ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

আজ ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এদিন জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের শিকার তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করে। তারা তাদের এ দেশীয় দোসরদের নিয়ে শিক্ষক, বিজ্ঞানী, চিন্তক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ক্রীড়াবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ বহু মানুষকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের পর বিশেষ করে ১৪ ডিসেম্বর তারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। জাতীয়ভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড দেশকে মেধাশূন্য করার গভীর চক্রান্ত- তারেক রহমান : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নিহত শিক্ষক, চিকিৎসক, লেখক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন, স্বাধীনতার পক্ষে কলম ধরেছিলেন। তাদের জীবন ও কর্ম আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শনিবার দেওয়া বানীতে তারেক রহমান বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীদের হত্যা দেশকে মেধাশূন্য করার গভীর চক্রান্ত। কারণ স্বাধীনতার বিজয়কে বাধাগ্রস্ত করা। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা আজও সারা জাতিকে বেদনাবিধুর করে। তবে তাদের রেখে যাওয়া আদর্শ অর্থাৎ জ্ঞান-বিজ্ঞান, মুক্ত চিন্তা, ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির চেতনা উন্নত ও প্রগতিশীল দেশ গড়ার প্রত্যয় জাগিয়ে তোলে। একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ ছিল যাদের অভিষ্ট লক্ষ্য।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু অর্ধশতাব্দি পার হলেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। গণতন্ত্র বার বার মৃত্যুকুপে পতিত হয়েছে। একদলীয় দুঃশাসনের বাতাবরণ তৈরি করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ প্রতিহত করা হয়েছে। অনেক রক্ত ঝরলেও মত প্রকাশ, লেখা ও বলার স্বাধীনতা সংকটের দুর্বিপাক থেকে আজও মুক্ত হতে পারেনি।’ তারেক রহমান মনে করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতনের পর আইনের শাসন, স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং বহু পথ ও মতের রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ বাস্তবায়িত হবে।’ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আসুন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’

শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের আহ্বান জামায়াত আমিরের : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে দলের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনে এ দুটি দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।’ গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান শফিকুর রহমান।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ এবং ১৬ ডিসেম্বর ‘মহান বিজয় দিবস’। আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ এই দুটি দিন। জাতির ইতিহাসে দিবস দুটি আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও গৌরবের চিরন্তন স্মারক। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য যারা নিজেদের অমূল্য জীবন উৎসর্গ করেছেন- সেই সকল শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে তাদের সকলের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে যারা দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেছিলেন, সেই সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি আমরা গভীর সম্মান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। পাশাপাশি সকল শহীদদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’

জামায়াতের আমির বলেন, ‘দেশবাসী আজ এমন এক সময় ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ ও ‘মহান বিজয় দিবস’ পালন করতে যাচ্ছে, যখন ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ ফ্যাসিবাদী সরকারের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের অপশাসন, জুলুমণ্ডনির্যাতন ও গুম-খুনের নিষ্ঠুর অভিশাপ থেকে দেশের মানুষ মুক্তি পেয়েছে এবং শান্তি, স্বস্তি ও স্থিতিশীলতার প্রত্যাশা করছে। একইসঙ্গে দেশ ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিপরীত পক্ষে ফ্যাসিবাদের দেশি- বিদেশি দোসররা এখনও থেমে নেই। তারা নানামুখী ষড়যন্ত্র ও কূটকৌশলের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারই জ্বলন্ত প্রমাণ গত ১২ ডিসেম্বর শরিফ ওসমান হাদীর ওপর ন্যক্কারজনক হামলা। এই প্রেক্ষাপটে দেশবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’

জামায়াতে ইসলামীর তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা : প্রথমত, আজকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন হল-এ আলোচনা সভা, দ্বিতীয়ত, আগামী ১৫ ডিসেম্বর (সোমবার) রাজধানী ঢাকার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে (আইডিইবি) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) সকাল ৭টায় রাজধানী ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া বিভাগের উদ্যোগে যুব ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সারাদেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে আলোচনা সভা, র‌্যালি ও দোয়ার মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর ‘মহান বিজয় দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সকল শাখা সংগঠন ও দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ঢাবির কর্মসূচি : যথাযোগ্য মর্যাদায় ১৪ ডিসেম্বর রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হবে। এ উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত