
কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘আমাদের এখানে কোনো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নাই। সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গরিব মানুষ ঢুকতে পারে না।’ গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুরে শাহ আলী মাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফরহাদ মজহার এই মন্তব্য করেন। শাহ আলীর মাজারে শতবর্ষী বটগাছ কাটা এবং সারা দেশে মাজারে হামলার প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। মাজারের ভক্তরা ও নাগরিক সমাজ এই আয়োজন করে। সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে উদ্দেশ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনার সেই শিল্পকলা একাডেমিতে আমার পাগলদের জায়গা নেই। যেহেতু ওখানে জায়গা নেই, ওটাকে আমি সংস্কৃতি মানি না।’
এই শিল্পকলা একাডেমিকে বদলাতে হবে, বলেন তিনি। শাহ আলীর মাজারে শতবর্ষী বটগাছ যারা কেটেছে, তারা কিছুদিন পরে মাজার ভেঙে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করেন ফরহাদ মজহার। তাই তিনি প্রশাসনের কাছে মাজারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ এবং ব্যবস্থাপনা কমিটি পরিবর্তনের দাবি জানান।
মাজারে থাকা ভক্তরা বলেন, গত বুধবার মাজার প্রশাসনের পক্ষ থেকে শতবর্ষী বটগাছের অনেকগুলো ডালপালা কেটে ফেলা হয়। এতে তারা ক্ষোভ জানান। গাছ কাটা প্রসঙ্গে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘যে গাছ কাটা হয়েছে, এটা শুধু একটি গাছ নয়, এটা ছিল পাখি, প্রাণী, সাধক-পাগলদের আশ্রয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মাজারের ইতিহাস, স্মৃতি, ভক্তি ও সাধনার ধারা।’ গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘এর বিচার হবে। সরকারের তিনজন উপদেষ্টা এখানে এসে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকেও অসম্মান করা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বন্ধুও গান-সংগীত বন্ধ দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। অথচ আমরা সেই সাধনা আবার শুরু করেছিলাম। কেন তা বন্ধ করা হলো, তার জবাব মাজার কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে।’ মাজার কমিটি বদল ও গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন ফরহাদ মজহার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাউলশিল্পী মহারাজ আবুল সরকার। তিনি বলেন, ‘এই গাছের অপরাধ কী? যারা গাছ কেটেছে, ধীরে ধীরে তারা মাজার ভাঙারও চেষ্টা করবে।’ সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ রোমেল। তিনি বলেন, ‘আমরা এই বটগাছের নিচে বসে গানবাজনা করতাম। এখানে পাগল–ফকিররা জিকির করত একসঙ্গে। যারা এই গাছ কেটেছে, তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। যদি ডিসি যুক্ত থাকেন, আমরা তার পদত্যাগ চাইব।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে ফরহাদ মজহারের নেতৃত্বে উপস্থিত অন্যরা মাজার প্রশাসনের সঙ্গে গাছ কাটা নিয়ে কথা বলতে যান। তবে মাজার প্রশাসনের কাউকে না পেয়ে তারা ফেরত যান। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের মিরপুর অঞ্চলের নেত্রী লুৎফুন্নাহার সুমনা, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা রাফিউল ইসলাম, বাংলাদেশ তরিকত পরিষদের দ্বীন মোহাম্মদ চিশতী, মাজারে অবস্থানকারী ভক্ত তানভীর সুমন, নাসির হোসেন প্রমুখ।