ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দশজনের নয়জনই জানেন না তারা হেপাটাইটিসে আক্রান্ত

দশজনের নয়জনই জানেন না তারা হেপাটাইটিসে আক্রান্ত

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ২০২৫ উদযাপিত হয়েছে। এবারে দিবসটি প্রতিপাদ্য ‘হেপাটাইটিস : লেটস ব্রেক ইট ডাউন হেপাটাইটিস : বাধা ভেঙে ফেলি’। সচেতন হোন, বাঁচান জীবন স্লোগান নিয়ে আয়োজিত জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ এই দিবস উপলক্ষে জনসচেতনতামূলক র‌্যালি, সায়েন্টিফিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার। গুরুত্বপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মো. দেওয়ান সাইফুদ্দিন আহমেদ, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. দেওয়ান সাইফুদ্দিন আহমেদ, উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ডা. সাইফুল ইসলাম এলিনসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তিনটি সেশনে অনুষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সভায় বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন, অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম আযম, অধ্যাপক ডা. মো. রুকনুজ্জামান, অধ্যাপক ডা. মো. মোহছেন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র দাস, ডা. লুবানা আকরাম, ডা. এবিএম সফিউল্লাহ, ডা. মো. জাহিদুর রহমান, ডা. শারমিন সুলতানা, ডা. আরিফা তাসনিম প্রমুখ। কর্মসূচিতে জানানো হয়, হেপাটাইটিস শুধু একটি রোগ নয় এটি মানবাধিকার, স্বাস্থ্য সমতা ও সামাজিক ন্যায়ের বিষয়। এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যম, উন্নয়ন সংস্থা এবং সাধারণ মানুষ সবারই সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। দিবসটি উপলক্ষে ভাইস চ্যান্সেলর হেপাটলজিস্ট অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমের উদ্যোগে হেপাটোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, শিশু গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, হেপাটোবিলিয়ারি সার্জারি ও ভাইরোলজি বিভাগের সমন্বয়ে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে জনসচেতনতামূলক র‌্যালি ও সায়েন্টিফিক সেমিনার। দিবসটির পালনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো হেপাটাইটিস এ বি সি ডি এবং ই সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা, রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে, অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, রোগীদের স্বার্থে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে প্রয়োগ করতে হবে। ব্যবসায়িক স্বার্থে বা কর্পোরেট প্রভাবে না। হেপাটাইটিস নিয়ে কুসংস্কার, বৈষম্য আছে তা দূর করতে হবে। রোগীদেরকে কোনোভাবেই চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। গাইডলাইন অনুসরণ করে প্রেসক্রিপশন লেখাসহ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। সমানভাবে কার্যকরী হলে কমদামী ওষুধটাই লিখতে হবে। এদেশে প্রচুর রোগী, তাই গবেষণা সুযোগও বেশি, এই সুযোগ অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার তথ্য মোতাবেক বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে প্রায় ১ কোটি মানুষ আক্রান্ত। বেসরকারি হিসাবে হেপাটাইটিসে দেশে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। ১০ জনের ৯ জনই জানেন না তারা হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। প্রতি বছর গোটা বিশ্বে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন লোক মারা যায়, প্রতি সেকেন্ডে মারা যায় ১ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, নীরব ঘাতক ভাইরাল হেপাটাইটিস বি অথবা সি ভাইরাসে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণে আক্রান্ত। বিশ্বব্যাপী লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি এবং সি। লিভার ক্যান্সারে শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী এই দুইটি ভাইরাস। ভাইরাল হেপাটাইটিস একটি গুরুতর রোগ যা লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে সবাইকে হেপাটাইটিস রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং এই রোগ নির্মূলে একযোগে কাজ করতে হবে।

সেমিানরে বলা হয়, ‘হেপাটাইটিস: বাধা ভেঙে ফেলি’ প্রতিপাদ্য সময় উপযোগী হয়েছে। সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক বাধাগুলো ভেঙে ফেলি যাতে সবাই সহজে পরীক্ষা, প্রতিষেধক ও চিকিৎসায় পৌঁছাতে পারে। কারণ সময়মতো শনাক্ত ও চিকিৎসার অভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে এই নীরব ঘাতকের ভয়াল থাবা। বাংলাদেশে আনুমানিক ৫ থেকে ৭ শতাংশ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস বি অথবা সি ভাইরাসে আক্রান্ত। গ্রামীণ জনপদ ও সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় সচেতনতার অভাব, নিরাপদ রক্ত সরবরাহের সীমাবদ্ধতা এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা-ব্যবস্থার অভাবে সংক্রমণ আরও বাড়ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত