ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার, জয় পেতে মরিয়া জামায়াত

বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার, জয় পেতে মরিয়া জামায়াত

শিক্ষা-সংস্কৃতির পাদপীঠখ্যাত প্রাচীন জেলা কুমিল্লার কৃষি ও ব্যবসাসমৃদ্ধ উপজেলা বরুড়া। এ উপজেলা নিয়ে বর্তমানে জাতীয় সংসদের ২৫৬ নম্বর আসন। কুমিল্লা জেলা সদর থেকে ২৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এ উপজেলার আয়তন ২৪২ বর্গকিলোমিটার। ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ বরুড়া থানা প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চ এটি একটি স্বতন্ত্র উপজেলা হিসেবে ঘোষিত হয়। একটি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে বরুড়া সংসদীয় আসন। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার এ আসনে সব দল ও মতের রাজনীতির সহাবস্থান রয়েছে। এখানে অন্তত আট-দশটি দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণায় আসন এলাকা সরব থাকলেও অন্য দলগুলোর নির্বাচনি তৎপরতা এখনও তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে আসন এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীদের গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্থানীয় এলাকার নানা শ্রেণিপেশার লোকজনের ভাষ্য, এখানে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কমিটি থাকলেও এখনও তারা শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারেননি। সবকিছু ছাপিয়ে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি চাচ্ছে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে, আর আসনটিতে বিজয় অর্জন করার টার্গেট নিয়ে মরিয়া হয়ে নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছে জামায়াত। দিন যতো যাচ্ছে ততোই এ আসন এলাকায় বাড়ছে নির্বাচনি আমেজ।

এলাকায় ঘুরে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্থানীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ এলাকার প্রভাবশালী নেতারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি বেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে। বিশেষ করে এ দুটি দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগের পাশাপাশি মনোনয়ন পেতে দলের হাইকমান্ডে দৌঁড়ঝাপ শুরু করে দিয়েছেন।

জানা গেছে, জেলার এ আসনটি একসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। এ আসনে দলটির প্রার্থী হয়ে ১৯৯১, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও ২০০১ সালে শিল্পপতি এ কে এম আবু তাহের এমপি নির্বাচিত হন। তার হাত ধরে আসনটিতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তোলে। ২০০৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন। তখন উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন তার ছেলে কেন্দ্রীয় বিএনপির তৎকালীন আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি দলের প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে সামান্য ভোটে হেরে যান। এরপর একতরফা নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিতে ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি (এরশাদ), ২০১৮ ও ২০২৪ সালে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। ২০১৮ সালে এখানে বিএনপির সাবেক এমপি জাকারিয়া তাহের সুমন দলের প্রার্থী হয়েছিলেন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এখানে বিএনপির হেভিওয়েট সম্ভাব্য একক প্রার্থী সাবেক এমপি জাকারিয়া তাহের সুমন। তিনি বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি। এলাকায় তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি আসন এলাকায় সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন। দলের একাধিক নেতা জানান, সাবেক এমপি জাকারিয়া তাহের সুমন আসন এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠন করেছেন। প্রতিটি ওয়ার্ড এলাকায়ও গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা করেছেন।

এ প্রার্থীর পক্ষে দলটির স্থানীয় সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে একাধিক টিম গঠন করে ইউনিয়ন ভাগ করে প্রতিনিয়ত গণসংযোগ অব্যাহত আছে। এ আসনের প্রতিটি এলাকায় ধানের শীষের মজবুত অবস্থান রয়েছে বলে নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত এ আসনে বিএনপির একক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জাকারিয়া তাহের সুমন বেশ আলোচিত। অপরদিকে, ৫ আগস্টের পর বরুড়া পৌর এলাকার হাজী নোয়াব আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কর্মী সমাবেশ করে কেন্দ্রীয় জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আনুষ্ঠানিকভাবে দলের প্রার্থী হিসেবে অধ্যক্ষ মো. শফিকুল আলম হেলালের নাম ঘোষণা করেন। তখন থেকে এই প্রার্থী ফুরফুরে মেজাজে প্রতিনিয়ত বরুড়া উপজেলার প্রতিটি এলাকায় গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন।

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মো. শফিকুল আলম হেলাল কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল এ- কলেজের অধ্যক্ষ এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের শুরা কর্মপরিষদ সদস্য।

দলের নেতাকর্মীরা জানান, এবার আমরা একজন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী পেয়েছি। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগে তার পক্ষে জনতার ভিড় জমে। তিনি প্রতিনিয়ত আসন এলাকার বিভিন্ন ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা প্রার্থীর পক্ষে এলাকাভিত্তিক ঘরোয়া বৈঠকও শুরু করেছে। জামায়াত এ আসনটিতে কোনো সময় জয় পায়নি। তাই আগামী নির্বাচনে জয় পেতে ঐক্যবদ্ধভাবে মরিয়া হয়ে নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছে দলটি। এদিকে, এ আসনে এনসিপির ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবু বাকের মজুমদার প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে নির্বাচনি মাঠে এনসিপি বা অন্য কোনো দলের প্রচার-প্রচারণা এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

এছাড়া এ আসনে কেন্দ্রীয় ওলামা পার্টির সভাপতি মাওলানা ইরফান-বিন তোরাব আলী, জাকের পার্টির বরুড়া উপজেলা সভাপতি মুফতি মাওলানা শরীফ উদ্দিন, বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাসুদ আলম পাটোয়ারী, খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাওলানা আবুল ফারাহ মুহাম্মদ আবদুল আজিজ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে এলাকায় প্রচারণা রয়েছে। তবে তাদেরকে এখনো সভা-সমাবেশ বা গণসংযোগে দেখা যায়নি। সবমিলিয়ে এখানে বিএনপি-জামায়াতের গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৭ হাজার ১৬০ জন, এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৩ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮৩ হাজার ২৪২ জন। এখানে হিজড়া ভোটার আছেন ৫ জন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত