
পাঁচ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে গতকাল মঙ্গলবার বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সকাল থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ব্যানার-ফেস্টুন হাতে দাঁড়িয়ে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল।এ সময় বক্তারা বলেন, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একদিনে করার চেষ্টা সরকার একটি দলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ। নভেম্বরে গণভোট ও ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন না হলে জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করতে পারে।
সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আরও তারা বলেন, গণমানুষের ৫ দফা দাবি মেনে নিয়ে জাতিকে সংকট থেকে রক্ষা করুন। এতে শুধু জামায়াত নয়, গোটা জাতির মঙ্গল হবে।
দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী উপদেষ্টাদের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে: পাঁচ দফা দাবি মেনে না নিলে, অন্তর্বর্তী সরকারের কোন কোন উপদেষ্টা একটি রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে তাদের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষ সড়কে নেমে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি জানাচ্ছে। অথচ যদি সরকার এখনও জনগণের ভাষা না বোঝে, তাহলে জনগণ সেই ভাষায়ই নিজেদের দাবি আদায় করবে, যেটা সরকার বুঝতে বাধ্য হবে।
ডা. তাহের বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা, পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচন, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুমণ্ডনির্যাতন ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা– এই ৫ দফাই আজ গণমানুষের মুক্তির দাবি।
তিনি সতর্ক করে বলেন, জামায়াতে ইসলামি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। তবে সরকার যদি রাজপথ উত্তপ্ত করতে চায়, তাহলে আমরাও প্রস্তুত। সরকারকে মনে রাখতে হবে, এই দেশে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আর কোনো নির্বাচন হতে পারবে না। জনগণ এখন সজাগ, সংগঠিত। গণভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের টেস্ট ম্যাচ। নভেম্বরে গণভোট এবং ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। যারা গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একদিনে করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য খারাপ– তারা চায়, পুরোনো পদ্ধতিতে ভোট চুরি আর কেন্দ্র দখল অব্যাহত থাকুক।
তিনি আরও বলেন, যারা জুলাই সনের আইনি ভিত্তি চায় না, তারা যুক্তি দেয়– গণভোটে সমস্যা হলে জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। কিন্তু গণভোটেই তো চিহ্নিত হবে, কারা সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্যও গণভোট আগে হওয়া জরুরি।
প্রশাসনে দলীয় নিয়োগ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডা. তাহের বলেন, আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে কোনো দলের অনুগত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ও দলীয় আনুগত্যে অন্ধ ব্যক্তি।
তিনি প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, আপনি নোবেল বিজয়ী হিসেবে বিশ্বে সম্মানিত। কিন্তু যারা আপনাকে ব্যবহার করে বিতর্কিত করছে, তাদের থেকে সতর্ক থাকুন। আপনি যদি তাদের সরিয়ে না দেন, আমরা জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করব। প্রয়োজনে তাদের নামণ্ডতালিকাও দিতে প্রস্তুত আছি।
ডা. তাহের আরও বলেন, আপনি যদি জাতিকে শান্তি ও স্থিতি উপহার দিতে চান, তাহলে ৫ দফা দাবি মেনে নিন। এতে শুধু জামায়াতে ইসলামির নয়, গোটা জাতির মঙ্গল হবে।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামি ব্যক্তি বা পরিবারের রাজনীতি করে না, করে গণমানুষের কল্যাণের রাজনীতি। যারা জনগণের ভোটের আগেই ক্ষমতার স্বপ্ন দেখে, তাদের পতন শুরু হয়ে গেছে। জনগণ এখন আর প্রতারণামূলক রাজনীতি মেনে নেবে না।
মানববন্ধনে হাজারো মানুষ ব্যানার-ফেস্টুন হাতে উপস্থিত হয়ে ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। তাদের দাবি—জুলাই সনদের বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জন অধিকার ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের আগেই গণভোটের দাবি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, ‘জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতির জন্য যে গণভোট, সেটা আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই হতে হবে।’ গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত মানববন্ধনে মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এ কথা বলেন।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, পিআর পদ্ধতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ রাজধানীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত মানববন্ধন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ কর্মসূচিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ছিলেন।
এ সময় মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি নির্ধারণ না হলে জুলাই সনদ গুরুত্বহীন হয়ে যাবে। জাতীয় নির্বাচনটাও সংকটাপন্ন হওয়ার একটা আশঙ্কা তৈরি হবে।
নির্বাচন কমিশন একটি দলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে উল্লেখ করে মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, অতীতের নির্বাচন কমিশনগুলোর মতো এ নির্বাচন কমিশনও একটি দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য মেকানিজম করছে।’
জুলাই সনদ নিয়ে মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে যেনতেন নির্বাচনের দিকে যাওয়া যাবে না, মৌলিক সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না এবং জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে হত্যা করা যাবে না।’পিআর পদ্ধতির আলোকে নির্বাচন হতে হবে উল্লেখ করে মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘এটা জনগণের দাবি। ইসলামী আন্দোলনের দাবি।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পাঁচ দফা দাবি হলো জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, পিআর পদ্ধতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফ্লিড নিশ্চিত করা, গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার, বিশেষ ট্রাইবুনালে জাতীয় পার্টিরসহ ১৪ দলের বিচার ও নিষিদ্ধ করা।