ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে ‘প্রশ্নবোধক চিহ্ন’ রয়েছে

বললেন জাহিদ হোসেন
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে ‘প্রশ্নবোধক চিহ্ন’ রয়েছে

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক বক্তব্যে ‘প্রশ্নবোধক চিহ্ন’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলছেন, ‘মেহেদি হাসানকে (জিটিওর সাংবাদিক) প্রধান উপদেষ্টা যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, সেটি আপনাদের মতো আমারও পত্রপত্রিকায় বা মিডিয়ার কল্যাণে কিছুটা পড়া এবং দেখার সুযোগ হয়েছে। ‘উনি বেশ কতগুলো কথা বলেছেন, অমর্ত্য সেন ওনাকে কী বলেছেন, বা মেহেদি হাসান যে প্রশ্ন করেছেন এবং মেহেদি হাসানের প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা যেটা বলেছেন, যেটা মানুষের মধ্যে একটু, এমনকি আমার মধ্যেও এক ধরনের প্রশ্নবোধক চিহ্ন রয়েছে।’ গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

‘আজহার-শফিক ফাউন্ডেশন’ তাদের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে গিয়ে সম্প্রতি ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম জিটিওতে সাক্ষাৎকার দেন ইউনূস, যেখানে তিনি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং আগামী নির্বাচনে দলটির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা থাকা না থাকার বিষয়েও কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক মেহেদি হাসপানের এক প্রশ্নে ইউনূস বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়নি, শুধু তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।’ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পারবে না। তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ।’ আর স্থগিতাদের তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার জবাব ছিল, ‘স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া; এটা একটা সম্ভাবনা।’

প্রধান উপদেষ্টার এ সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগ) বিচার ছাড়া বা তাদের অনুশোচনা ছাড়া, আজ যদি আমরা একাত্তর নিয়ে এত কথা বলি। তাহলে এই চব্বিশে গত ১৫ বছরে দেশের ভোটাধিকার চুরি, দিনের ভোট রাতে করেছে, তার জন্য তাদের অনুশোচনা হবে না, এটা তো হতে পারে না। ‘তাদের অবশ্যই জনগণের কাছে শর্তহীন ক্ষমা চাইতে হবে। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে, ক্ষমা করবে কি করবে না। এটি ব্যক্তিগতভাবে কারও করার বিষয় আছে বলে আমি মনে করি না।’ ‘আওয়ামী লীগ গণশত্রেু পরিণত হয়েছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বাস করে, কোনো অবস্থাতেই গণহত্যাকারী এবং গণদুশমন যারা ছিল, যারা গুম করেছে, যারা মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে, যারা মানুষের সম্পদ লুন্ঠন করে বিদেশে নিয়ে পাহাড় গড়েছে তাদের বিচার এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি, আয়না ঘর বলেন, গুম বলেন, এনকাউন্টার বলেন এবং অট্টহাসি অর্থাৎ প্রতিহিংসাপরায়ণতার যে চরমপরাকাষ্ঠা উনারা দেখিয়েছেন এর বিরুদ্ধে বিএনপি সবসময় সোচ্চার এবং আমরা মনে করি, তারা গণদুশমন।‘

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে আমরা দেখেছি যে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বলেছিল যে, নিষিদ্ধের বিষয়টা, কাকে গ্রহণ করবে বা করবে না, এটা জনগণের বিষয়। এটা কোনো অবস্থাতেই আইন আদালত অথবা সরকারি সিদ্ধান্তে করার যে প্রক্রিয়া, এটার সঙ্গে বিএনপি সবসময় দ্বিমত পোষণ করেছিল। বিএনপি বলেছিল জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। ‘আমরা সবসময় একটা কথা বলছি, এই গণহত্যাকারী এবং এটার যারা আদেশ দিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচার করা এবং সেটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোক, ওনার দলের বড় বড় নেতা হোক, অথবা দলের অন্য যে কর্মীরা আছেন, যারা এগুলোয় জড়িত এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, যারা অতি উৎসাহী হয়েৃ, বিভিন্ন বাহিনীর লোক এবং অনেক সংস্থার লোক, সর্বোপরি আপনার প্রশাসন দেখেন, বিচারালয় দেখেন, অনেকে আগ বাড়িয়ে অতিরিক্ত করেছে, যেটি তাদের জুরিডিকশনেরর মধ্যে পড়ে না। কাজেই তাদের বিচারের ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সবসময়ই সোচ্চার ছিল এবং এখনও আছে।’

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, যেকেনো সময়ে তাদের নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে সেক্ষেত্রে বিএনপি ভীত কি না জানতে চাইলে জাহিদ বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং গণতন্ত্রকাগামী শক্তির যে ঐক্য হয়েছে, এই ঐক্য কোনো অবস্থাতেই ভীত হলে ৫ আগস্ট উনি (শেখ হাসিনা) পালাতেন না। উনি যদি সত্যিকার অর্থে রাজনীতিক হতেন, তাহলে মাঠে থেকে রাজনীতি মোকাবেলা করতেন। কি হতো? যা হওয়ার সেটা হতো, জেলখানায় যেতেন।’ প্রবীণদের জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্র যদি আজ বয়স্ক ভাতা দেয়, আজ যদি বিধবাদের ভাতা দেয়, আজ যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানজনক ভাতা দেয়, তাহলে বয়স্কদের জন্য আলাদা উইন্ডো করা, আলাদা সুযোগ-সুবিধা করা, এটার জন্য খালি চিন্তা দরকার, এটার জন্য খুব বেশি অর্থের উৎসের প্রয়োজন নেই। ‘আজহার-শফিক ফাউন্ডেশনের’ সভাপতি একেএম শামসুল ইসলাম রঞ্জুর সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত