
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যে আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল, সে আশা আর এখন দেখতে পাচ্ছি না। গতকাল বৃহস্পতিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচারহীনতা সংস্কৃতি’ শীর্ষক এক আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ৭২ এর সংবিধানে ‘দেশের জনগণ বাঙালি বলে পরিচিত হবেন’ বলে যে ধারাটি ছিল সেটি প্রস্তাবিত জুলাই সনদ থেকে বাতিল করে ‘বাংলাদেশ একটি বহু জাতিগোষ্ঠীর, বহু সংস্কৃতির দেশ যেখানে সব জনগোষ্ঠী তাদের অধিকার চর্চা করতে পারবে’ ধারাটি যুক্ত করা হয়েছে– এর মাধ্যমে বাঙালি আধিপত্যবাদী জাতীয়তাবাদকে প্রত্যাখ্যান করে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এটা খুবই আশাব্যঞ্জক।
তিনি বলেন, এ দেশের কোনও সরকারের এখতিয়ার নাই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী মানুষের অধিকার সংরক্ষণ করা। সামরিকীকরণ যারা করেছেন সেই সেনাবাহিনীই একমাত্র শক্তি যারা চাইলেই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী মানুষদের অধিকার এবং শান্তি আনতে পারেন।
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক অধিকারসহ মৌলিক মানবাধিকারকে অস্বীকার করার যে খেলা পাকিস্তান আমলে শাসকরা শুরু করেছিলেন সেটি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালীন সময়েও চালিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই অঞ্চলের গণমানুষের অধিকার সুরক্ষার জন্য যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করা হয়েছিল সে চুক্তিটিরও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পরে যে নতুন বন্দোবস্তের কথা বলা হয়েছে, সেখানেও সাধারণ মানুষ, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, অধিকার হারা, নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষেরা অনুপস্থিত থেকে গিয়েছে। তাদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার বিষয়গুলো সবসময় উহ্য থেকে গেছে। যে সংস্কার কমিশন, ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছিল সেগুলোতেও এ অধিকারহারা মানুষেরা অনুপস্থিত রয়ে গেছেন। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন হক বলেন, দেশের কোনও জনগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু শব্দটি চাপিয়ে দেওয়ার মানে সেই জনগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার, মানবিক মর্যাদাকে অপমান করা, ছোট করা। অথচ সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের সব মানুষের সমান অধিকার ও মানবিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশেরই একটি অঞ্চল কিন্তু একদিকে সামরিকীকরণ এবং অন্যদিকে গোয়েন্দা তৎপরতা নিয়ে এ অঞ্চলকে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। সামরিকীকরণ আর সীমান্ত রক্ষা দুটি আলাদা জিনিস। সীমান্ত রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী বাহিনী রাখা দরকার কিন্তু সে বাহিনী যেন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কোনও ধরণের ব্যাঘাত তৈরি না করে। তিনি আরও বলেন, কল্পনা চাকমাকে অপহরণের এত বছর হয়ে গেলো তবুও আমরা তার কোনও হদিস পাচ্ছি না। বর্তমানেও বম নারী-পুরুষসহ অনেকেই কারাগারে রয়েছেন; যা খুব বেদনাদায়ক। তাদের অতি শিগগিরই মুক্তি দেওয়া উচিত। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের গুম, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সঠিক ডকুমেন্টেশনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।