থেকে ঢাকা-খুলনা এবং ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে। কোন জায়গা থেকে অবরোধের কোনো খবর আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি।’

আসন ফিরে পেতে বাগেরহাটে নির্বাচন অফিস ঘেরাও, উচ্চ আদালতে রিট : বাগেরহাটে চারটি আসন বহালের দাবিতে জেলা নির্বাচন অফিস ঘেরাও করেছেন সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতাকর্মীরা। এছাড়া আসন ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। ঘিরে রাখেন নির্বাচন অফিসের প্রধান গেট। এদিন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। এদিকে জেলায় চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে দুটি রিট পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। বাগেরহাট প্রেসক্লাব ও জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মাদ জাকির হোসেন একটি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মুজিবর রহমান শামীমের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ আক্তার রসুল পৃথক আরেকটি রিট পিটিশন দাখিল করেছেন। রিট পিটিশনে বাংলাদেশ সরকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে বিবাদী করা হয়েছে।

সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির কো-কনভেনর ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, সনাতন ধর্মালম্বীদের বৃহত্তম উৎসব দুর্গা পূজা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থের বিষয়টি চিন্তা করে আমরা হরতালের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি। আমরা নির্বাচন অফিস ঘেরাও করেছি। দুপুর পর্যন্ত নির্বাচন অফিস ঘেরাও থাকবে। বুধবারও একইভাবে সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত নির্বাচন অফিস ঘেরাও থাকবে।

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, বাগেরহাট জেলা শাখার সেক্রেটারি ও সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি সদস্য সচিব শেখ মোহাম্মাদ ইউনুস বলেন, ইতোমধ্যে দুটি রিট হয়েছে। আরও রিটের প্রস্তুতি চলছে। আদালতে আমরা ন্যায়বিচার পাবো।

গত ৩০ জুলাই আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে জেলায় তিনটি আসন করার প্রাথমিক প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর থেকেই বাগেরহাটবাসী আন্দোলন শুরু করে। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন নেতাকর্মীরা। এরপরও ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসন জারি রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। নির্বাচন কমিশনের এই আসন বিন্যাস গণমানুষের দাবিকে উপেক্ষা করেছে বলে জানান সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতাকর্মীরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত