
শান্তি ফেরাতে আলোচনার মধ্যেই পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে নতুন করে সংঘর্ষ হয়েছে। গত শুক্র ও শনিবার ওই সংঘর্ষে ৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। সেইসঙ্গে আফগানিস্তান থেকে আসা ২৫ সশস্ত্র যোদ্ধাকে হত্যার দাবিও করেছে তারা।
গত রোববার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে ৫ জন সেনা নিহত হওয়ার খবর জানিয়ে বলা হয়, তাদের সেনারা কুরাম ও উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সন্ত্রাসীদের অন্তত দুটি অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছেন এবং ২৫ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছেন।
তালেবান প্রশাসন আফগানিস্তানে সক্রিয় সশস্ত্র দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে বলেও অভিযোগ করে তারা। তুরস্কে ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আলোচনার পর কাবুলের প্রতিনিধিদল একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, এই অনুপ্রবেশের চেষ্টা আফগানিস্তানের ভূমি থেকে উদ্ভূত ‘সন্ত্রাস’ দমনে কাবুল যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেটিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
আফগানিস্তানের তালেবান সরকার নতুন এ সংঘর্ষ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা বারবার সশস্ত্র যোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তালেবান সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিমান হামলার মাধ্যমে আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করার পাল্টা অভিযোগ তুলেছে।
চলতি মাসের শুরুতে দুই প্রতিবেশী দেশ সীমান্তে তীব্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। ওই সংঘর্ষ একটি পূর্ণমাত্রার সংঘাতে রূপ নেওয়া আটকাতে আলোচনার জন্য শনিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে গেছেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা। কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় কয়েক দিন আগে দোহায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ওই চুক্তির লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে সীমান্তে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষ থামানো। সীমান্তে ওই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ বলেছেন, যুদ্ধবিরতি এখনও বহাল আছে এবং কাবুল শান্তিতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইস্তাম্বুলে আলোচনা ব্যর্থ হলে ইসলামাবাদের সামনে ‘সরাসরি যুদ্ধ’ ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী শুক্র ও শনিবার অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা সশস্ত্র যোদ্ধাদের ‘ফিতনা আল-খোয়ারিজের’ সদস্য বলে বর্ণনা করেছে। বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠী বোঝাতে এই কথাটি ব্যবহার করে দেশটির সেনাবাহিনী।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত সংঘাত নিয়ে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও কথা বলেছেন।
মালয়েশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোটের (আসিয়ান) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চলমান আলোচনার বিষয়ে তাকে জানানো হয়েছে।
তিনি আফগানিস্তান-পাকিস্তান সংকট খুব দ্রুত সমাধান করবেন। অন্যদিকে তালেবান নিয়ন্ত্রিত সম্প্রচারমাধ্যম আরটিএ গতকাল বলেছে, তুরস্কে ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আলোচনার পর কাবুলের প্রতিনিধিদল একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
সেখানে পাকিস্তানকে সীমান্ত পেরিয়ে হামলা বন্ধ করতে ও কোনো ‘আফগানবিরোধী গোষ্ঠী’ যেন পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তালেবান সরকার যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ ও লঙ্ঘনের তদন্ত করার জন্য চারপক্ষীয় তদারকি ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূল আলোচনা হবে গোয়েন্দা-তথ্য ভাগাভাগি করা নিয়ে। ইসলামাবাদ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) যোদ্ধাদের ওপর নজর রাখতে চায়। আফগান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাজী নাজিব। পাকিস্তান এখনও নিজেদের প্রতিনিধিদলের বিষয়ে কিছু জানায়নি।