
মত পার্থক্য থাকলেও চব্বিশের অভ্যুত্থানের স্বপ্ন কোনোভাবে ‘ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমি সবাইকে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন ২৪ এর জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছি, সবাই সেই বিজয়টাকে সুসংহত করি। আমাদের মধ্যে মত পার্থক্য থাকবে কিন্তু সেই মত পার্থক্য যেন আমাদের যে আশা, আমাদের যে স্বপ্ন, যে ছেলেগুলো প্রাণ দিয়েছে তাদের যে আত্মাহুতি তা যেন বৃথা না হয়ে যায়। আমরা আমাদের স্বপ্নকে যেন বাস্তবায়িত করতে পারি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে একটি প্রকাশনা উৎসবে কথা বলছিলেন মির্জা ফখরুল।
প্রেসক্লাবে অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ ও তার প্রয়াত সহধর্মিনী উম্মে সালমা আলো প্রণীত গ্রন্থসমূহের প্রকাশনা উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়। এতে সভাপতিত্বে করেন বিএনপি মির্জা ফখরুল। গ্রন্থসমূহ হচ্ছে, মাহবুব উল্লাহর লেখা ‘পূর্ব বাংলার বাম ও কমিউনিস্ট আন্দোলন’, ‘বঙ্গভঙ্গ’, ‘আমার জীবন ও আমার সংগ্রাম’ এবং উম্মে সালাম আলোর লেখা ‘জয়নপারের আলো’।
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন-সংগ্রামের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এই দেশকে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করা, এই দেশকে একটা বৈষম্যবিরোধী অর্থনীতিতে পরিণত করা, সাধারণ মানুষগুলোর অধিকারগুলোকে পৌঁছে দেওয়া, তাদের ভোটের অধিকার পৌঁছে দেওয়া, একটা গণতান্ত্রিক, আধিপত্যবাদবিরোধী এবং একই সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটা জাতিকে পরিণত করার ক্ষেত্রে মাহবুব উল্লাহ যে অনবদ্ধ ভূমিকা রেখেছেন এটা কখনো অস্বীকার করবার কোন উপায় নেই। তার বইগুলোর মধ্যে যদিও আমি সবগুলো পড়ার সুযোগ পাইনি, যতগুলো পড়েছি সবগুলোতে দেখেছি যে, একই সুর বেজে উঠেছে। বাংলাদেশকে আমরা সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক, বৈষম্যবিরোধী এবং মানুষের স্বাধীনতা, স্বাধীন বাংলাদেশের আমরা একটা চিত্র দেখতে চাই সেটাই তিনি তার লেখায় তুলে ধরেছে।
উম্মে সালমা আলোর সাথে ওই সময়ে আত্মগোপনে থাকা বামপন্থি নেতা মাহবুব উল্লাহর বিয়ের অনুষ্ঠানের স্মৃতিও রোমন্থন করেন মির্জা ফখরুল।
গতকাল মঙ্গলবার মাহবুব উল্লাহর ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি প্রত্যাশা করছি যে তার এই জন্মদিন আরো অনেকদিন আসুক। আমাদের জীবনে মাহবুব উল্লাহ ভাই তার পাণ্ডিত্ব দিয়ে, তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, তার অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিকে এবং অর্থনীতিকে আরো সহায়তা প্রদান করবেন এই আশা আজকে আমি ব্যক্ত করছি।
অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, এদেশের মানুষ শুধু সুদিন দেখার জন্য, ভালো সময় দেখার জন্য ত্যাগ স্বীকার করছে। অনেক অত্যাচারিত হয়েছে সেই বৃটিশ শাসনের আমল থেকে তারও আগে থেকে লড়াই-সংগ্রাম করেছে। শুধু একবার ভালো সময় আসবে এই ভেবে। সামনের দিনগুলো যাতে অত্য্যচার-অবিচার, মানুষের অমযার্দা যাতে না হয় এটাই আমার আজকের প্রত্যাশা। একটি মুক্ত, স্বাধীন, সার্বভৌম, সুখী, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হোক সেইটাই আমরা চাই।
অনুষ্ঠানে আসা তার অনেক সহকর্মী, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অধ্যাপক মাহবুব।
কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জ্বালানি উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আহমেদ কামাল, অধ্যাপক হায়াত হোসেন, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা, অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, ব্রাকের চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নজমুল হক নান্নু, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিন, আমার দেশ এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, পিআইবি মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, এটিএন বাংলার পরিচালক বার্তা হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর বড় মেয়ে নায়লা তাহসিনা মাহবুবসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।