ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

চান্দিনায় ধুন্দুল চাষে বাজিমাত

চান্দিনায় ধুন্দুল চাষে বাজিমাত

ধূসর মাটি আর সবুজ সবজির এক অসাধারণ গাঁথুনি তৈরি করেছেন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বারেরা ইউনিয়নের দোবারিয়া গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন। গতানুগতিক ফসলের চাষ ছেড়ে তিনি ঝুঁক নিয়েছিলেন ধুন্দুল চাষে, আর সেই ঝুঁকিই যেন তার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। শুধুমাত্র কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শ আর নিজের কঠোর পরিশ্রমের সমন্বয়ে ৪২ শতাংশ জমিতে ধুন্দুল চাষ করে তিনি এখন এলাকার অন্য কৃষকদের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। কৃষক বিল্লাল হোসেনের এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা। বাড়েরা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনক সরকারের নিবিড় তত্ত্বাবধান এবং সঠিক দিকনির্দেশনা বিল্লাল হোসেনের আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তোলে। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ মেনে, আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মাত্র ৪২ শতাংশ জমিতে মোট ২৬০০টি ধুন্দুলের চারা রোপণ করেন বিল্লাল হোসেন। চারা রোপণ থেকে শুরু করে ফলন তোলা পর্যন্ত তার মোট খরচ হয়েছে আনুমানিক ৪০,০০০ টাকা। সবজির এই চাষের ক্ষেত্রে প্রাথমিক বিনিয়োগ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও, বিল্লাল হোসেনের দৃঢ়তা এবং কৃষি কর্মকর্তার উৎসাহ তাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ফলন আসা শুরু হওয়ার পর দেখা যায়, তার পরিশ্রম বিফলে যায়নি। বর্তমানে বিল্লাল হোসেন তার খেত থেকে সপ্তাহে দুবার ধুন্দুল সংগ্রহ করছেন। প্রতিবারে ফলনের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ কেজি। এই বিপুল পরিমাণ সবজি তিনি স্থানীয় বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি করছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি ধুন্দুল ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভালো বাজার মূল্য পাওয়ায় তার মুখে এখন তৃপ্তির হাসি। এই চাষে আশাতীত ফলন এবং বাজার মূল্য পাওয়ায় তিনি এখন বড় অঙ্কের লাভের স্বপ্ন দেখছেন।

কৃষক বিল্লাল হোসেনের ধারণা, পুরো মৌসুমে তার ধুন্দুল বিক্রি থেকে মোট আয় দাঁড়াবে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মাত্র ৪০ হাজার টাকা খরচ করে এই বিশাল লাভের আশা তার সফলতারই প্রতিচ্ছবি। এই সাফল্য শুধু বিল্লাল হোসেনের ব্যক্তিগত নয়, এটি চান্দিনা উপজেলার কৃষি অর্থনীতির জন্য একটি অনুপ্রেরণার গল্প। ধুন্দুল চাষের মাধ্যমে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে, সঠিক পদ্ধতি, কৃষি কর্মকর্তার সহায়তা এবং কৃষকের ইচ্ছাশক্তি থাকলে স্বল্প জমিতেও বড় ধরনের আর্থিক সফলতা অর্জন করা সম্ভব। তার এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, প্রচলিত ফসলের পাশাপাশি উচ্চমূল্যের সবজি চাষও কৃষকের ভাগ্য ফেরাতে পারে। বিল্লাল হোসেনের খেত এখন এলাকার অন্যান্য কৃষকদের কাছে একটি ‘সবুজ শিক্ষাঙ্গন’, যেখানে তারা নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন এবং লাভজনক সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তার এই সাফল্য এলাকার কৃষি উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত