
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা প্রথম মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সাতটি জেলার বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ও প্রতিষ্ঠানে আগুন এবং ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। গত রোববার রাত থেকে গতকাল সোমবার ভোর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে ঢাকার সাভারে দুটি ও ধামরাইয়ে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জে। কিশোরগঞ্জে সড়কে গাছ কেটে অবরোধ, গ্রামীণ ব্যাংক ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়েছে। বগুড়ার ধুনটে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখায় আগুন দেওয়া হয়েছে। মানিকগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন দুজন। গাজীপুরে গ্রামীণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের নামফলকে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। সিলেটে আগুনে পুড়েছে কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
ঢাকার ধামরাই ও সাভার উপজেলায় গতকাল রাতে প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া গতকাল সোমবার ভোরে সাভারে একটি মিনিবাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
গত রোববার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১০টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে তিনজন ব্যক্তি এসে ডিলিংক পরিবহনের পার্ক করা একটি বাসের পেছনের জানালা ভেঙে ভেতরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন পানি ও বালু ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে ধামরাই ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। আগুনে বাসের ভেতরের অধিকাংশ আসন পুড়ে গেছে।
এর প্রায় আধা ঘণ্টা পর সাভারের বিরুলিয়া বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বটতলা এলাকায় অন্য একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সাভার মডেল থানার পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে আলিফ পরিবহনের বাসটি পার্ক করে বাড়িতে খাবার খেতে যান মালিক আমজাদ হোসেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নেভান। সাভার মডেল থানার বিরুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল ওয়াহাব বলেন, পার্ক করা বাসে কে বা কারা আগুন দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাভারের আশুলিয়ায় বেরন এলাকায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মিনিবাসে ভোরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে বাসটির অধিকাংশ আসন পুড়ে যায়।
চালক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল যাত্রী পরিবহন শেষে রাতে আশুলিয়ার বেরন এলাকায় সড়কের পাশে গ্রামীণ পরিবহন নামের মিনিবাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ভোর চারটার দিকে চালকের সহকারী বাসটি ধুয়েমুছে টয়লেটে যান। ফিরে এসে তিনি দেখেন বাসটিতে আগুন জ্বলছে। পরে আশপাশের লোকজন পানি দিয়ে দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
এদিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা ও আশপাশে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই রিকশাচালক আহত হয়েছেন। গত রোববার রাতে মানিকগঞ্জ শহরে এ বিস্ফোরণ ঘটে।
আহত দুই ব্যক্তি হলেন মানিকগঞ্জ পৌরসভার বান্দুটিয়া এলাকার সাগর হোসেন ও বেউথা এলাকার নবীন হোসেন। তাঁদের জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সদর থানার পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাত ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ‘অদম্য ৭১’ ভাস্কর্যের সামনে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করে। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পর বাসস্ট্যান্ডের অদূরে পৌর সুপারমার্কেটের সামনে দুর্বৃত্তরা আরও একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে রিকশাচালক সাগর ও নবীন আহত হন। পরে তাঁদের জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।