
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে সবুজ মাঠ আর কৃষকের পরিশ্রম এখানেই জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন কৃষি সাফল্যের গল্প। এবার সেই সাফল্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে বস্তায় আদা চাষ। উপজেলায় এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বাড়ির আঙিনায় পতিত অনাবাদি জমিতে বস্তায় আদা চাষ করে তাক লাগিয়েছেন মির্জাগঞ্জ গ্রামের কৃষক রুহুল আমীন কাজী (৬৫)। তাঁর এই নতুন পদ্ধতি এলাকার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে, কারণ বস্তায় আদা চাষে কম খরচে ও কম জায়গায় বেশি ফলন পাওয়া যায়। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রুহুল আমীন কাজী ছেলে বেসরকারি চাকরিজীবী নিজাম কাজী স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইউটিউবে বস্তায় আদা চাষের ভিডিও দেখে তার বাবার সঙ্গে আলাপ করেন। এরপর তার বাবা রুহুল আমিন কাজী উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে বাড়ির পাশের সুপারি বাগানের ২০ শতাংশ পতিত জমি ও গাছ তলায় বস্তায় আদাচাষ শুরু করেন। যার মধ্যে ১.৫ শতাংশে রয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্প (১ম সংশোধিত)’ এর প্রদর্শনী। ফলে কৃষি অফিস থেকে তাকে ১৫ কেজি আদা ও ২৫০টি বস্তা এবং সার ও কীটনাশক দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
এবছর তিনি মোট ২ হাজার ৮ শত বস্তায় ৩০০ কেজি আদা চাষ করেছেন। বস্তাগুলো আদা চাষের জন্য প্রস্তুত থেকে শুরু করে বীজ রোপণ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং অন্যান্য খরচ সহ মোট তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান কৃষক। তবে খরচ অনুযায়ী আশানুরূপ ফলনও হয়েছে, ধারণা করছেন প্রতি বস্তা থেকে ১ থেকে ২ কেজি পর্যন্ত আদা তোলা যাবে। স্থানীয় বাজারে আদার চাহিদা ভালো রয়েছে, আর দামও বেশ ভালো। ফলে প্রথম বছরেই লাভের সম্ভাবনা দেখছেন চাষি। এ ব্যাপারে আদাচাষি রুহুল আমীন কাজী বলেন, আমি আগে কখনও বস্তায় আদা চাষ করিনি। হঠাৎ একদিন ইউটিউবে ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে আদা চাষ করার পরিকল্পনা করি। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক পরামর্শে মাটি, বালি, কাঠের গুড়ি, জৈব ও অন্যান্য সার মিশ্রিত করে বস্তায় ভরাট করে প্রথমবার আদা চাষ করছি। গত বৈশাখ মাসে আদাগুলো রোপণ করি। আদা গাছগুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখনও কোনো রোগবালাই দেখা দেয়নি। এতে ফলনও ভালো হয়েছে। ফাল্গুন মাসে আধাগুলো উত্তোলন করব। আশা করি, আদা বিক্রি করে আমি লাভবান হবো ইনশাআল্লাহ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই উপজেলায় এবছরই প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষাবাদ হয়েছে। একমাত্র আদাচাষি রুহুল আমিন কাজীকে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে সকল ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে এবং অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করছি, তিনি লাভবান হবেন এবং তার সফলতা দেখে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা আদা চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন। তার মাধ্যমে এই উপজেলার কৃষিতে আরেকটি বিপ্লব হবে বলে আমরা আশা করছি। তিনি আরও বলেন, প্রথাগত জমিতে চাষের বদলে বস্তায় চাষের ফলে পানি নিয়ন্ত্রণ, রোগবালাই দমন এবং জায়গা সাশ্রয় সবই সহজ। ফলে যে কোনো স্থানে এভাবে আদা চাষ করা সম্ভব। তাই এই পদ্ধতিতে আদা চাষের মাধ্যমে নিজেদের আদার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের আমদানি নির্ভরতাও কমে আসবে।