
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদান, জামানত জমা, প্রস্তাবকারী-সমর্থনকারীর যোগ্যতা, রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়ন, মনোনয়নপত্র বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এ পরিপত্র গতকাল শনিবার জারি করা হয় বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল : পরিপত্রে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে সরাসরি দাখিলের জন্য মনোনয়ন ফরম (ফরমণ্ড১) সংগ্রহ করবেন। এরইমধ্যে এসব ফরম ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই ফরম বিতরণের জন্য আলাদা রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে।
সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যোগ্য ব্যক্তিরা যথাযথভাবে পূরণ করা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল বা জমা দেওয়া যাবে।
মনোনয়নপত্র জমাদান : ইসির নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন। ওই দিন বা তার আগের যেকোনো দিনে প্রার্থী, প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারী মনোনয়নপত্র দাখিল করলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুচ্ছেদ ১২ এর (৩) অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার তা গ্রহণ করবেন।
অফিসাররা মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার সময় নির্ধারিত স্থানে ক্রমিক নম্বর দিবেন। রিটার্নিং অফিসার মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার সময় ‘রিঅ-’ এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার ‘সরিঅ’ লিখে নম্বর দিবেন। এক প্রার্থী একাধিক মনোনয়নপত্র জমা দিলে প্রথমটিতে পূর্ণ নম্বর এবং অন্যগুলোর ক্ষেত্রে বন্ধনীতে (ক), (খ) বা (১), (২) ব্যবহার করা যাবে।
প্রাপ্তি রসিদ ও বাছাইয়ের নোটিশ : মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার সময় প্রতিটি মনোনয়নপত্রের তথ্য রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে মনোনয়নপত্রের তৃতীয় অংশে দাখিলকারীর নাম, জমাদানের তারিখ ও সময় উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া, নির্বাচনী এলাকার নাম ও নম্বর, প্রার্থীর নাম, মনোনয়নপত্র জমার তারিখ ও সময় এবং বাছাইয়ের নির্ধারিত তারিখ, সময় ও স্থান উল্লেখ করে মনোনয়নপত্রের পঞ্চম অংশে যুক্ত থাকা প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ তাৎক্ষণিকভাবে প্রার্থী বা প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারীকে দিতে হবে।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার থেকে মনোনয়নপত্র প্রেরণ : পরিপত্রে বলা হয়, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের ক্ষমতা রিটার্নিং অফিসারের ওপর ন্যস্ত। তাই সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিলকৃত সব মনোনয়নপত্র ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ বিকাল ৫টার পরপরই নিরাপত্তার সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাতে হবে।
প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর যোগ্যতা : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার যে কোনো ভোটার সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে প্রস্তাব বা সমর্থন করতে পারবেন। তবে প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারী হিসেবে কেউ একাধিক মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করতে পারবেন না। প্রতিটি মনোনয়নপত্রে প্রার্থীর সম্মতি, অযোগ্যতা না থাকার ঘোষণা এবং তিনটির বেশি নির্বাচনী এলাকায় মনোনয়ন জমা না দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে।
রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়ন : রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দলের নিজস্ব প্যাডে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারীর স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। একটি নির্বাচনী এলাকায় যদি কোনো রাজনৈতিক দল একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়, তবে ২০ জানুয়ারি ২০২৬ বিকাল ৫টার মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম লিখিতভাবে রিটার্নিং অফিসারকে জানাতে হবে।
চূড়ান্তভাবে মনোনীত প্রার্থী দলীয় প্রতীক পাবেন, যদি না তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। প্রতীক বরাদ্দ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পরে আলাদা পরিপত্রে জানানো হবে।
জামানত : মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জামানত জমা দিতে হবে। এ অর্থ নগদ, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার বা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের অনুকূলে জমা দেওয়া যাবে। একই নির্বাচনী এলাকায় একাধিক মনোনয়নপত্র দিলে একটি জামানতই যথেষ্ট হবে। অন্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে চালানের সত্যায়িত অনুলিপি দিতে হবে। জামানতের বাইরে কোনো অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ বা প্রদান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
জামানতের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক, যেকোনো ব্যাংক বা সরকারি ট্রেজারি বা সাব ট্রেজারিতে ১০৯০৩০২১০১৪৪৩-৮১১৩৫০১ কোড নম্বরে জমা দিতে হবে। নগদে প্রাপ্ত জামানতের অর্থ রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার সরকারি খাতে জমা দিবেন।
সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনেও খোলা থাকবে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনেও খোলা থাকবে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়। ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সময়সূচি অনুসারে কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের অফিস, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার অফিস, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিসারের অফিস ও উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসারের অফিস সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে সকাল ৯টা হতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা রেখে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। গতকাল শনিবার ইসি থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে অফিস খোলা রাখার বিষয়ে ইসির পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর উল্লিখিত সময়সূচি অনুসারে কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে বিশেষ করে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণের দিনসমূহ ও প্রতীক বরাদ্দসহ গুরুত্বপূর্ণ দিনে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের অফিস, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার অফিস, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিসারের অফিস ও উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসারের অফিস সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে সকাল ৯টা হতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা রেখে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিল ও বাছাই এবং বাছাই বা গ্রহণের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে দায়েরকৃত আপিল নিষ্পত্তি, প্রার্থীতা প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দ ও এই সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণের সুবিধার্থে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে উল্লিখিত অফিসসমূহ খোলা রাখা এবং প্রয়োজনে অফিস সময়ের পরেও অফিস খোলা রাখার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য নির্ধারিত শেষ দিন এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্ধারিত শেষ দিন বিকাল ৫টার পর কোনো মনোনয়নপত্র দাখিল বা গ্রহণ করা যাবে না অথবা কোন প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন না।
লক্ষ্মীপুরে নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন, পুলিশ বলছে নাশকতা : লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের নিচতলার স্টোররুমে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বলছে, এটি নাশকতার ঘটনা। গত শুক্রবার রাত প্রায় ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন-অর্থ) রায়হান কাজেমী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মাস্ক পরা এক যুবক কার্যালয়ের গেটের পশ্চিম পাশের দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্টোররুমে আগুন জ্বলে ওঠে। এরপর তিনি আবার দেয়াল টপকে বেরিয়ে যান।
সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসাইন জানান, মাস্ক পরিহিত ওই যুবক জানালার কাঁচ ভেঙে অথবা খুলে ভেতরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগান। সে সময় কার্যালয়ের দারোয়ান হামিম ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। আগুনের বিষয়টি টের পেয়ে তিনি চিৎকার করলে অভিযুক্ত যুবক পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় ২০০৮ ও ২০০৯ সালের ভোটারদের দ্বিতীয় ফরম পুড়ে গেছে। পাশাপাশি একটি অকেজো ডেস্কটপ, সিপিইউসহ কিছু সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তিনি আরও জানান, ঘটনার খবর পেয়ে তিনি এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে তদন্ত শুরু করেছেন এবং নিয়মিত নিরাপত্তা জোরদারের আশ্বাস দিয়েছেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুর রশিদ বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে গত শুক্রবার রাত ৩টা ৫৫ মিনিটের দিকে এক যুবক পেট্রোলের বোতল নিয়ে সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর সদর কার্যালয়ের গুদামঘরে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যান। আগুনে কিছু নথিপত্র পুড়ে গেলেও সময়মতো বিষয়টি ধরা পড়ায় বড় ক্ষতি হয়নি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এটি একটি নাশকতার ঘটনা। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।